শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মিয়ানমারের ইচ্ছা অনুযায়ীই ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসরণ করা হয়েছে

* এটা নাই সেটা নাই- এসব বলে লাভ নাই
* টাইমফ্রেম দিয়ে কোনও লাভও নেই
স্টাফ রিপোর্টার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, মিয়ানমারের ইচ্ছে অনুযায়ীই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের চুক্তি তারা অনুসরণ করতে চায়। সেভাবেই জিনিসটি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিরিয়ে নেয়া। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, এটা নাই সেটা নাই- এসব বলে লাভ নাই। স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার গত ৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর পরে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের ফেরত নিবে। মন্ত্রী বলেন, ফিরিয়ে নেয়ার কোনও টাইমফ্রেম দেয়া যায় না। প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপার হলো, এরকম কোনও টাইমফ্রেম দিয়ে কোনও লাভও নেই।
গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত এই চুক্তি হওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, ১৯৯২ সালের ওই চুক্তি অনুসরণযোগ্য নয়।
মন্ত্রী জানান, ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের আগে পাঠানো হবে। আর এর আগে থেকেই যারা আছে (প্রায় তিন লাখের মতো) তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয় পরে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার পর রোহিঙ্গাদের তাদের সাবেক আবাসস্থল বা পছন্দ অনুযায়ী কাছাকাছি কোনও স্থানে পুনর্বাসিত করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে সীমিত সময়ের জন্য রাখা হবে। এছাড়া যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার জটিলতা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এই প্রত্যাবাসন চুক্তির কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা আছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু আইন থাকলেও লঙ্ঘন হয়। আইন দিয়ে কিছু হয় না। মূল কথা হলো কোনও দেশ এটি মানছে কিনা।’
চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে, এক সাংবাদিক এরকম মন্তব্য করলে মন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, আমি সন্তুষ্ট। আপনার মন্তব্য অত্যন্ত চমৎকার। আমার মনে হয় এটি অত্যন্ত হাস্যকর মন্তব্য। গোটা পৃথিবী একদিকে বলছে, আপনি বলছেন এটি কোনও চুক্তি হয়নি। স্বার্থ কে ঠিক করে? যে সরকার ক্ষমতায় আছে সেই ঠিক করে। আমরা স্বার্থ ঠিক করেছি।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর এবার ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতিগত দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম।
বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে আর সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনার কথা নতুন সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশ এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে নতুন চুক্তির কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালের চুক্তির অনুসরণেই সম্মতিপত্র হয়েছে। এ অবস্থায় সেই চুক্তির অনুসরণে কেন চুক্তি হল- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমার ওই চুক্তি অনুসরণ করতে চায় বলে সেভাবেই করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। এর খুঁটিনাটি, ত্রুটি-বিচ্যুতি, এটা-ওটা নেই, কেন নেই, কী হবে- এসব কথা বলে তো কোনো লাভ নেই। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল, রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নিতে চেয়েছে। লোকগুলোর সেখানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, সেটারও কাজ শুরু হয়েছে।
প্রত্যাবাসনের জন্য আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন এবং ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ চূড়ান্ত করা হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এই চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পর তাদের আগের আবাসস্থল বা তাদের পছন্দ অনুযায়ী কাছাকাছি কোনো স্থানে পুনর্বাসিত করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল/ব্যবস্থায় সীমিত সময়ের জন্য রাখা হবে। এই প্রক্রিয়ায় চীন ও ভারতের সহযোগিতা নেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশ দুটির সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে বলে জানান মাহমুদ আলী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে জানালেও কবে নাগাদ শেষ করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় চুক্তিতে নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। ‘যৌক্তিক সময়ের’ ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার শেষ তো দেয়া যায় না। শোনেন, এটা প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপারটা হল যে, এই রকম কোনো টাইম ফ্রেম দিয়ে লাভও নাই।
শুরুতে ‘সমঝোতা চুক্তি’ বা ‘এমওইউ’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও একে মূলত ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এটা জানিয়ে বলেন, মিয়ানমার শুরুতে সমঝোতা বলেছিল এবার তারাই এর নাম দিয়েছে অ্যারেঞ্জমেন্ট। এই অ্যারেঞ্জমেন্ট মেনে চলার ব্যাপারে কোনও আইনি বাধ্য-বাধকতা আছে কি-না জানতে চাইলে মি. আলী বলেন, "নিশ্চয়ই আছে।"
তবে এর বিস্তারিত উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক আইন থাকলেও তার লঙ্ঘন হচ্ছে। আইন কোনো রাষ্ট্র মানছে কি-না সেটাই বড় ব্যাপার, বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই সফরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন মাহমুদ আলী।
নাফ নদীর স্থায়ী সীমানা নির্ধারণের উপর ২০০৭ সালে চূড়ান্ত করা একটি প্রটোকল এই সফরে সই হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত নাফ নদীর উত্তরে স্থলভাগের সীমানা নির্ধারণ চুক্তির ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব রেটিফিকেশন’ও বিনিময় হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ