শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দিঘলিয়ায় দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সদস্যদের

খুলনা অফিস : খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (সদর ইউনিয়ন) চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়। বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে একই পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত আটজন সদস্য এ দাবি জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইউপি সদস্যদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খান ইমরান হোসেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেন বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়েছেন। এর প্রতিবাদ করায় তিনি বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়া এবং ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের মালামাল কেনার জন্য ‘শরীক’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থা প্রদত্ত অনুদানের ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ, কাজ না করেই হাট-বাজারের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎ, সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে পরিষদের প্রায় এক লাখ টাকার গাছ বিক্রি, স্থানীয় দেয়াড়া কলোনী খেয়াঘাট বাবদ নামমাত্র টাকা পরিষদে জমা দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ, লোকাল গভার্মেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রামসহ (এলজিএসপি) ব্যাংকে আংশিক অর্থ রেখে বাকি টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, ওয়ারেশকাম সার্টিফিকেট ও ট্রেড লাইসেন্স’র আংশিক টাকা জমা দেখিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাৎ এবং ভুয়া প্রকল্পের নামে কিছু টাকা খরচ দেখিয়ে ট্যাক্সের প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ অন্যতম। এছাড়া চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেন ইউপির সকল প্রকল্পের কাজ নি¤œমানের মালামাল দিয়ে করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট মালামালও তিনি নিজেই সরবরাহ করেন। এমনকি ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে দু’টি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির বরাদ্দের প্রায় দেড় লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া সদস্যদের মতামত ছাড়াই ভিজিএফ ও ভিজিডিসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রি নিজের পছন্দের লোকদের মধ্যে বিতরণ করেন। যে কারণে প্রকৃত উপকারভোগীরা সরকার প্রদত্ত ত্রাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। উল্লিখিত অনিয়ম-র্দুর্নীতির বাইরেও হতদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে ইউপির সচিব ফারুক হোসেনকে দিয়ে বিভিন্ন নামে জাল স্বাক্ষর করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ এবং টিআর ও কাবিখাসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকেও ভূয়া নামে স্বাক্ষর করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে অজ্ঞান করে মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগে বাগেরহাট মডেল থানায় মামলাও রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইউপি সদস্যরা বলেন, চেয়ারম্যানের একের পর এক ধারাবাহিক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিকার দাবি করে ৮ জন নির্বাচিত সদস্য ১২ নবেম্বর দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া এবং ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অংশ হিসেবে ১৪ নবেম্বর পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তিনি ৩৫ হাজার টাকায় গাছ বিক্রি করে পরিষদের সাধারণ তহবিলে ২৫ হাজার টাকা জমা করেছেন। এ ক্ষেত্রেও ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। যদিও প্রকৃতপক্ষে গাছ বিক্রির অর্থ লক্ষাধিক টাকা হবে। অপরদিকে, তিনি শরীক প্রকল্পের ২ লাখ টাকায় কোটেশেনের মাধ্যমে ১টি প্রজেক্টর, ১টি ক্যামেরা, ১টি ল্যাপটপ ও ১টি সাউন্ড বক্স ক্রয় করেছেন বলে দাবি করলেও দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর তড়িঘড়ি করে উল্লিখিত মালামাল ক্রয় করেন। যার সত্যতা পরিষদের সচিব ফারুক হোসেন নিজেই স্বীকার করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এ সময় ২নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নাজমুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খান বিপ্লব হোসেন, ৬নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবিএম আতিকুল ইসলাম, ৭নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোল্লা হারুন-আর-রশিদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আজিজুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসন (৭,৮,৯) সদস্য হাফিজা খাতুন ও সংরক্ষিত আসনের (৪,৫,৬) সদস্য রিনা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ