শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ক্ষমতাসীন আ’লীগ বিরোধী নেতা কর্মীদের গুম ও হত্যা করছে

মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: ক্ষমতাসীন আ’লীগ বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম ও হত্যা করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক নর্মগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে, মানবাধিকার জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে শুধুমাত্র শক্তির জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাদের (সরকার) সঙ্গে যারাই ভিন্নমত পোষণ করছে, তাদেরকে হয় হত্যা করছে না হয় গুম করছে। গতকাল রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি একথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপি এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে বিএনপি মহানগর, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, ছাত্র দল, জাসাসসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে ‘গুম’ হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের ‘নিখোঁজ’ থাকা স্বজনের ছবি নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এদের মধ্যে বিএনপি’র এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হীরু, সাজেদুল ইসলাম সুমন, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমানসহ অনেকের আলোকচিত্র দেখা গেছে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদের পরিচালনায় এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব  সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ‘গুম’ হওয়া সাইফুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আফরোজা আব্বাস, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন,  নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শফিউল বারী বাবু, আনোয়ার হোসেইন, কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা, এসএম জাহাঙ্গীর, শরীফ হোসেন, গোলাম মাওলা শাহিন, রাজীব আহসান, হাফেজ আবদুল মালেক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনে দলীয় পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের কাছে একটা হিসাব আছে আমি জানাতে চাই। এটা আমাদের পার্টির হিসাব। আমাদের শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩২৩, মামলার আসামীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ২৩৮, মোট খুনের সংখ্যা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে সরাসরি ৫২০ জন, অপহরণের সংখ্যা ৭৪৭ এবং এখন পর্য়ন্ত নিখোঁজ আছেন ১৫৭ জন। নির্যাতনের শিকার ৩৭ লক্ষ এবং আজকেও (গতকাল) স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল(আবদুল কাদের জুয়েল) ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম (আকরামুল হাসান) এ্খনো জেলের মধ্যে রয়েছে।
দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  আজকে সারা দেশ কারাগারে, মামলা, হত্যায়, খুনে জর্জরিত হয়ে গেছে। একটি পরিবার নেই যে তারা এখন পর্য্ন্ত শান্তিতে রয়েছে। এর একটি মাত্র কারণ তারা (সরকার) জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে।
নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক দার্শনিক কবি ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ মাস পরে গত শনিবার প্রেসের সামনে এসে বলেছেন, তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, তাকে গুম করার চেষ্টা করা হয়েছিলো, তাকে বাধ্য করা হয়েছিলো তিনি যেন ওই ১৬৪‘র সই করেন তারা গুম করেনি।
শুধু ফরহাদ মজহার নয়। কয়েকদিন আগে একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত গুম হয়েছেন তিনি এখন পর্য়ন্ত ফিরে আসেননি। আপনারা দেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সেও ফিরে আসেনি, আপনারা দেখেছেন ব্যবসায়ী সেও ফিরে আসেনি। আপনাদের সাংবাদিক সহকর্মী উৎপল এখনো ফিরে আসেনি।রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারাও কেউ ফিরে আসছে না।
 দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের নামে ভাওতা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত করে একটি সংসদ গঠন করেছিলেন, আসলে সেটা আসল সংসদ নয়। বিচার বিভাগ যেখানে আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে আমরা দাঁড়াতে পারি, বিচার পেতে পারি। সেই বিচার বিভাগকেও তারা কবজা করে ফেলেছে। প্রধান বিচারপতিকে(সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। আজকে প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। আজকে মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমেই এই সরকারকে পরাজিত করে জনগনের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা বার বার বলেছি, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন করতে হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে, সেই নির্বাচন হতে হবে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে। আমাদেরকে মানববন্ধন করতে দেবেন সহজে, সভা করতে দেবেন না, আমাদেরকে দলের কনভেনশন করতে দেবেন না, কোথাও কথা বলতে দেবেন না, সেভাবে কোনোদিন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।
গণভবনের সাংবাদিক সম্মেলনে গণমাধ্যমের ওপর প্রধানমন্ত্রীর উম্মা প্রকাশের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিক ভাইদের বলতে চাই, আপনারা আজকে সব কিছু লিখতে পারেন না, সব কিছু জানাতে পারেন না- সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনাদের বকাও খেতে হয়।আজ কী দুর্ভাগ্য। সাগর-রুনি সাংবাদিক হত্যা হয়েছে এখনো তার বিচার হয়নি। অসংখ্য সাংবাদিক আজকে আহত হচ্ছেন, পঙ্গু হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন। সারাদেশে মানুষ এখন পর্যুদস্ত।
আজকে উঠে দাঁড়াতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের, পিতাদের যেন আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি, আমাদের মায়েদের ছেলেদের যেন আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি, আমারা যেন দেশে স্বস্তি, শান্তি ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে পারি সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। আজকে এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আমাদের এই শিশু-মায়েদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা চিৎকার করে বলতে চাই, আমাদের সন্তানদের, পুত্রদের, আমাদের ভাইদের ফিরিয়ে দিন। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে বাংলাদেশে শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম করা হয়নি। আজকে সরকার বাংলাদেশ থেকে মানবাধিকারকে গুম করে নিয়েছে। জাতিসংঘের কাছেও আমরা এই দাবি জানাব যে, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস ডিক্লারেশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে যে তারা দেশে মানবাধিকার রক্ষা করবে। সেটা যদি তারা(সরকার) লঙ্ঘন করে থাকে জাতিসংঘকেও সেই প্রশ্ন বাংলাদেশ সরকারের কাছে করতে হবে। সেটার যদি স্বউত্তর সরকার না দিতে পারলে তাদেরকে সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে মানবাধিকার গিয়ে পৌঁছেছে বিশ্বের সবগুলো দেশের মধ্যে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনে আজকে শীর্ষে রয়েছে। আমাদের দেশে মানবাধিকার হরনের পেছনের কারণ ক্ষমতায় দখল ও ক্ষমতায় থাকার জন্য। বর্তমান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা আজকে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। কয়েকদিন আগে আওয়ামী ফ্যাক্টরি থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। জনপ্রিয়তা হারিয়ে তারা মিথ্যাচারের একটি ফ্যাক্টরি করে ক্ষমতা থাকতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এসব কথা বিশ্বাস করে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ