শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের ইতিবৃত্ত

মাহমুদ ইউসুফ : পৃথিবীর ইতিহাস, মানবজাতির ইতিহাস দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনিতে ভরপুর। এইসব সহিংসতা, পাশবিকতা, দানবীয়তার মূলে রয়েছে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব, আদর্শিক সংগ্রাম, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আধিপত্যের লড়াই, পররাজ্য গ্রাসের কুটকৌশল। চলতি দুনিয়ায় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ জটিলতম মুসিবত। মিডিয়া নজর দিলেই দেখা যায় হত্যা, খুন, বোমাবাজি, জঙ্গি হামলা। ইহা টেলিভিশন, খবরের কাগজ ও ভার্চুয়াল মিডিয়ার প্রতিদিনকার সংবাদ। আর কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই গণমাধ্যম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর দায়ভার চাপায় মুসলিমদের ওপর। আসলে প্রকৃত ক্লু গোপন করার উদ্দেশ্যেই তাদের এই প্রোপাগান্ডা। সভ্যতার শুরু হতেই ইসলাম বিরোধীরাই যাবতীয় জঙ্গি সন্ত্রাসের হোতা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। আমরা এখানে কতিপয় দলিল উপস্থাপন করব এ সত্যতার স্বপক্ষে।
হাম্বুরাবির একনায়কত্ব : ইসায়িপূর্ব ১৯৫০ সনে (অর্থাৎ আজ থেকে ৩৯৬৭ বছর পূর্বে) ষষ্ঠ রাজা হিসেবে ব্যবিলনে হাম্বুরাবির অভিষেক ঘটে। তিনি সুমেরদের পরাজিত করে ব্যবিলন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। ব্যবিলনের পূর্ব নাম ছিলো সেন্নার। আল কুরআন ও বাইবেলে যার নাম বাবেল। রাজা হাম্বুরাবির স্বৈরাচারিতা আজও স্মরণীয়। তিনি ছিলেন জমিদার, অমাত্য, পুরোহিত ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিশ্বস্ত পৃষ্টপোষক। তার আইন কানুনের মর্ম ছিলো ‘লাভ সবটাই ধনীর, লোকসান পুরোটা গরিবের’। আল কুরআনে বর্ণিত নবি ইবরহিমের সমকালীন বাদশাহ নমরুদ আর হাম্বুরাবি সম্ভবত একই ব্যক্তি।
কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ওপর তিনি এক তৃতীয়াংশ খাজনা ধার্য করেন। ফলের বাগান হলে দিতে হতো দুই তৃতীয়াংশ। খাজনা দিতে দেরি হলে সুদ ও ক্ষতিপূরণ আদায় করা হতো। কেউ অসমর্থ হলে তাকে দাস বানানো হতো। হাম্বুরাবি বলতেন, ‘তার কানুন দ্বারা তিনি ধনী ও বড় লোকদের স্বার্থ সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ (রেবতী বর্মণ: সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, পৃ ৩৫-৩৬)
ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের সংঘাত : ভারতের প্রাচীন বৈদিক সমাজ নানা দিক দিয়ে কলুষিত। শ্রেণি সংগ্রাম, বর্ণবাদ, দখল ইত্যাদিতে পূর্ণ তৎকালীন সমাজ। সেখানে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে শ্রেণি প্রাধান্যের জন্য সংঘর্ষ। অথর্ববেদ ও তৈত্তিরীয় সংহিতায় আমরা দেখি ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় পরস্পর পরস্পরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করছে। পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক আতঙ্কে মোড় নেয়। সংঘাত অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। এই বড়ত্বের দাবি নিয়ে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে বহুবর্ষব্যাপী একটা যুদ্ধের মুখোমুখি হয় উভয় বাহিনী। পুরাণে এই যুদ্ধকে ব্রাহ্মণ ভার্গব ও ক্ষত্রিয় হৈহয় পরিবারের যুদ্ধ বলা হয়েছে। এ যুদ্ধে ব্রাহ্মণদের সিপাহসালার ছিলেন পরশুরাম ও ক্ষত্রিয় নেতা ছিলেন কার্তবীর্জার্জুন।
প্রাচীন ঋষি ও পুরোহিতরা ছিলো অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক মোক্তার। নি¤œশ্রেণিগুলোর মধ্যে যেন উচ্চশ্রেণির প্রতি বিরোধীভাব না থাকে সেজন্য ব্রাহ্মণেরা পরলোক, স্বর্গ-নরক ও পরিশেষে জন্মান্তরবাদের তত্ত্ব রচনা করেন। সংস্কৃত সাহিত্যে যারা ব্রাহ্মণদের অনুশাসন মানে না তাদেরকে বলা হয়েছে ‘অনার্য’। (রেবতী বর্মণ: সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, পৃ. ৪৫) অনার্য মানে অসভ্য, অসাধু, অভদ্র। অর্থাৎ হিন্দু না হলেই তারা অসভ্য, বর্বর, অমানুষ, ম্লেচ্ছ ...। বর্তমান যুগেও তাদের কাছে শুনতে পাই, ‘বীরের প্রধান ধর্ম স্বদেশ রক্ষণ/হিন্দুর প্রধান কার্য যবন (মুসলিম) নিধন।’ (মনোমোহন গোস্বামী: পৃত্থিরাজ, উদ্ধৃতি, মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক: ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন, পৃ ১৩৩)
ব্যাবিলন সম্রাট নেবুকাদনেজারে সহিংসতা : নেবুকাদনেজার বা বখত নসর ছিলেন ইসায়িপূর্ব পঞ্চম শতাব্দিতে ব্যাবিলনের বাদশাহ। ধর্মবিশ্বাসে সম্রাট বখত নসর ছিলেন মুশরিক। সে ছিলো তদানীন্তন বিশ্বের সন্ত্রাসবাদের প্রধান পৃষ্টপোষক। ৫৮৭ খ্রিষ্টপূর্বে নেবুকাদনেজার এক ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ইয়াহুদিয়ার ছোটো বড়ো সকল শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। সে জেরুজালেম এবং হায়কালে সুলায়মানি এমনভাবে ধূলিসাৎ করে দেয় যে, তার কোনো একটি দেয়ালও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। ইহুদিদের বহু সংখ্যক লোককে তাদের অঞ্চল থেকে বহিষ্কৃত করে বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। (আবুল আলা : সীরাতে সরওয়ারে আলম ২য় খণ্ড,  পৃ ১৩)
কপিল মুনির সন্ত্রাস : কপিল ছিলেন বিখ্যাত ঋষি। একাগ্রচিত্তে তপস্যার জন্য কপিল মুনি পৃথিবীর নিম্নভাগ পাতালে আশ্রম স্থাপন করেন। সগর মহারাজের পুত্রদের ঘোড়া অপহরণের অভিযোগে তার ওপর আক্রমণ চালালে মুনিও বদলা আগ্রাসন চালায় সন্তানদের ওপর। এই প্রতিআক্রমণে মুনি ক্রুদ্ধ হয়ে সগর বা সমুদ্র মহারাজের ৬০ হাজার সন্তানকে ভস্ম করেন। (সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরাণিক অভিধান, পৃ ৭৭)
প্রাচীন গ্রিসে অরাজকতা : বর্তমান গ্রিকদের আদি নিবাস কিন্তু গ্রিসে নয়। তারা থিসালি ও এপিরাস থেকে গ্রিসে উপনিবেশ গড়ে। ইসায়িপূর্ব ১৫০০ অব্দে তারা গ্রিসে প্রবেশ করে জোর জবরদস্তি করে আদিম অধিবাসীদের জমি দখল করে লয়। একই সাথে লূণ্ঠন করে তাদের মালসামান। সাথে সাথে তারা আদিবাসীদের নির্মূল করে। প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে এ নিধনযজ্ঞ। তাদের বিনাশ করেও ঘাতক নব্য গ্রিকরা স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে ব্যর্থ হয়। শ্রেণিবৈষম্য প্রকট রূপ নেয়। সমাজ অভিজাত ও দাস দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। অভিযাত সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলো শাসক, সেনাপতি ও দেবতাসমাজ। একজন অভিজাতের ৩০-৪০ জন দাস থাকত।
গ্রিসে দাসপ্রথার যুগে মুষ্টিমেয় লোক বিলাসিতায় জীবন যাপন করত। অন্যদিকে হাজার হাজার দাস মনিবের জন্য খেটে প্রাণপাত করত। তাদের ছিলো পশুর জীবন। এই রকম পরগাছা সামাজিক ব্যবস্থা গ্রিসের মনীষী দার্শনিকেরা সমর্থন করতেন। জনৈক দার্শনিক বলেছেন, ‘বিলাসিতার এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন স্বাধীন মানুষের পক্ষে একান্ত স্বাভাবিক, দাস এবং নিকৃষ্টস্তরের লোকদের যে খাটতে হয়, তা প্রকৃতিরই বিধান।’ অন্য একজন মনীষী এসঙ্গে যোগ করেন, ‘গ্রিসের প্রধান দেবতা জিউস স্বয়ং এই রকম ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’ গ্রিসের প্রধান দার্শনিক ছিলেন এরিস্টটল। তিনি এথেন্সে বাস করতেন। তিনিও দাসপ্রথার সমর্থন করেন। তাঁর মতে, ‘দাসত্ব ব্যবস্থা প্রকৃতিরই নিয়ম।’ এরিস্টটল দাসকে উৎপাদনের যন্ত্ররূপ দেখেন; কতগুলো যন্ত্র জড় : যেমন- হাতুড়ি, কাস্তে; কতগুলো যন্ত্র সজীব যেমন: দাস।’ (রেবতী বর্মণ: সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, পৃ ৪৭-৫২) বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যসূচিতে গ্রিসের এইসব ভণ্ডদের থিওরির উপস্থিতি বাস্তবিকই দুর্ভাগ্যের।
অগ্নিপরীক্ষার নামে মানবতাবিরোধী কাজ : পুরাকালে ভারতবর্ষে অগ্নিপরীক্ষায় প্রথা ছিলো। কোনো নারীর সতীত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ হলে, তার পবিত্রতা সম্বন্ধে সন্দেহ দূর করবার জন্য লাঙ্গলের অগ্নিতপ্ত লৌহশলা তাকে লেহন করতে হতো। জিহ্বা দগ্ধ না হলে সেই নারী যে যথার্থই সতী তা প্রমাণ হয়ে যেত। (সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরাণিক অভিধান, পৃ ৯) কত বড় জঘন্য প্রথা। নারীর প্রতি এর চেয়ে অবিচার আর কী হতে পারে? পুরুষের সতীত্ব পরীক্ষার দরকার নেই। সব দায়ভার নারীদের! এই হলো ভারতীয় মুশরিকদের ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবতাবোধ। এদের ওপর জঙ্গিত্ব আরোপ হয় না। সারা দুনিয়ায় এরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।
আলেকজান্ডারের সন্ত্রাস : আলেকজান্ডার একজন বড় যোদ্ধা ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি অহংকারী, উদ্ধত এবং নৃশংস প্রকৃতির লোক ছিলেন। মনে মনে তিনি নিজেকে প্রায় দেবতার আসনে বসিয়েছিলেন। কখনও রাগের মাথায়, কখনও বা খেয়ালের বশে তিনি তার অন্তরঙ্গ বন্ধুদেরও হত্যা করেছেন। আবার কখনও সমস্ত অধিবাসী সমেত বড় বড় নগরী তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে থিবস শহরের কথা বলা যায়। থিবস নগরীর জনসাধারণ তার বশ্যতা স্বীকার না করে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে আলেকজান্ডার থিবস আক্রমণ করলেন; সেই প্রচণ্ড আক্রমণে সুপ্রসিদ্ধ নগরীটি একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বহু অধিবাসীকে তিনি নৃশংসভাবে হত্যা করেন এবং বহু সহস্র লোককে তিনি ক্রীতদাসরূপে বিক্রয় করেন। তার এই বর্বরোচিত ব্যবহারের জন্য সমস্ত গ্রিস দেশে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছিল। (জওহর লাল নেহরু: বিশ্বি ইতিহাস প্রসঙ্গ, পৃ ৪৬-৪৮)
চীনা সম্রাট শি হুয়াং এর সন্ত্রাস : চীনা সম্রাট শি হুয়াং টি (ইসায়ি পূর্ব ২৪৬-২০৯) চেয়েছিলেন লোকের অতীতের কথা ভুলে যায় এবং তাকে নিয়েই ইতিহাস শুরু হয়েছে এরকম ভাবতে শেখে। কাজেই তিনি হুকুম জারি করলেন, অতীতের সব গ্রন্থ বিশেষ করে ইতিহাস সম্বন্ধীয় এবং কনফুসিয়াসের ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় গ্রন্থ সব পুুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘যারা বর্তমানকে ছোটো করবার জন্য অতীতকে বড় করে দেখবে তাদের সপরিবারে হত্যা করা হবে।’ তার যে কথা সেই কাজ। বহু পন্ডিত ব্যক্তি তাদের প্রিয় গ্রন্থগুলোকে লুকিয়ে রাখবার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তাদের জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন। (জওহর লাল নেহরু: বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ, পৃ ৬৬-৬৭)
রোম ও কার্থেজে সন্ত্রাসবাদ : প্রাচীন রোম আর কার্থেজ রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১০০ বছর চলে যুদ্ধ, মারামারি, কাটাকাটি। এদের মধ্যে যুদ্ধ হয় তিন বার। প্রথম যুদ্ধ হয় ইসায়ি পূর্ব ২৬৪-২৪১ সালে। এই যুদ্ধ রোমের জয় হয়। পরবর্তীতে ২১৬ সালে কেরির যুদ্ধে কার্থেজ সেনাপতি হানিবলের হাতে রোমের পরাজয় হয়। হানিবল ইতালিকে প্রায় মরুভূমিতে পরিণত করেছিল। ইসায়ি পূর্ব ২০২ সালে জামা নামক স্থানে হানিবল পরাজিত হয়। কার্থেজ একেবারে দমে গেল। রোমের বিরুদ্ধে মাথা তুলার ক্ষমতা রইল না। কিন্তু রোমের মনের ঝাল মেটেনি। রোম মিথ্যা অজুহাতে কার্থেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়। এটাই তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধ। দারুণ হত্যাকান্ডের ভেতর দিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হল কার্থেজ। (জওহর লাল নেহরু: বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ, পৃ ৭১-৭২)
গ্রিক শাষক এন্টিয়ক ও এন্টিকাসের সন্ত্রাস : খিষ্টপূর্ব ১৬৮ অব্দে সিরিয়ার গ্রিক শাসক চতুর্থ এন্টিয়ক জেরুজালেম ও ইহুদি রাজ্য ধ্বংস করেন এবং সোলায়মানের মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে গ্রিক প্রতিমা-মন্দির স্থাপন করেন। আর বর্তমানে ইহুদিবাদীরা তাদেরকেই দুস্তি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে!
ইসায়িপূর্ব প্রথম শতকে আরেকজন গ্রিক দিগি¦জয়ী বীর ছিলেন তৃতীয় এন্টিকাস। ধর্মীয় দিক দিয়ে তিনি ছিল মুশরিক এবং ছিলো চরম স্বেচ্ছাচারী। তৃতীয় এন্টিকাস খ্রিষ্টপূর্ব ৯৮ সনে ফিলিস্তিন অধিকার করেন। সে ছিল সলুকিরাজ্যের শাসক এবং তার রাজধানী ছিল এন্তাকিয়া। এ সে ইহুদি ধর্ম ও সভ্যতা সংস্কৃতি সহ্য করতো না। তার মুকাবিলায় সে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক  চাপ সৃষ্টি করে গ্রিক সভ্যতার প্রসার শুরু করে এবং স্বয়ং ইহুদিদের মধ্য থেকে একটা বিরাট অংশ তার ক্রীড়নক হয়ে পড়ে। বাইরের এ হস্তক্ষেপ ইহুদি জাতির মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করে। একদল গ্রিক পোশাক পরিচ্ছদ, ভাষা, সমাজব্যবস্থা ও গ্রিক খেলাধুলা আয়ত্ত করে ফেলে এবং অপর দল আপন সভ্যতার উপর অটল থাকে। (আবুল আলা: সীরাতে সরওয়ারে আলম ২য় খন্ড,  পৃ ১৩)
প্রাচীন ভারতীয় শাসক মিহির কুলের সন্ত্রাস : মিহির কুল ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় অত্যাচারী রাজা। ভারতীয় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের জনক বলা যায় তাকে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহ্রু বলেছেন, ‘মিহিরকুল নিতান্ত বর্বর আর দারুণ নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। কহ্লন তার কাশ্মীরের ইতিহাস ‘রাজতরঙ্গিণীতে’ রাজা মিহিরকুলের নিষ্ঠুরতার কাহিনী বর্ণনা করেছেন: পাহাড়ের চুড়া থেকে হাতিগুলোকে নিচের উপত্যাকায় ফেলে দেয়া হতো এবং এতে মিহিরকুল খুব আমোদ পেত।’ (জওহর লাল নেহরু: বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ, পৃ ১০১) তিনি ভারতবর্ষের সমস্ত অঞ্চল থেকে বৌদ্ধধর্ম উঠিয়ে দেয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। তিনি প্রায় ১ হাজার ৬০০ এর মতো বৌদ্ধ সংঘারাম ও স্তূপ ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেন এবং প্রায় ৩ লাখ প্রথম শ্রেণির নাগরিককে সিন্দু নদীর তীরে হত্যা করে। আরও ৩ লাখ লোককে হত্যা করে নদীর পানিতে ডুবিয়ে। আরও ৩ লাখ লোককে তার সেনাবাহিনীর মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেয় দাস হিসেবে। গান্ধার রাজ্যের প্রধান অমাত্য ও মন্ত্রিগণ তাদের নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে প্রজাদের প্রাণ রক্ষার আবেদন জানায়। কিন্তু জঙ্গি সম্রাট মিহির কুল তাদের অনুরোধে কর্ণপাত করেননি। (হিউয়েন সাঙ ভ্রমণ কাহিনীঃ পৃ ৩১-৩২)
সম্রাট অশোকের সন্ত্রাস : রক্তাক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার আরেকজন নায়ক হলো সম্রাট অশোক। ইসায়িপূর্ব তৃতীয় শতকে কলিঙ্গ বা উড়িষ্যায় রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় শ্রী অশোক। অশোকের যতই মাহাত্ম্য প্রচার করা হোক না কেন লাখ লোকের রক্তপাতের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
রোম সম্রাটের জঙ্গিবাদ : ইসায়ি প্রথম শতকে টিটাস ছিলেন স্বৈরাচারী রোম সম্রাট। তিনি ৭০ খ্রিষ্টাব্দে বলপ্রয়োগে জেরুজালেম জয় করেন। এ সময়ে গণহত্যায় ১ লাখ ৩৩ হাজার লোক নিহত হয়। ৭৬ হাজারকে বন্দি করে দাসে পরিণত করা হয়। হাজার হাজার লোককে বলপূর্বক মিসরীয় খনিতে কাজের জন্যে পাঠানো হয়। বিভিন্ন শহরে এম্পিথিয়েটার ও কারোসিয়ামে হিংস্র পশুদের মুখে ঠেলে দেয়ার জন্যে অথবা তরবারির খেলার শিকারে পরিণত করার জন্যে হাজার হাজার লোককে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদেহী সুন্দরী বালিকাদেরকে বিজয়ীদের জন্যে বেছে নেয়া হয়। জেরুযালেম শহর ও হায়কাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। তারপর ফিলিস্তিনে ইহুদি প্রভাব এমনভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় যে দু’হাজার বছর ধরে তাদের আর মাথা তুলবার সুযোগ হয়নি। (আবুল আলা: সীরাতে সরওয়ারে আলম ২য় খণ্ড, পৃ ১৩)
রাজা শশাঙ্ক ও কুমারিল ভট্টের জঙ্গি-সন্ত্রাস : গৌড়রাজ্যে আরেকজন জগদ্বিখ্যাত সন্ত্রাসী হলো ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসক রাজা শশাঙ্ক। তিনি তার পুরো শাসনামলে বৌদ্ধ নিধনে নিযুক্ত ছিলেন। নামজাদা ভাষাবিজ্ঞানী কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন রায়বাহাদুর বলেন, ‘কর্ণসুবর্ণের রাজা শশাঙ্কের আদেশ ছিলো-সেতুবন্ধ হতে হিমগিরি পর্যন্ত যত বৌদ্ধ আছে বালক-বৃদ্ধ-নির্বিশেষে তাদেরকে হত্যা করবে, যে না করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। অষ্টম শতাব্দিতে কুমারিল ভট্ট ‘বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য’ এই মত প্রচার করেন; কিন্তু বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায়ের প্রতি হিন্দুদের যে কী ভীষণ আক্রোশ ছিলো, তা দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসে বিশেষভাবে দৃষ্ট হবে। মাদুরার রাজা অষ্টম শতাব্দিতে কবি ও সাধু সম্বন্দরের সম্মতিক্রমে ৮ হাজার গোঁড়া জৈন পন্ডিতকে শূলে চড়িয়েছিলেন। (Eight thousand of the stuborn Jains with Sambandar’s consent were impaled alive’’-`Hymns of the Tamil Saivite saints’. by- F. Kingsbury) “শঙ্কর বিজয়ে উল্লিখিত আছে- রাজা সুধন্বা অসংখ্য জৈন ও বৌদ্ধ পন্ডিতের মস্তক উলূখলে নিক্ষেপ করে ঘোটনদণ্ডে নিষ্পেষণ পূর্বক তাদের দুষ্টমত চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিলেন। অষ্টম শতাব্দিতে গাড়োয়ালের হিন্দু রাজা- তিব্বত রাজা লাঃলামা ইয়োসী- হোতকে বৌদ্ধধর্ম ত্যাগ করাবার চেষ্টায় তাঁকে যেরূপ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন, তার বর্ণনা শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র দাস প্রণীত ‘Indian Pandits in the land of Snow’ নামক পুস্তকে পাওয়া যাবে।’ (শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন: প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান, পৃ ১২) তিনি আরও লিখেছেন, ‘বৌদ্ধধর্মকে পরাভূত করে হিন্দুরা যেভাবে বৌদ্ধ-ইতিহাস লোপ করেছিলেন, তা অকথ্য অত্যাচার-লাঞ্ছিত। হর প্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় লিখেছেন, ‘‘বৌদ্ধ পারিভাষিক শব্দগুলো জনসাধারণের ভাষা হতে অন্তর্হিত হয়েছে। যে জনপদে (পূর্ববঙ্গে) ১ কোটির অধিক বৌদ্ধ এবং ১১৫০০ ভিক্ষু বাস করত সেখানে একখানি বৌদ্ধগ্রন্থ ৩০ বছরের চেষ্টায় পাওয়া যায় নাই। যে পূর্বভারত বৌদ্ধধর্মের প্রধান লীলাক্ষেত্র ছিলো, তথায় বৌদ্ধধর্মের যে অস্তিত্ব ছিলো, তাও ইউরোপীয় প্রত্নতাত্ত্বিকগণের চেষ্টায় অধুনা আবিষ্কার করতে হয়েছে।’’ (Discoveries of living Buddhism in Bengal, P 1)  এদিকে শত শত ডোমাচার্য্য ও হাড়ি জাতীয় তান্ত্রিক বৌদ্ধশ্রমণকে হিন্দুরা চূড়ান্ত শাস্তি দিয়ে সমাজের অতি অধস্তন স্থানে নিপতিত করেছেন। ... হিন্দুরা বৌদ্ধকীর্তি একেবারে লোপ করাবার জন্য যেখানে সেখানে তাদের প্রাচীন কীর্তি ছিলো, তা মহাভারতোক্ত পঞ্চ-পাণ্ডব অথবা আর কোনো হিন্দু রাজ-রাজড়ার সম্পর্কিত এরূপ পরিকল্পনার দ্বারা বৌদ্ধাধিকারের চিহ্নমাত্র লোপ করবার চেষ্টা পেয়েছিলেন। (ওই; পৃ ১২-১৩)
ক্রুসেড যুদ্ধে ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের সন্ত্রাস : ক্রুসেডের যুদ্ধের নামে পশ্চিম ইউরোপের খৃস্টানরা বিশাল বাহিনী নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গণহত্যা চালায়। ১০৯৭ সালে ৭ লাখ খৃস্টান সেলজুক তুর্কিদের রাজধানী নিসে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তা দখল করে ১০৯৮ সালে এন্টিয়ক দখল করল। সেখান থেকে সারাত উল নোমান শহর দখল করে ১ লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করল। ১০৯৯ সালে জেরুজালেম দখল করে মসজিদের ভেতরে ৭০ হাজার মানুষকে হত্যা করল আত্মসমর্পণের পরও। জেরুজালেমে ক্রুসেড কিংডম প্রতিষ্ঠিত হলো। (ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক: ক্রুসেডের গণহত্যা অতীত বর্তমান, পৃ ১৩০) এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহর লাল নেহ্রু বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ধর্মযোদ্ধাদের একটি দল নর্মান্ডিদেশের বুইলোটবাসী গডফ্রে নামক একজন সেনানায়কের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইনে গিয়ে পৌঁছয়। তাদের আক্রমণ তুর্কিরা প্রতিরোধ করতে না পারায় জেরুজালেম খৃস্টান কবলিত হয়। তারপর এক সপ্তাহ ধরে চলে এক অতি বীভৎস হত্যাকাণ্ড। একজন ফরাসি প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ‘‘মসজিদের সামনে রক্তের নদী বয়ে গিয়েছিল। রক্তের স্রোতে হাঁটু অবধি ডুবে যেতে লাগল। রক্তের নদী ঘোড়ার লাগাম অবধি উঠেছিল।’’ গডফ্রে জেরুজালেমের রাজা হয়ে বসলেন।’ (জওহর লাল নেহরু: বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ, পৃ ১৭৮-১৭৯) তিনি আরও বলেন, ‘অবিরাম রক্তের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল এশিয়া মাইনর ও প্যালেস্টাইন।’ (ওই; পৃ ১৭৭) ধর্মযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য দলে দলে লোক এগিয়ে এল। তাদের ইতিহাস পড়লে দেখি এই ধর্মযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকে এমন সব নীচ ও জঘন্য অপরাধ করেছে যার কথা শুনলেও কানে আঙুল দিতে হয়।  কেউ কেউ এমনভাবে লুটতরাজ ও অন্যান্য পাপকর্মে লিপ্ত ছিল যে তারা প্যালেস্টাইনের ধারে কাছেও পৌছতে পারে নাই। (ওই; পৃ ১৭৮)
মঙ্গল শাসক হালাকু খানের উগ্রবাদ : মানব সভ্যতার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দুর্ঘটনার জন্ম দেয় মঙ্গল রাজনীতিবিদ হালাকু খান। কারণ হালাকু খানের বর্বরতায় ধ্বংস হয় অষ্টম-ত্রয়োদশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ জ্ঞান প্রদীপ বাগদাদ নগর। ১২৫৮ সালে হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ আক্রমণ ও ধ্বংস না হলে আজও সমগ্র দুনিয়া মুসলিমদের দ্বারা শাসিত হত। ওই যুগে সারা বিশে^র জ্ঞান বিজ্ঞানের রাজধানী ও কেন্দ্রভূমি ছিলো বাগদাদ। সেই পুস্তকরাজি ধ্বংস এবং শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, জ্ঞানী গুনী, বিজ্ঞানীদের প্রাণ হরণ করায় মুসলিমরা এর হৃদ গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।
সমাজবিজ্ঞানের জনক ইবনে খালদুনের তথ্যমতে, এ সময় বাগদাদে ২০ লাখ মানুষের বসবাস ছিলো। এরমধ্যে ১৬ লাখ হত্যা করে হালাকু খাঁ। (ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক: ক্রুসেডের গণহত্যা অতীত বর্তমান, পৃ ১৭০) আলেপ্পো শহরে ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করে মঙ্গলরা এবং সেখানকার ১০ হাজার নারী ও শিশুকে দাস হিসেবে বিক্রি করে মঙ্গলরা। হারান শহরের নাগরিকরা আত্মসমর্পণ করে এই শর্তে যে, তাদের শহর ছেড়ে দেয়া হবে। বর্বররা তবুও শহর ছেড়ে ধ্বংস করে ফেলল। এমনকি শিশুদের মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করল। (ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক: ক্রুসেডের গণহত্যা অতীত বর্তমান, পৃ ১৬৩)
বাগদাদ ধ্বংসের নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে ব্রাউন বলেন, ‘সম্ভবত কখনোই এত বড় ও সমৃদ্ধশালী একটি সভ্যতা এত দ্রুত অগ্নিশিখায় বিধ্বস্ত ও রক্তধারায় নিশ্চিহ্ন হয়নি।’ মোঙ্গলদের নিষ্ঠুর আক্রমণে অসংখ্য মসজিদ, প্রাসাদ, অট্টালিকা প্রভৃতি নিশ্চিহ্ন হলো। ইসলামের ইতিহাসে বাগদাদ ধ্বংসের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। এ সম্বন্ধে পি, সাইকস বলেন, ‘যে ভয়ংকর ধ্বংসলীলা মুসলিম রাজ্যসমূহের এবং পরোক্ষভাবে সমগ্র দুনিয়ার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে দিয়েছিল, তার প্রকৃতি অনুধাবন করা কষ্টকর এবং অতিরঞ্জিত করা অসম্ভব।’ সৈয়দ আমীর আলীর মতে, ‘বাগদাদ আক্রমণে যে ধ্বংসলীলা অনুষ্ঠিত হয় তা থেকে অন্যান্য শহরে কী ঘটেছিল তার আভাস পাওয়া যায়। তিনদিন ধরে শহরের পথে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল এবং তাইগ্রিস নদীর পানি মাইলের পর মাইল রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল। (উদ্ধৃতি: দৈনিক সংগ্রাম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১১)
বাংলাদেশে পর্তুগিজ ও মগদের প্রলয়কাণ্ড : দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পাঠ্যপুস্তকে পর্তুগিজ বণিক ভাস্কো দা গামাকে ‘নায়ক’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। অথচ সে ছিলো একজন ডাকাত, খুনি, খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ও জলদস্যু। ভারতীয় ঐতিহাসিক সুরজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘ভাস্কো দা গামার নেতৃত্বে পর্তুগিজ বাহিনী ভারতবর্ষে অশান্তির হাওয়া বয়ে আনে। পর্তুগিজরা ক্যাথলিক খ্রিস্টান।... কালিকটে পৌঁছে গামা রাজ্যের সমস্ত মুসলিমের বহিষ্কার দাবি করেন। স্বভাবতই এ রকম অদ্ভুত দাবির কাছে জামেরিন (কালিকটের রাজা) নতি স্বীকার করেননি। ফলে গামার হিংস্র আক্রোশ এসে পড়ল কালিকটের ওপর, জাহাজ থেকে তিনি সারাদিন গোলাবর্ষণ করে শহরের যতখানি ক্ষতি করা সম্ভব করে চলে গেলেন। যাওয়ার পথে তিনি দেখলেন আরব সওদাগরদের দু’টি বাণিজ্য জাহাজ।
প্রথমে গামা জাহাজ দু’টি লুট করলেন, তারপর তার সৈন্যদের জাহাজের সকল নাবিকদের হাত, কান ও নাক কেটে ফেলার নির্দেশ প্রদান করলেন। তাদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৮০০। অতপর তাদেরকে শক্ত রশি দিয়ে বেঁধে মাড়ি থেকে দাঁত তুলে ফেলা হলো। শেষে তাদেরকে জাহাজসহ পুড়িয়ে দেয়া হলো।’ (সুরজিৎ দাশগুপ্ত: ভারতবর্ষ ও ইসলাম, পৃ ১৩৩-১৩৫) কালিকটের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও পরবর্তীতে পর্তুগিজরা দস্যুবৃত্তি করে। তাদের সাথে যোগ দেয় আরাকানি বৌদ্ধ মগরা। (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ