সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাসূল (সা.)
মাওলানা এএইচএম আবুল কালাম আযাদ : ইসলাম শান্তি-সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। কোনরূপ সহিংসতা, বিবাদ-বিসংবাদের স্থান ইসলামে নেই। ন্যূনতম শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন আচরণকেও ইসলাম প্রশ্রয় দেয় না। পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘ফিৎনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ (সুরা বাকারা-১৯১)। সর্বক্ষেত্রে শান্তির বিধান নিশ্চিত করে প্রেম-প্রীতি, সৌহার্দ্য আর শান্তি ও সম্প্রীতির এক পরিমল বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। মানবজীবনে উদারতা একটি মহান শিক্ষা। এর দ্বারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই বজায় থাকে স্থিতিশীলতা ও শান্তি। উদারতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে কোথাও স্বস্তি মেলে না। ইসলাম উদারতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সব মত, পথ ও ধর্মের সহাবস্থানের জায়গাটি হলো ইসলাম। বিগত দেড় হাজার বছর ধরে ইসলাম উদারতা, মানবিকতাবোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার অপূর্ব নজির স্থাপন করে আসছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গান্ধী বলেছিলেন, “প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিলো আলো ও স্বস্তি। ইসলাম একটা মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সঙ্গে হিন্দুরা তা অধ্যয়ন করুক, তাহলে আমার মতই তারা একে অপরকে ভালোবাসবে।” একটি রাষ্ট্রে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের ও সম্প্রদায়ের নাগরিক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি, সদ্ভাব, উদারতা প্রতিষ্ঠা করে বসবাস করাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। মানবতার ধর্ম ইসলাম এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা তথা সকল নাগরিক কে তার ন্যায্য অধিকার প্রদান করে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে সৌহার্দ, সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। মহানবী স. ছিলেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স¦রূপ। ফলে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি নিজেই তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তার কিছু নমুনা উপস্থাপনের প্রয়াস পাব।
অমুসলিমদের অধিকার : আল্লাহ তায়ালা অমুসলিমদের অধিকার সম্পর্কে বলেছেন- ‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে, যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আল মুমতাহিনা-৮) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- ‘তারা আল্লাহ তায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনও গালি দিও না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তায়ালাকেও গালি দেবে। আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অত:পর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে।’ (সূরা আনআম : ১০৮)।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ (আবু দাউদ) “যে ব্যক্তি সংখ্যালঘুকে উত্ত্যক্ত করলো সে আমাকে উত্ত্যক্ত করলো, আর যে আমাকে উত্ত্যক্ত করলো আল্লাহকেই সে উত্ত্যক্ত করলো।” অমুসলিম নাগারিককে হত্যা করা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন সংখ্যালঘুকে হত্যা করবে সে বেহেশতের ঘ্রাণও উপভোগ করতে পারবেনা। অথচ বেহেশতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতেও অনুভব করা যাবে।” (অমুসলিমের প্রতি ইসলামের উদারতা- ড. ইউসুফ আল-কারযাভী) হযরত আলী (রা.) সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিমদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ঘোষণা দিয়েছেন, “তাঁদের রক্ত আমাদের রক্তের মত এবং তাঁদের ধন সম্পদ আমাদের ধন সম্পদের মত।” অমুসলিমদের জান-মাল মুসলমানদের নিজের জানমালের ন্যায় পবিত্র ও নিরাপত্তাযোগ্য। রাসুল (সা.) এর এ ঘোষণার পর যারা অমুসলিমদের ধন সম্পদ লুন্ঠন করে, অর্পিত কিংবা ন্যস্ত সম্পত্তি জবরদস্তিমূলক ভাবে দখল করে রাখে, তারা কি নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দিতে পারে? এ ব্যাপারে স্পষ্ট ফতোয়া আসলে এদেশের বহু অমুসলিম ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হতো।
অমুসলিমদের সাথে রাসূলুল্লাহর স. কোমল আচরণ : হযরত আনাছ (র.) বর্ণনা করেন, “আমরা একদিন মসজিদে নববীতে রাসূলে কারীম (সা.)-এর সামনে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে মসজিদের ভিতরে প্রশ্রাব করতে লাগল। এতে উপস্থিত সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলে রাসূল (সা.) বললেন, তাকে প্রশ্রাব করা থেকে বাধা প্রদান করো না। তাকে সুযোগ দাও; যাতে সে প্রশ্রাবের প্রয়োজন সেরে নিতে পারে, কারণ মধ্যখানে বন্ধ করলে ক্ষতি হবে। সে বেদুঈনের প্রশ্রাব করা শেষ হলে নবী কারীম (সা.) তাকে ডেকে বললেন যে, এটা প্রশ্রাবের স্থান নয়; বরং এটা আমাদের ইবাদতখানা, পবিত্রস্থান। এ বলে তিনি তাকে বিদায় করে দিলেন এবং এক সাহাবীকে পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর মহানবী (সা.) নিজেই সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে মসজিদ থেকে উক্ত প্রশ্রাব ধুয়ে দিলেন।” (বুখারী ও মুসলিম)। প্রতিশোধের পরিবর্তে শত্রুদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ক্ষমা ও মহানুভবতার এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত শান্তি- সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের চিরন্তন আদর্শের জানান দেয়। ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করানোর ক্ষেত্রে নবী করীম (সা.) ও সাহাবাগণ কোন রকম জোর-জবরদস্তি করেননি। নায়েবে রাসূল (সা.), ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, পীর-মাশায়েখ, অলি-আউলিয়া, হাক্কানী আলেম-ওলামা যুগ যুগ ধরে দুনিয়ার বুকে দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিরলসভাবে মেহনত করে চলছেন। যুগে যুগে যারা মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, তারা অসাধারণ মানবপ্রেম, অনুপম চারিত্রিক মাধুর্য, অতুলনীয় মানবিক মূল্যবোধ, দৃষ্টান্তমূলক সৎকর্ম, নিষ্ঠাপূর্ণ আমল ও পরিশুদ্ধ মননশীলতা দ্বারা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ইসলাম গ্রহণে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এর ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়।
অমুসলিমদের মুর্তির নিরাপত্তা : আমিরুল মু’মিনিন খলিফাতুল মুসলিমিন হযরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে হযরত আমর ইবনুল আ’ স (রা.) দায়িত্ব পালন করছিলেন, সে সময় একদিন আলেক জান্দ্রিয়ার খ্রীষ্টান পল্লীতে হৈ - চৈ পড়ে গেলো। কেউ একজন যিশু খ্রীষ্টের প্রস্তর নির্মিত মূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলছে। খ্রীষ্টানরা ধরে নিল যে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠলো। খ্রীষ্টান বিশপ অভিযোগ নিয়ে আসলেন আমর ইবনুল আ’স এর কাছে। আমর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি ক্ষতিপূরণ স্বরূপ মূর্তিটি নতুনভাবে তৈরি করে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রীষ্টান নেতাদের প্রতিশোধ স্পৃহা ছিলো অন্যরকম। তারা চাইলো মুহাম্মদ (সা.) এর মূর্তি তৈরি করে অনুরূপভাবে নাক ভেঙ্গে দিতে। খ্রীষ্টানদের এ মতামত ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে তাদের কতটুকু বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যে নবী (সা.) আজীবন পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, সে নবীর মূর্তি তৈরীকে মুসলমানরা কিভাবে মেনে নিতে পারে? হযরত আমর কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রীষ্টান বিশপকে বললেন, “আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোন প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যে কোন একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তত, যার নাক আপনারা চান।” খ্রীষ্টান নেতারা সকলে এ প্রস্তাবে সম্মত হলো। পরদিন খ্রীষ্টান ও মুসলমান বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর (রা.) সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, “এদেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসন এর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারী গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাসিকা ছেদন করুন।” একথা বলেই তিনি বিশপকে একখানি তীক্ষèধার তরবারী হাতে দিলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রীষ্টানেরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নিঃশ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়। সহসা সেই নীরবতা ভংগ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বললো, “আমিই দোষী, সিপাহসালারের কোন অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙ্গেছি, এই, তা আমার হাতেই আছে। তবে মূর্তি ভাঙ্গার কোন ইচ্ছা আমার ছিলোনা। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।” সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারীর নীচে নিজের নাসিকা পেতে দিলো। স্তম্ভিত বিশপ। নির্বাক সকলে। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো। তরবারী ছুঁড়ে দিয়ে বিশপ বললেন, “ধন্য সেনাপতি, ধন্য এই বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ (সা.), যাঁর মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভিক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যিশু খ্রীষ্টের প্রতিমূর্তির অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চাইতেও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানি করি। সেই মহান ও আদর্শ নবীকেও আমার সালাম জানাই।” পরধর্ম সহিষ্ণুতার এ জলন্ত উদাহরণ আজো বিশ্ববাসিকে হতবাক করে।
সব ধর্মের উপাসনালয়কে ইসলাম শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখারও নির্দেশ দিয়েছে এবং কারো উপাসনালয়েও হামলা চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তাই নয় বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেন- ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সুরা আন আম: ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারীদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি বরং সব জাতি এবং সব সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
অমুসলিম জিম্মির অধিকার : কোনো মুসলিম শারীরিক, আর্থিক কিংবা সম্মান-মর্যাদার দিক থেকে অমুসলিম ব্যক্তির প্রতি কোনোরূপ অন্যায় করতে পারবে না। অমুসলিম ব্যক্তি যদি জিম্মি (মুসলিম শাসনাধীনে বসবাসকারী), মুস্তা’মান (মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তাপ্রাপ্ত) কিংবা মু‘আহিদ (যার দেশের সাথে মুসলিমরা শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ) হয়, তাহলে তাকে তার প্রাপ্য অধিকার দিতে হবে এবং চুরি, বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণার মাধ্যমে তার ধনসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করা যাবে না। তাকে হত্যা করা যাবে না এবং আঘাত করে শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়া যাবে না। কারণ সে মু‘আহিদ, জিম্মি কিংবা মুস্তা’মান হওয়ায় ইসলামী শারী‘আহ্ কর্তৃক তার নিরাপত্তা সুরক্ষিত। রাসূল স. এর সমযে এক মুসলিম অমুসলিমকে হত্যা করলে তার মুত্যু দন্ড দেন এবং ঘোষণা দেন যে নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে তার রক্তের বদলা নেয়ার দায়িত্ব আমারই্ (ইনায়া শরহে বিদায় ৮ম খন্ড, পৃ-২৫৬)
অমুসলিমদের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য : এমন কোনো কারণ নেই যার ফলে আমরা অমুসলিমদের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য, তাদের কাছে জিনিসপত্র ভাড়া দেওয়া বা তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারবো না। সহীহ হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী, আল্লাহ্র রাসূল (সা.) কাফের এবং মুশরিকদের থেকে জিনিসপত্র কিনেছেন। আর তাদের থেকে জিনিসপত্র কেনা মূলত তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা। তাঁর (সা.) মৃত্যুর সময়েও তাঁর একটি বর্ম একজন ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক ছিল। ইয়াহুদীর কাছে একসময় বর্মটি বন্ধক রেখে রাসূল (সা.) তাঁর পরিবারের জন্য খাবার কিনেছিলেন।
অমুসলিমদের সাথে সালাম বিনিময় : পারষ্পারিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের যে বিধান ইসলামে রয়েছে তাও সম্প্রীতির বন্ধন সুসংহতকরণের উজ্জল প্রয়াস। সালাম অর্থ শান্তি। সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে মূলত একে অপরের শান্তিই কামনা করা হয়। এতে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচিত হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, যদি আহলে কিতাবদের কেউ সালামের (আস্সালামু ‘আলাইকুম) মাধ্যমে তোমাদের অভিবাদন জানায়, তাহলে বল, ‘ওয়া ‘আলাইকুম। (আল-বুখারি- ৫৯০১; মুসলিম- ২১৬৫) তবে অমুসলিমদেরকে প্রথমে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়। নবী (সা.) বলেছেন “ইয়াহুদী কিংবা খ্রীষ্টানদের প্রথমে তোমরা সালাম জানাবে না।” (সহীহ মুসলিম- ২১৬৭) অতএব, নিজে থেকে প্রথমেই কোনো কাফিরকে সালাম জানানো মুসলিমের উচিত নয়। তবে কোন কাফের, ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান যদি কোনো মুসলিমকে সালাম জানায়, তাহলে রাসূলের (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী, “ওয়া ‘আলাইকুম” বলে উত্তর দেওয়া যাবে। (চলবে)