মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পুলিশ ও পিবিআই’র পৃথক প্রতিবেদনে খুলনার নিখোঁজ আইনজীবী নিখিল মোহন্তের জট খোলেনি

খুলনা অফিস : খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য নিখোঁজ এডভোকেট নিখিল কুমার মোহন্তের খোঁজ মেলেনি পুলিশ ও পিবিআই’র পৃথক তদন্তে। দু’টি সংস্থাই দায়সাড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। গত ৪ ডিসেম্বর মহানগর হাকিমের আমলী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে এ প্রতিবেদন বিষয়ে কোন আদেশ দেননি অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ। ওই প্রতিবেদনেও নিখোঁজ আইনজীবীর কোন তথ্য নেই। অন্যদিকে অভিযুক্তদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে দায়সাড়া প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ করছেন নিখোঁজ আইনজীবীর স্ত্রী পারুল মোহন্ত। নারাজি পিটিশন দাখিল করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তারা অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে হাসের মাংস দিয়ে খাওয়া দাওয়া করেছেন এবং এ বিষয়ে তাদের কোন সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। 
জানা যায়, ১৯৯২ সালের পর তার স্বামী বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার চুনখোলা গ্রামের মৃত কৃষ্ণধন মোহন্তের পুত্র নিখিল মোহন্ত খুলনায় আইন পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন।
২০১৩ সালের ১৬ জুন মৌলভীপাড়া টিবি বাউন্ডারী রোডের বাড়ি নম্বর ৬’র ভাড়া বাসা থেকে প্রতিদিনের মতো কর্মস্থল খুলনা আদালতে যান। এরপর তিনি সকাল ১০টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির অপর একজন সদস্যকে বলেন, আমি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। সেদিনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে পরদিন ১৭ জুন তিনি নিরুপায় হয়ে খুলনা সদর থানা পুলিশের শরণাপন্ন হন। সেদিনই পুলিশ এডভোকেট নিখিল কুমার মোহন্ত নিখোঁজের ঘটনায় একটি জিডি রেকর্ড করেন (নং-৭৮৩)। এছাড়া একই দিনে তিনি তার স্বামী নিখোঁজের বিষয়টি লিখিতভাবে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দকে অবগত করেন। পরে তিনি বাগেরহাটে শ্বশুর বাড়িতে খুঁজতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি এডভোকেট নিখিলের নিখোঁজের বিষয়টি জানতে চাইলে দেবর বিবেক মোহন্ত বলেন, নিখিল এসেছিল কিন্তু সন্ধ্যায় আবারো খুলনার উদ্দেশ্যে ফিরে গেছেন। পারুল মোহন্ত খুলনায় ফিরে এলেও স্বামীকে আর খুঁজে পাননি।
তিনি চলতি বছরের ৭মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে তার স্বামী এডভোকেট নিখিল কুমার মোহন্তকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন (নং সিআর ১৮৭/১৭)। মহানগর হাকিম মো. আমিরুল ইসলাম এ বিষয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭ ও ১৫৮ ধারায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ২০ মার্চ এ বিষয়ে আদালতকে অবগত করারও আদেশ দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই সুজিত কয়েক দফা সময় প্রার্থনার পর অবশেষে আদালতে একটি তদন্ত রিপোর্ট দেন। ওই রিপোর্টে আইনজীবী নিখিলের নিখোঁজের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে দায়সাড়া রিপোর্ট দাখিল করেন। এ ঘটনায় আইনজীবী নিখিলের স্ত্রী আদালতে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করলে আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে পিবিআই পরিদর্শক শেখ আবু বক্কর সিদ্দিক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তবে এই প্রতিবেদনের ভাষায়ও আইনজীবী নিখিল মোহন্তের নিখোঁজের বিষয়ে কোন তথ্য নেই।
এদিকে চার বছর শেষেও স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় এখনও প্রহর গুণছে স্ত্রী পারুল মোহন্ত। হাতে শাখা, কপালে সিঁদুর পরে এখনো প্রতিদিন অপেক্ষা করছেন তিনি। নগরীর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার প্রফেসর গাউসের বাড়ির একটি ডোবা নর্দমার পাশে একটি ছোট্ট খুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ