শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়ার ১৪ মামলা বকশীবাজারে স্থানান্তর প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ

গতকাল বুধবার নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: বকশীবাজার বিশেষ জজ আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ১৪ মামলা স্থানান্তর প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আরও বেশি হয়রানি করতেই এটি সরকারের আর এক নির্মম পদক্ষেপ। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, তৈমূর আলম খন্দকার, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, আব্দুল আউয়াল খান, আসাদুল করিম শাহীন, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে স্থানান্তর করা হয়েছে। সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রিজভী বলেন, দেশবাসী দেখেছেন শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় বসেন তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা বিচারাধীন ছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণসহ হাজার হাজার মামলা চলমান ছিল। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১/১১ এর অবৈধ সরকারের করা কয়েকটি মামলা ছিল অভিন্ন। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাজার হাজার মামলা জাদুর কাঠির ইশারায় প্রত্যাহার হয়ে যায়। আর খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জাল ও ভুয়া নথিতে তৈরি মিথ্যা মামলাগুলো চলে সুপারসনিক গতিতে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় এমনিতে সপ্তাহে কয়েকদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। নতুন মামলাগুলো বকশিবাজারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য হলো-বেগম জিয়াকে প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রাখা এবং অবিরামভাবে হেনস্তা করা। বেগম জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকা-ে ব্যঘাত সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের নীলনকশা অনুযায়ী ১৪ মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আবারও একতরফা করতে যে যড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা চলছে এটি তারই অংশ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে অশান্তির আগুনে ভিতরে ভিতরে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। সরকার বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের হাইওয়ের দিকে না গিয়ে চক্রান্তের হদিস করে বেড়াচ্ছে। ক্ষমতার মোহে অন্ধের মতো এরা এখন সুপথের সন্ধান পাচ্ছে না। তাই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নিয়ে চক্রান্তে মেতে উঠেছে। তিনি বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি- নিজেদের বোনা চক্রান্তজালে নিজেরাই আটকা পড়বেন। জনগণই রাজপথে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
শীতার্তদের পাশে সরাকর নেই অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র শীতে উত্তরাঞ্চলসহ গোটা দেশ শীতে কাঁপছে। কয়েকদিনের শীতে এরই মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধসহ শতাধিক লোকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীদের ভীড় জমছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে গরীব, দুস্থ ও শীতার্ত মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়নি। বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ইতোমধ্যে শীতার্তদের পাশে দাঁড়িয়ে শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানাভাবে সহায়তা করছেন। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে দলের নেতা-কর্মীসহ সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়াঁনোর আহবান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, ঢাকা সিটি উত্তন উপ-মেয়র নির্বাচনে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীতা ঘোষনারও প্রস্ততি চলছে। কিন্তু আজও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে শঙ্কা ও সংশয়ের মধ্যেই তফসিল ঘোষনা হয়েছে। হঠাৎ আইনী মারপ্যাঁচ দেখিয়ে নির্বাচনকে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা হয় কী না তা নিয়ে জনমনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আদৌ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কী না এমন প্রশ্নও ঘোরপাক খাচ্ছে। ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হলেও এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন পরিবেশ নির্বাচনী এলাকায় নেই। বিরোধী দলগুলোর সভা সমাবেশ দূরে থাক মতবিনিময় সভা করার মতোও পরিবেশ নেই।
 দেশব্যাপী ক্ষমতাসীনদের অঙ্গসংগঠনগুলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, অবৈধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত থেকে চর্চিত হিংসার স্ফুরণে ছাত্রলীগের বেপরোয়া অনাচার ক্রমবর্ধমান মাত্রায় সংঘটিত হচ্ছে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্রী আফসানা আহমেদ ইভাকে প্রচন্ড শীতের রাতে হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয় ছাত্রলীগ। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইভার প্রতিবাদের অনন্য দৃষ্টান্ত গোটা জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বিএনপি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শুধু ছাত্রলীগ নয়, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোষ্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমানভাবে এই দুস্কর্মের জন্য দায়ী। বিএনপি’র পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য অপকর্মের তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ