বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চেচনিয়ার গ্রোজনি এখন বিশ্বের আধুনিক মুসলিম শহর

৫ জানুয়ারি, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন : মস্কো থেকে রাশিয়ান প্রজাতন্ত্র চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে প্লেন অবতরণ করলে হিজাব পরিহিত এক তরুণী বের হয়ে আসেন।নিজের হিজাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই তরুণী এএফপিকে বলেন, ‘এখানে হিজাব পরতে আরো বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি।’  গ্রোজনির রাস্তায় অনেক মহিলা তার উদাহরণ অনুসরণ করেন এবং হিজাব পরিধান করেন। আবার অনেকে বাহু থেকে পা পর্যন্ত ঢাকতে লম্বা পোশাক পরিধান করেন; যেটি বোরখা বা আভায়া নামে পরিচিত। শহরটির মেয়র মুসলিম খুচুয়েভ বলেন, ‘আমরা নারীদেরকে হিজাব বা স্কার্ফ পরার জন্য বাধ্য করি না। কিন্তু আমরা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেই যে, এটাই হচ্ছে চেচেন ঐতিহ্য এবং যা আমাদের বিশ্বাসে আহ্বান জানানো হয়েছে।’ ২০০৭ সাল থেকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠ রমজান কাদিরোভের অধীনে রাশিয়ার উত্তর ককেশীয় প্রজাতন্ত্রে ইসলামের ভূমিকা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রোজনিতে, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দুটি যুদ্ধের পর বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর কয়েক ডজন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

রাশিয়ার বিরোধীদলীয় দৈনিক ‘নভায়া গেজেটে’ প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করে। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয় যে, সমকামীদের ওপর চেচেন কর্তৃপক্ষ নির্যাতন চালাচ্ছে। রক্ষণশীল অঞ্চলটিতে সমকামীতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কাদিরভ (৪০) বহুবিবাহের পক্ষেও তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন; যেটি রাশিয়ায় আইনের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইসলামি আইন।’  সেখানে অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্কুলেরা ছাত্ররা ইসলামের ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়গুলো অধ্যয়ন করে থাকে এবং নারীদেরকে অফিসিয়াল কাজ এবং অধ্যয়নের জন্য হিজাব পরতে উৎসাহিত করা হয়। সেখানকার আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে ইসলামের প্রচার করছে।

মালিকা (২৯) প্রতিদিন তার স্বামীর সঙ্গে মসজিদে যায়। তিনি বলেন, ‘গত দুই বা তিন বছরে এখানকার মানুষ আরো বেশি ধর্মপরায়ণ হয়ে উঠেছে।’ তিনি জানান, তিনি তার মেয়েকে ধর্মীয় নৈতিকতা সম্পর্কে নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে থাকেন। মালিকা বলেন, ‘অবশ্যই কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে উৎসাহ দেয়। একজন ধর্মপরায়ণ নারী হচ্ছেন একজন ভালো মা, একজন ধর্মীয় ব্যক্তি হচ্ছেন একজন শান্তিপূর্ণ ব্যক্তি।’

কথা বলার সময় তার মোবাইল ফোনটিতে প্রার্থনা করার জন্য আযানের এলার্ট বেজে ওঠে। যদিও তা শহরের চারপাশের মসজিদগুলো থেকে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে প্রচার করা হয়ে থাকে।  মেয়র খুচুয়েভ বলেন, ‘ধ্বংসাবশেষ থেকে গ্রোজনির আবির্ভাব। এটি এখন একটি আধুনিক মুসলিম শহর, ইসলামের প্রদর্শনী।’  গ্রোজনির কেন্দ্রে অবস্থিত আখমাদ কাদিরোভ মসজিদ। কাদিরভের বাবার নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। চেচনিয়ার সাবেক নেতা আখমাদ কাদিরভ ২০০৪ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন। এটি ২০০৮ সালে খুলে দেয়া হয়। খুচুয়েভ বলেন, ‘এটি এখন ইউরোপের বৃহত্তম মসজিদ।’ মসজিদের অর্থায়ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মেয়র সহজ জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘অর্থ আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।

শহরটির বড় বড় পুনর্র্নিমাণ প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ রাশিয়ার তহবিল থেকে আসে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কাদিরভ ইসলামি বিদ্রোহ দূর করার চেষ্টা চালান। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে চেচেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

খুচুয়েভ বলেন, ‘আমাদেরকে একেবারে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করতে হয়েছিল; যাতে লোকজন প্রকৃত ইসলামের দিকে ফিরে আসে।’

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ তথ্যানুযায়ী, সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস যোদ্ধাদের সঙ্গে অনেক চেচেন যোদ্ধা যোগ দিয়েছে। বৃহত্তর ইসলামি বিশ্বের মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাদিররোভ তার বার্তা প্রসারিত করেছেন।

চলতি মাসের শুরুতে জেরুসালেমের সংবেদনশীল পবিত্র স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পরলে কাদিররোভ তার ইন্ট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে তার সমর্থণ ঘোষণা করেন।

ইন্ট্রাগ্রামের ওই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ সর্বদা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আল আকসাকে মুক্ত করতে সক্ষম ইসলামের এমন যোদ্ধার হাতে একটি তলোয়ার তুলে দিয়েছেন।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ