খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সম্পদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইনানুগ ব্যবস্থার ঘোষণা বিএনপির
স্টাফ রিপোর্টার : বিদেশে বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সম্পদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কল্পিত পাঁচারকৃত সম্পদের বর্ণনা ও কল্পিত কাহিনী প্রকাশ করেছেন। যা সর্ববো মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে অলীক মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জনগনকে বিভ্রান্ত করবার এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের হেয় প্রতিপন্ন করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। বেআইনি মিথ্যা তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন। এই মানহানিকর তথ্য প্রচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে আমরা বাধ্য হবো।
আপনারা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলছি তো এই বক্তব্য উইথড্র (প্রত্যাহার) করতে হবে। অবশ্যই আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমরা অবশ্যই দিচ্ছি। আমাদের পুরো বক্তব্যের মধ্যে সেটা এসছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ও তার পাল্টা অভিযোগ এর প্রসঙ্গ টেনে আপনাদের কাছে প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, আমরা হিসাব রাখছি তো। সময় সুযোগ যখন আসবে তখন সেটা প্রমাণসহ দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাম্বোডিয়া সফর শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ গড়ার নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এই প্রেক্ষিতে বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল সকালে জরুরী সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।
আইনানুগ যে ব্যবস্থার কথা বলেছেন তা কি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইনানুগ ব্যবস্থা বলতে যা বুঝায় তাই বুঝিয়েছি। আমরা বলেছি যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এবং বক্তব্য প্রত্যাহার করতে। তার যদি না করেন তাহলে আইনের যে বিধান আছে, সে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য তো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে। আপনি নামটা তো বলেননি আবারো প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, নামও বলেছি। আপনি প্রথমে দেখেন নাম আছে। আমার বক্তব্যের শুরুতেই বলেছি। আপনি দেখুন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আল-জাজিরাসহ যে কয়েকটি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়েছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর তো কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আমরা গুগল সার্চ করেছি, আমরা যোগাযোগা করেছি। আমরা সৌদি আরবে যোগাযোগ করেছি, এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।
তাহলে কী আপনারা বলছেন যে ওইসব গণমাধ্যমে এই ধরণের সংবাদ প্রকাশ হয়নি? জবাবে তিনি বলেন, হয়নি। কানাডার যে রেফারেন্স দেয়া হয়েছে- এর তো কোনো অস্তিত্ব নেই আমাদের ধারণা। আমরা খুঁজে পাইনি।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির বিষয়টি না উঠায় প্রধানমন্ত্রীর উস্মার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের চেয়ারপার্সন ও তার ফ্যামিলির বিরুদ্ধে একটা ক্যাম্পিইন চালানো শুরু হচ্ছে। এটা আপনাকেও আঘাত করা হয়েছে যেহেতু কোনো আপনারা ভুঁয়া তথ্য দেননি, সম্প্রচার করেননি। সেজন্য আপনাদেরকে রসগোল্লার খাওয়ার কথা বলা হয়েছে, কার্ড পেয়েছে কী, কত টাকার শপিং করবেন সেটা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ খন্ডন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ধরণের মিথ্যা- ভিত্তিহীন-বানোয়াট বক্তব্য শুধু অশালীন নয়, এটা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাঁচার অথবা বিনিয়োগের কোনো অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার ও শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার তন্য তন্য করে সারা বিশ্বে খোঁজ করেও আজ পর্যন্ত কোনো সম্পদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সম্পদের ‘কল্পকাহিনী তৈরি করে জোর করে গণমাধ্যমে দিয়ে তা প্রচারের অপচেষ্টা করছেন’ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা শুধুমাত্র শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়নতা, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা, অন্তঃসার শূণ্যতা ও দেউলিয়াপনাই প্রমাণ করে। প্রধানমন্ত্রীর এই ধরণের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু রাজনীতিকে কুলষিত করছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদন সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারনা সৃষ্টি করছে।
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এসব বানোয়াট, মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এসব মানহানিকর মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে আগামীতে এই ধরণের অশালীন, রুচিবিবর্জিত বানোয়াট বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকুন।
কাঁচের ঘরে বসে ঢিল না ছুঁড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কাঁচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছুঁড়বেন না। উন্নয়নের মেগা প্রজেক্টের নামে যে মেগা লুট করছেন তা জনগন জানে। পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর আনবিক শক্তি প্রকল্প, পায়রা বন্দর এক্সপ্রেস ওয়ে, এ্যালিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, ভিআইপি স্যাটেলাইট স্টেশন, প্রতি সেতু-সড়ক-মহাসড়কের প্রতিটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের যে অভিযোগ উঠেছে তার হিসাব জনগন নিচ্ছে। এদেশের পত্র-পত্রিকায়, বিদেশের পত্র-পত্রিকায় আপনাদের দলের নেতা-মন্ত্রী-পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ হতে শুরু করেছে।তিনি বলেন, কানাডার বেগমপাড়া, বৃটেন, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বেলারুশ, সুইস ব্যাংক, পানামা অফসোর ইনভেস্টমেন্টের তালিকায় আপনাদের অনেকের নাম উঠে আসছে। ফ্লোরিডা, ওয়াশিংটন ডিসি সিয়েটর, বাফেলো, কানাডাসহ আমেরিকার ব্যয়বহুল শহরগুলোতে কাদের সন্তানদের ও পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি ও সম্পদ কেনা হয়েছে তা হিসাব জনগন জানছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এই দুর্নীতির মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা কারা লুট করেছে জনগন তারও হিসাব রাখছে।
ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ও সম্পদ দখলের নানা চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দুই বার পূঁজিবাজার লুট করে অসংখ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। সমাজের প্রতিটি রুদ্ধে দুর্নীতির পাকা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমি-বসতবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাসকদের লোকেরা দখল করছে প্রতিদিন। সাধারণ মানুষ, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। দেশকে জাতিকে জিম্মি করে দুর্নীতির এই অভিযান আপনরাই(ক্ষমতাসীন) চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের মুখে সুনীতি, সুশাসন, সততা শুধু বেমানান ও হাস্যকর।
জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষনার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প জেরুজালমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানাই।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাংগঠিনক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।