খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি -আইনজীবী
# চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সময়েই খালেদা জিয়াকে খালাস দেয়া উচিত ছিল # যদি বলা হয় কেস্ট বেটাই চোর তাহলে লাভ হবে না- খন্দকার মাহবুব # আজ আবার আদালতে যাবেন বেগম জিয়া # গাড়িবহরের পেছন থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। খালেদা জিয়াকে চোর বানানোই এ মামলার উদ্দেশ্য। আমরা যতই বলি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই কোনো লাভ হবে না, দিন শেষে যদি বলা হয় ‘কেস্টা বেটাই চোর’। আরেক আইনজীবী আবদুর রেজাক খান আদালতকে বলেন, এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সময়েই খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা বিশেষ কারণে করা হয়নি। আমি আশা করি স্বাধীনভাবে আপনি ন্যায়বিচার করবেন এবং তিনি খালাস পাবেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বকশীবাজারে সরকারি আলীয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের সামনে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং আবদুর রেজাক খান এসব কথা বলেন।
আদালতকে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। খালেদা জিয়াকে চোর বানানোই এ মামলার উদ্দেশ্য। বিজ্ঞ আদালত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের জন্য যিনি টাকা অনুদান দিয়েছেন, এই টাকা কিভাবে ব্যয় করা হবে, সেই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি। এই টাকা কে দিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে সেই বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বেগম জিয়ার নিকট এসব টাকা গচ্ছিতও ছিল না। জিয়া অরফানেজের কোনো টাকা খালেদা জিয়া নিজে উত্তোলন করেননি বা ব্যয় করেননি। সুতরাং তিনি এ মামলায় খালাস পাওয়ার যোগ্য।
খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, এই মামলার সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে; জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কাছে কোনো টাকা গচ্ছিত ছিল না। কিন্তু আমরা যতই বলি সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই, লাভ হচ্ছে না। যদি দিন শেষে বলা হয় ‘কেস্টা বেটাই চোর’।
এর আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজাক খান আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালতে আসেন। মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত আদালত শুনানি গ্রহণ করেন।
আবদুর রেজাক খান আদালতকে বলেন, সেনাসমর্থিত সরকারের সময় এ মামলা হয়। এ সরকারের আমলেও তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা দেয়া হয়েছে। মামলার ভারে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে জনসমক্ষে হেয় করার জন্য মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা, যা বিচারের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।
খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা আদালতকে আজকেও পড়ে শোনান রেজাক খান। পরে রেজাক খান সাংবাদিকদের বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জড়িত ছিলেন না। মামলার এজাহারে তার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য নেই। কোনো সাক্ষীও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। খালেদা জিয়া এই ট্রাস্টের টাকা উঠিয়েছেন বা আত্মসাৎ করেছেন এরকম কোনো তথ্যের প্রমাণ দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে দেখানো সম্ভব হয়নি। কিছু ছায়া প্রমাণ দিয়ে মামলা সাজানো হয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই। সারাদেশে এত মামলা থাকতে দুদক এই মামলার বিষয়ে এত আগ্রহী কেন সে প্রশ্নও রাখেন আবদুর রেজাক খান।
এই মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি উল্লেখ করে আবদুর রেজাক খান বলেন, আশা করি খালেদা সকল অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন। এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সময়েই খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা বিশেষ কারণে করা হয়নি। আমি আশা করি স্বাধীনভাবে আপনি ন্যায়বিচার করবেন এবং তিনি খালাস পাবেন।
রেজাক খানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। আজ বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মতো তিনি খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।
আদালতের দিনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায়, কোনো বিষয়েই খালেদা জিয়ার বিপক্ষে বলা হয়নি। তিনি যে জড়িত ছিলেন না, সেটাই বরং প্রমাণিত হয়।
সংবিধান অনুযায়ী ওই লেনদেনের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা প্রাইভৈট ট্রাস্ট। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য, বেগম জিয়ার চরিত্র হননের জন্য, তাকে জনগণের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য দূরভিসন্ধিমূলকভাবে এই মামলা দায়ের করা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামীরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নেতাকর্মী আটক
এদিকে আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের পেছন থেকে নেতাকর্মী সন্দেহে কমপক্ষে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তারা নিজেদের পথচারী বলে দাবি করেছেন। বেলা আড়াইটায় হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় এলে শত শত নেতাকর্মী স্লোগান দিতে দিতে তার গাড়ি বহরে যোগ দেন। মৎস্যভবনের সামনে এলে গাড়িবহরের পেছন থেকে বিএনপি-ছাত্রদল নেতাকর্মী সন্দেহে বেশ কয়েকজন যুবককে আটক করে ভ্যানে তোলে পুলিশ।
এসময় আটককৃত অনেকে আহাজারি করেন তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তারা পুলিশ সদস্যদের হাত-পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলেন- তারা সাধারণ পথচারী। এক যুবক পুলিশ সদস্যদের বলেন, স্যার আমি গুলিস্তান যাচ্ছি। আমি একজন পরীক্ষার্থী। আমার সামনে পরীক্ষা। প্লিজ দয়া করুন স্যার, আমাকে ছেড়ে দিন। পুলিশ সদস্যরা তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চান। এসময় পুলিশের এক কর্মকর্তা আটককৃতদের দ্রুত ভ্যানে তোলার নির্দেশ দেন। মৎস্য ভবনের সামনে থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরের পেছনে থাকা অন্ত চার যুবককে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়।