কালিয়াকৈরে কসমেটিক্স কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কালিয়াকৈর সংবাদদাতা : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জামালপুর এলাকায় এফএস কসমেটিক্স লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করেছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রকাশ করে।
এ অগ্নিকাণ্ডে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ম দিনে ৫ জনের মৃত্যু হয়।
১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকা-ে কারখানায় কর্মরত ১৫ শ্রমিক দগ্ধ হয়। পরেদিন ভোরে হাসপাতালে শেফালী আক্তার (৩০) নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়।
হাসপাতালে ভর্তির ৫ দিন পর সোমবার ভোরে নাজনীন বেগম (২৬) ও ইসমত আরা (৩০) নামে দুই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। রোববার রাতে আব্দুর রহিম নামে এক শ্রমিককের মৃত্যু হয়। নিহত নাজনীন উপজেলার কুয়ারচালা (বারেক মার্কেট) এলাকার অগ্নিকা-ে নিহত আঃ রহিম এর স্ত্রী। ইসমত আরা উপজেলার জালুয়াভিটি এলাকার আঃ সাত্তারের স্ত্রী।
২০ ডিসেম্বর রাতে মারা যায় কুড়িগ্রাম সদর থানার আরাজি পলাশবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন।
এ ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, ওই কারখানায় বিভিন্ন প্রকার কসমেটিক্স তৈরি করা হবে। কারখানায় প্রতিদিনের মধ্যে ৩৫ জন কাজ করছিল। সাড়ে ৪টার দিকে বিকট শব্দে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কারখানায় অভ্যন্তরে আগুন ধরে যায়। এসময় দৌঁড়ে কয়েকজন শ্রমিক কারখানায় আটক পড়ে দগ্ধ হয়। এপর্যন্ত ১৫ জনকে উদ্ধার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ ৮ জনকে আশঙ্কজন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ১২ ডিসেম্বর বিকেলে জামালপুর এলাকায় এফএস কসমেটিক্স লিমিটেড কারখানায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকা-ে ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কালিয়াকৈর ও জয়দেবপুর স্টেশনের চারটি ইউনিটের কর্মীরা রাত সোয়া ৭টার দিকে আগুন নেভায়। ওই আগুনে কারখানার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন (৩৮), মোসাম্মত নাজনীন বেগম (২৬), তার স্বামী আব্দুর রহিম (৩২) শেফালী বেগম (৩৬), শিল্পী রাণী (২৮), লিটন মিয়া (৩৫) ও সুমন মিয়াসহ (৩০) অন্তত ১৫শ্রমিক দগ্ধ হন। পরে তাদের মধ্যে আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় পুলিশ পক্ষ থেকে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিহত পরিবারের প্রত্যককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। নিহত ৫ জনের মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে। তাদের পূর্ণবাসন করার জন্য এস ও এস নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সাথে কথা বলা হয়েছে। বাকী একটি শিশু মিষ্টির জন্য ঢাকা থেকে একটি সংগঠন সাহায্য করবে বলে তদন্ত কমিটিকে বলেছেন। তদন্ত চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের সাহায্য করার জন্য। এ ছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।