শব্দদূষণ : মাইকের উৎপাত বন্ধ করুন
সামাজিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে সামাজিক দায়িত্ব ও সৌজন্যতাবোধও যেন লুপ্ত হতে চলেছে। এ কারণেই হয়তো বিকট শব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করার কাজটি সম্পন্ন হতে পারলো এই সমাজে। গত ২০ জানুয়ারি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রাজধানীর ওয়ারিতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বিকট শব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় নাজিমুল হক (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে ওয়ারির ৪৪ নং রামকৃষ্ণ মিশন রোডের সি-৮ নম্বর বাসায় এই হত্যাকা- ঘটে। ময়না তদন্তের জন্য বৃদ্ধের লাশ মিটফোর্ড হাসপাতালে সর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতের ছেলে নাসিমুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ভবনের ছাদে পাশের ফ্ল্যাটের মালিক এবং এপার্টমেন্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন তার এক আত্মীয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করছিলেন। এপার্টমেন্ট সমিতির নিয়ম অনুযায়ী রাত ১২টার পর অনুষ্ঠান করা নিষেধ। অথচ সেদিন রাত ১টায়ও উচ্চশব্দে গান বাজানো হচ্ছিল। নিহত নাজিমুল হক হার্ট ও কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকায় ছাদে গিয়ে গান বন্ধ করতে বলেন। তখন গান বন্ধ করে কিছু লোক নাজিমুল হকের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এরপর শুক্রবার সকাল ১১টায় ভবনের কেয়ারটেকার দিয়ে আলতাফ হোসেন বৃদ্ধ নাজিমুল হক ও তার স্ত্রীকে ডেকে পাঠান। তারা নিচে গেলে আলতাফ হোসেন, হৃদয়, সজিব ও ৩ নারীসহ সাতজন নাজিমুল হককে মারধর করে। পরে গুরুতর অবস্থায় আজগর আলী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওয়ারি থানার এসআই হারুন-অর-রশিদ জানান, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর অভিযোগ পাওয়ার পর পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এপার্টমেন্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনের প্রহারে নিহত হলেন এপার্টমেন্টের এক বৃদ্ধ বাসিন্দা। এ কেমন সমাজ আমাদের? সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বতো সমিতির নিয়ম-কানুন রক্ষা করা, সদস্যদের নিরাপদ রাখা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেল উল্টো চিত্র। সাধারণ সম্পাদক শুধু যে নিয়ম লঙ্ঘন করলেন তা নয়, তিনি স্বয়ং মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মানুষ হত্যা করলেন। নিষ্ঠুর এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি সমাজের মানুষের কাম্য।
সমাজের বহু মানুষের কাণ্ডজ্ঞান যেন লোপ পেতে বসেছে। শুধু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে নয়; এলাকাভিত্তিক ক্লাবের নানা অনুষ্ঠানে, রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে, এমনকি ওয়াজ মাহফিলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতি উচ্চশব্দে মাইক বাজানো হয়। ‘শব্দদূষণ’ নামক শব্দটি যেন তাদের অবগতির মধ্যে নেই। অথচ নাগরিকদের তো জানা থাকার কথা যে, আবাসিক এলাকায় উচ্চস্বরে গান বা মাইক বাজানো যায় না। আর শব্দদূষণের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করা তো বড় ধরনের অপরাধ। এ বিষয়কে যারা অবজ্ঞা করে বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শন করবে তাদেরতো আইনের আওতায় আনা উচিত। যারা উৎসব করবে, অনুষ্ঠান করবে তাদের এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে যে, সমাজের অন্য মানুষদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে, অনেকে অসুস্থ থাকতে পারেন, অসময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা শব্দদূষণ কীভাবে সহ্য করবেন? অসময়ে বিশেষ করে রাতে ওরা মাইকের বদলে সীমিত সাউন্ডবক্স ব্যবহার করলেও তো পারেন। সমাজের মানুষদের তো পরিমিতি বোধের পরিচয় দিতে হয়। আমরা কি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হবো?