ভিডিও শেয়ার করে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন ট্রাম্প

রয়টার্স, বিবিসি : নির্বাচনের সময় থেকেই মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারে মেতে উঠেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েও তা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরেই বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে অভিবাসী গ্রহণ এবং ভ্রমণে আসতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। যদিও আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি শতভাগ সফল হতে পারেননি। তবু মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য যেন ট্রাম্প এক পায়ে খাড়া।
এমন অবস্থায় সম্প্রতি তিনটি মুসলিমবিদ্বেষী উসকানিমূলক ভিডিও টুইট করে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প।
ভিডিওগুলো ব্রিটেনের চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্রিটেন ফার্স্ট দলের। ট্রাম্প তাদের টুইটটি রি-টুইট করেছেন। ব্রিটেন ফার্স্ট দলের উপনেতা জেইডা ফ্রানসেনের প্রথম টুইটবার্তায় এক ভিডিওতে দাবি করা হয়, একজন মুসলিম অভিবাসী ক্র্যাচ নিয়ে চলা এক প্রতিবন্ধীর ওপর হামলা করেছে।
এর পর তিনি আরও দুই ব্যক্তির একই ধরনের দুটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন তারাও মুসলমান। এর একটিতে দেখানো হয় মুসলিমরা একটি খ্রিস্টান মূর্তি ভাঙছে, অন্যটিতে তারা এক বালককে হত্যা করছে। এই তিনটি ভিডিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেন।
২০১১ সালে ব্রিটেন ফার্স্ট গঠন করা হয়। উগ্র ডানপন্থী ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) সাবেক সদস্যরা এটি গঠন করে। ‘যুক্তরাজ্যের ইসলামীকরণ’ উল্লেখ করে দলটি বিতর্কিত বিভিন্ন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র-ডানপন্থি ভিডিও শেয়ারের সমালোচনা করায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে-কে শাসালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
মে- কে যুক্তরাজ্যের ‘সন্ত্রাসবাদের’ ওপর নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, খবর বিবিসির।
এক টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, “আমার দিকে নজর দিয়েন না, যুক্তরাজ্যে বিরাজমান ধ্বংসাত্মক মৌলবাদী ইসলামী সন্ত্রাসবাদের দিকে নজর দিন।”
এর আগে ট্রাম্প এক ব্রিটিশ উগ্র-ডানপন্থি নেতার পোস্ট করা মুসলিমবিদ্বোষী ভিডিও রিটুইট করলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সমালোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মে-র মুখপাত্র বললেন, ওই কাজ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ভুল করেছেন’। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পরস্পরের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিদেশি নেতাদের মধ্যে মেই প্রথম হোয়াইট হাউস সফর করেন।
টুইটারে ট্রাম্পের চার কোটিরও বেশি অনুসারি আছে। যে ভিডিওগুলো তিনি শেয়ার করেছেন সেগুলো ‘ব্রিটেন ফার্স্ট’ গোষ্ঠীর উপনেতা জায়দা ফ্রানসেনের পোস্ট করা। উগ্র-ডানপন্থি ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টির(বিএনপি) সাবেক সদস্যরা ‘ব্রিটেন ফার্স্ট’ গোষ্ঠীটি তৈরি করেছেন।
৩১ বছর বয়সী ফ্রানসেন বেলফাস্টের এক সমাবেশে ‘হুমকিপূর্ণ, অবমাননাকর ও অপমানজনক’ শব্দ ব্যবহার করে ভাষণ দেন, যা নিয়ে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। তার পোস্ট করার ভিডিওগুলো রিটুইট করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনীতিক।
ব্রিটেনে খ্রিস্ট্রীয় প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের সর্বোচ্চ যাজক ক্যান্টাবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি বলেছেন, “ট্রাম্প উগ্র-ডানপন্থিদের কণ্ঠ জোরালো করার পথে গেছেন, যা অত্যন্ত বিরক্তিকর।”
এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করার ডাক উঠেছে আবার, তবে বুধবার ডাউনিং স্ট্রিট থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের জন্য আমন্ত্রণ এখনও বহাল আছে।
টুইটারে মে-কে দেওয়া জবাব প্রথমে ভুল টুইটার অ্যাকাউন্টে ট্যাগ করেছিলেন ট্রাম্প। তার বিবৃতি এমন একজনের কাছে চলে গিয়েছিল যার অনুসারী মাত্র ছয়জন।
এরপর ওই টুইট ডিলিট করে সেটি আবার পোস্ট করেন ট্রাম্প, এবার বার্তাটি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দাপ্তরিক অ্যাকাউন্টে ট্যাগ হয়।