শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সাতক্ষীরা ও যশোরে দুর্বৃত্তের হামলায় আওয়ামী লীগের ২ নেতাকর্মী হতাহত

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলীতে আহত সাতক্ষীরার সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় (ইউপি) চেয়ারম্যান ও  দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  শেখ ফারুক হোসেন রতনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্যে সাতক্ষীরা থেকে তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হতে পারে বলে পরিবার সূত্র জানায়। সাতক্ষীরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরিমল বিশ্বাস জানান, রতনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গুলী বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু গুলী বের করা সম্ভব হয়নি।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা দেবহাটা সড়কের সখিপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, চেয়ারম্যান ফারুকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেন জানান, চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন রাতে মোটরসাইকেলে সখিপুর বাজার থেকে তাঁর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিন রাউন্ড গুলী করে। এর একটি গুলী তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দারা ফারুক হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান ওসি কাজী কামাল। তবে কে বা কারা তাঁকে গুলী করেছে, তা  জানা যায়নি।
 হাসপাতালে অবস্থানরত আ’লীগ নেতৃবৃন্দ ও স্বজনরা জানান, পারুলিয়া ও সখিপুর বাজারের কাজ সেরে তার সঙ্গি গফুরকে নিয়ে মটর সাইকেলযোগে বাড়ি যাওয়ার পথে রহিমের দোকানের সামনে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলী করে চলে যায়। রাত সাড়ে নয়টায় সদর হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালে উপস্থিত দেবহাটা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি জানান, ইতিপূর্বে যারা তার উপর হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল, এ ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান জানান, গুলীবিদ্ধের খবর পেয়ে আমরা ছুটে এসেছি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আ’লীগ নেতা গুলীবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সদর হাসপাতালে জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন, জেলা আ’লীগ সভাপতি আলহাজ্ব মুনসুর আহমেদ, জেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলাহজ্ব নজরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য এ্যাডঃ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ সহ আ’লীগের বিপুল সংখ্যক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ছুটে যান।
আমাদের দেবহাটা অফিস জানায়, সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন গুলীবিদ্ধ হওয়ার খবরে সখিপুর, পারুলিয়া, গাজীরহাটে দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায় এবং তার উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রহুল কুদ্দুস জানান, তার ডান সাইড গুলীবিদ্ধ হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিল জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতনকে জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন থিয়েটারে  নিয়ে চিকিৎসা চলছে।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা ও পাশের বাগান থেকে একজোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি  ফারুক হোসেন রতন দেবহাটার সখিপুরে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে ফেলে রেখে যায়।
যশোর সংবাদদাতা : যশোরের ঝিকরগাছায় আব্বাস আলী (৪০) নামে এক আওয়ামীলীগ কর্মী খুন হয়েছেন। দলীয় কোন্দলের জের ধরে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটায়। আব্বাসকে বোমা ও ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে। আব্বাস আলী চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত হাজের আলীর ছেলে। তার এক ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন এবং আরেক ভাই আব্দুস সালাম ইউপি সদস্য।
নিহতের পরিবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের অনুসারী। আর হত্যাকারীরা যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের অনুসারী বলে স্থানীয়রা বলছেন।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার দোস্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন রাস্তার ধারে সন্ত্রাসীরা আব্বাসকে বোমা ও ছুরি মেরে আহত করে। স্বজনরা আব্বাস আলীকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় দোস্তপুরে নিজেদের নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ দেখাশুনা করছিলেন আব্বাস আলীসহ তার দুই ভাই সালাম মেম্বর ও কামাল হোসেন। হঠাৎ মির্জাপুর গ্রামের পালসার বাবুসহ ২০-২২ যুবক মোটরসাইকেলে চড়ে ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্দেশে ৮-১০টি বোমা নিক্ষেপ করে। এসময় আব্দুস সালাম ও কামাল পালাতে পারলেও মাটিতে পড়ে যান আব্বাস। এসময় সন্ত্রাসীরা আব্বাসের পেটে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আব্বাস।
এদিকে আব্বাস আলীর লাশ বাড়িতে আনার পরপরই ঝিকরগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠাতে চাইলে চড়াও হন নিহতের স্বজনরাসহ এলাকাবাসী। পরে সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদি ইমরান সিদ্দিকী ঘটনাস্থলে আসেন। তাতেও শান্ত হয়নি এলাকাবাসী।
সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদি ইমরান সিদ্দিকী বলেন, বোমার আঘাতে আহত হয়ে মারা গেছেন আব্বাস। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ