বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারি

 

খুলনা অফিস : খুলনা জিলা স্কুল ও সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। দুই দফায় ফলাফল ঘোষণা করায় এ দুটি স্কুলে ১৩৩ জন ভর্তি থেকে বাদ পড়েছে।  প্রথম দফায় ঘোষিত ফলাফল স্থগিত করে গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দফায় পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বাদ পড়া শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। এ সময় বাদপড়া কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা খুলনা প্রেসক্লাবে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। 

এদিকে, গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়মের জন্য জেলা প্রশাসক ও পরীক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এ সময় অভিভাবকরা বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার দাবিতে আজ রোববার জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান এবং হাইকোর্টে রিট করাসহ আন্দোলনের হুমকি প্রদান করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সেলিম হোসেন বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর খুলনা জিলা স্কুল ও সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির জন্য ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী ওই রাতেই ফলাফল ঘোষণার কথা থাকলেও ফলাফল ঘোষণা করা হয় ২১ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৬টায়। ঘোষিত ফলাফলে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য ফরম বিতরণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ করে ২১ডিসেম্বর রাতে খুলনা জেলা প্রশাসক ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেন। পুনরায় শনিবার সকাল ৯টায় স্থগিত থাকা ফলাফল ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। ঘোষিত ওই ফলাফলে খুলনা জিলা স্কুলের দিবা বিভাগের ১২০ জনের মধ্যে ৫৭ ছাত্র বাদ পড়ে। একইভাবে সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১২০ জনের মধ্যে ৭৬ জন ছাত্রী বাদ পড়ে। ফলাফল ঘোষণার পর পূর্বে উত্তীর্ণ হওয়া শিশুরা পরবর্তীতে ঘোষিত ফলাফলে তাদের নাম না থাকায় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে খুলনা প্রেস ক্লাবে জমায়েত হতে থাকেন শিশু ও অভিভাবকরা। বিকেল সাড়ে তিনটায় অভিভবকরা শিশুদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। 

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিভাবকরা ফলাফল ঘোষণায় খুলনার জেলা প্রশাসক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া কোমলমতি শিশুদের ফলাফল নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। তারা বলেন, আমাদের সন্তানদের এ বছর অন্য কোনো ভালো স্কুলে ভর্তিও আর সুযোগ নেই। তাদেরর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য জেলা প্রশাসক দায়ী। 

সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পূর্বে ঘোষিত ফলাফল বহাল রাখার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন করবেন বলে অভিভাবকরা বলেন। আন্দোলনের অংশ হিসাবে আজ রোববার বেলা ১১টায় অভিভাবকরা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান এবং আগামী ২৬ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করবেন বলে জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে পবিত্র কুমার ম-ল, সাইফুজ্জামান, রোজিনা খাতুন খাতুন, আসলাম হোসেন, আরমান হোসেন, হাফিজা খাতুন, শামীমা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, আলমগীর কবির, আলী হোসেন, অশোক দাস, আফরোজা খানম, রাবেয়া আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক মো. অমিন উল আহসান বলেন, কোনো প্রকার দুর্নীতি বা অনিয়মের প্রশ্নই ওঠে না। ট্যাবুলেশন শীট থেকে ফলাফল কম্পিউটারে আপলোড করার সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে ফলাফল ভুল হয়ে যায়। যে কারণে তা স্থগিত করা হয়। পরে সঠিকভাবে রেজাল্ট তৈরি করে তা শনিবার সকালে প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, স্থগিত হওয়ার আগে ঘোষিত ফলাফল পেয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আনন্দ প্রকাশ করে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের মিষ্টি বিতরণ করেন। তারপর ফলাফল স্থগিত ও পরবর্তীতে প্রকাশিত ফলাফলে পূর্বের শিক্ষার্থীদের নাম না থাকায় তারা দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ