বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ছাত্রধর্মঘটে ঢাবি ও জাবিতে তালা বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের হামলা

গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচারের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। ধর্মঘট চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে ধর্মঘটকারীরা। এ দিকে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে বিভিন্ন স্থানে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
গতকাল সোমবার সকাল ৭টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে সেখানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফটকে ধর্মঘট আহ্বানকারীরা তালা ঝুলিয়ে দিলেও কে বা কারা সেই তালা ভেঙে ফেলে। বাণিজ্য অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও কার্জন হলে বেশ কয়েকটি বিভাগে ক্লাস শুরু হয়েছে। এদিকে জোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুমন জানান, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়।
গত ২৪শে জানুয়ারি প্রগতিশীল ছাত্রজোট সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটে ছাত্রজোটের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট করার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রজোটের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আহত হয়েছে ৫ জন। আহতরা হলেন- জয়দীপ দাশ, মুনির, নাইম ও আদিব। অপরজনের নাম পাওয়া যায়নি। লাঞ্ছিত করা হয়েছে নগর ছাত্রফ্রন্টের সেক্রেটারি রুবাইয়াত হোসেনকে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালন করছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। ভোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের ফটকগুলোয় অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট শুরু করেন জোটের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন, পুরাতন কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ভবনের ফটক আটকে সেগুলোর সামনে অবস্থান নেয়।
এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা এবং ভিসির কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ‘সন্তোষজনক’ না হলে ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
গতকাল জোটের আহ্বানে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় এক সমাবেশে এ হুঁশিয়ারির পাশাপাশি নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। সকাল ৭টায় ছাত্র ধর্মঘট শুরুর পর কলাভবনের ফটকে তালা দিয়ে দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। দুপুরে মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হন।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুমন সমাবেশে বলেন, তদন্ত কমিটিতে যারা আছেন, তারা যখন শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে নিপীড়কদের পক্ষে কথা বলেন, তখন আমরা কীভাবে সেই তদন্তের ওপর আস্থা রাখি? তদন্ত কমিটি যদি প্রহসনের চেষ্টা করে বা প্রহসনের রায় দেয়, তাহলে আমরা ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গণতদন্ত কমিটি করে, গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণ কাছে তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করব।
মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে রুমন বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি চার দফা দাবিতে সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবে ছাত্রজোট।
সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত ১৫ জানুয়ারি ভিসির কার্যালয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে আন্দোলনরতদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। ওই ঘটনায় ছাত্রীদেরও নিপীড়ন করা হয় অভিযোগ এনে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।
দুইদিন পর এই আন্দোলকারীরা প্রক্টরের কার্যালয়ের ফটক ভাঙচুরের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি তারা ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গিয়ে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে সরিয়ে দেয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ