মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সরকার পুরো বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে -আমির খসরু

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, অবৈধ সরকারের সর্বশেষ বাধার জায়গা ছিল বিচার বিভাগ। সেটা তারা বুঝতে পেরে বিচার বিভাগকে একটা প্রকল্প হিসেবে নিয়েছে। প্রকল্পটা হচ্ছে পুরো বিচার বিভাগকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি’ শীর্ষক এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন।
 প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমির খসরু বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই, এখানে শাসকের আইন চলছে। অর্থাৎ শাসক যেটা বলছে সেটাই আইন। শাসক তার ইচ্ছে মত, সুবিধা মতো, আইন তৈরি করছে এবং প্রয়োগও করছে। এই অনির্বাচিত সরকার তাদের নিজেদের আইন প্রয়োগ করার জন্য সংবিধান পরিবর্তন করেছে। বিভিন্ন আইন করেছে অনির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে এবং প্রতিনিয়ত দেশবিরোধী আইনগুলো জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আমি বলবো এটা সরকারের একটি প্রকল্প।
 তিনি বেগম জিয়া ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসঙ্গে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং এস কে সিনহার বিদায়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। এটা একটি পরিকল্পিত বিষয়। প্রধান বিচারপতি দেশে ন্যায় বিচার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য কাজ করছিলেন।
 তিনি আরও বলেন, এস কে সিনহা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য, অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো ব্যক্তি বিশেষের ব্যাপার নয়। এটা বাংলাদেশের আইনের শাসন থাকবে নাকি শাসকের আইন থাকবে এটা পরিষ্কার করার জন্য। যে কারণে প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। পদত্যাগ করতে হয়েছে। এই সরকার এই কাজগুলো অত্যন্ত সচেতনভাবে করে যাচ্ছে। বিচার-বিবেচনা না করে তারা এই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, একটা পর্যায়ে এই অবৈধ সরকারের সর্বশেষ বাধার জায়গা ছিল বিচার বিভাগ। সেটা তারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। যে কারণে তারা বিচার বিভাগকে একটা প্রকল্প হিসেবে নিয়েছে। প্রকল্পটা হচ্ছে পুরো বিচার বিভাগকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে এবং যার কারণে নিম্ন আদালত নির্বাহী বিভাগের অধীনে অর্থাৎ শাসকের অধীনে থাকবে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংসদে ষোড়শ সংশোধনী করেছিল, বিচারকদের তাদের উপর নির্ভরশীল করার জন্য। যেটা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে এস কে সিনহা মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। সেটা বুঝতে পেরে এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়তে ও পদত্যাগ করতে করতে বাধ্য করেছে এই সরকার। এটাই হচ্ছে দেশের বর্তমান বিচার বিভাগের অবস্থা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই অবস্থার পিছনে যে চিন্তা ছিল তার শিকার হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এসব পরিকল্পনার পিছনে উদ্দেশ্য ছিল বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করবে, নির্বাচনে বাধাগ্রস্তু করে নির্বাচনী ফসল তারা ঘরে তুলে নিয়ে যাবে। একটা বৃহত্তর পরিকল্পনা করে তারা এগুলো করছে। কিন্তু আমরাও পরিষ্কার করে বলতে চাই এভাবে ফসল ঘরে তোলার কোনো সুযোগ নেই। ফসলতো তুলতেই পারবেন না, বরং এটার জন্য অনেক বড় মূল্য দিয়ে আপনাদের (আওয়ামী লীগকে) বিদায় নিতে হবে। আমরা চাই না সেভাবে আপনারা বিদায় হন। আপনারা রাজনীতিতে থাকুন। এজন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন।
 রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছে তা কখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই চুক্তি করা হয়েছে জনগণকে ধোকা দেওয়ার জন্য, যা করে জনগণের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।
আমির খসরু মাহমুদ বলেন, ইদানীং শুনতে পারছি আগাম নির্বাচনের কথা। অন্তত দেরিতে হলেও হয়তো বা আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন যে একটা অনির্বাচিত, অবৈধ সরকার অনেক বেশি দিন চলেছে বাংলাদেশে, এটা আর চলা উচিত হবে না। এখন একটা আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে আমরা যাব। সেটা হলেও অন্তত আপনারা যে পাপ করেছেন, ভুল করেছেন এটা জনগণ মেনে  নেবে বলে মনে করি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, জিনাফের সভাপতি মিয়া মোহাম্মাদ আনোয়ার প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ