শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শাহরাস্তির খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্প বন্ধের উপক্রম

শাহরাস্তি (চাঁদপুর) সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় ডাবল লিফটিং এর মাধ্যমে ভূ-পরিস্থ পানির সাহায্যে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প ৩য় পর্যায়ে খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্পটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এর অধিন শাহরাস্তি উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, বরুড়া উপজেলা ও কচুয়া উপজেলার কিছু অংশ এ প্রকল্পের আওতাভূক্ত। ৫ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক কৃষক পরিবার এ সেচ প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল। গত মৌসুমে অকাল বণ্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়নি। এমনকি জমির পরিমান অনুযায়ী যে খরচ হয়েছে তাতে দায়সারা অবস্থায় মৌসুম শেষ করতে হয়েছে কৃষকদের। বণ্যায় ফসলের ক্ষতির কারণে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ব্যবহৃত পল্লী বিদ্যুতের বিল সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় প্রকল্প ম্যানেজার। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের ওই বকেয়া এবং গত মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা আদায় করতে না পারায় এ বছর সেচ প্রকল্প বন্ধের পথে। যার ফলে লক্ষাধিক কৃষক পরিবারের জীবন-জীবিকা হুমকীর মুখে। এ বিষয়ে খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের কেন্দ্রিয় ম্যানেজার শাহরাস্তির রায়শ্রী দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবু হানিফ জানান, ৫ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক কৃষক পরিবারের ৩ হাজার একর জমি এ সেচ প্রকল্পের আওতায় চাষাবাদ হচ্ছে। গত বছরের বণ্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে কৃষকদের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা উত্তোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে শাখা ম্যানেজাররা। কৃষকদের কাছ থেকে টাকা না পাওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়েছে। আমি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য সময় প্রার্থণা ও নতুন সংযোগ পাওয়ার জন্য চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার বরাবর গত ২০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে আবেদন করেছি। এছাড়া বিষয়টি উপজেলা সেচ কমিটির সভায় উত্থাপনা করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আমার আবেদনটি আমলে না নিয়ে উল্টো লিখিত পত্রের মাধ্যমে বকেয়া বিল পরিশোধ এবং যাবতীয় ফি পরিশোধ সাপেক্ষে পুনঃ সংযোগ গ্রহনের জন্য বলে। বকেয়া বিল এবং জামানত সবকিছু মিলে প্রায় ৪-৫ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন যা বর্তমানে আমার পক্ষে সেচ চালু হওয়া ছাড়া দেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া গত সেচ প্রকল্পে আমি আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। এছাড়া শাখা ম্যানেজাররা সঠিক ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে দিতে গড়িমসি করছে। সবকিছু মিলিয়ে সেচ প্রকল্পটি এ মৌসুমে চালানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সকলের সহযোগিতা পেলে সেচ প্রকল্প চালু সম্ভব হবে। এদিকে সেচ প্রকল্পের শাখা ম্যানেজার মনোহরগঞ্জের শাহআলম ও লাকসামের আবদুর রহমান জানান, গত মৌসুমেও দেরিতে সেচ প্রকল্প চালু হওয়ায় অতি বৃষ্টি ও বণ্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছি। তাই কেন্দ্রিয় ম্যানেজারকে প্রাপ্য টাকা দেয়া সম্ভব হয়নি। এ বছরও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এখনো সেচ প্রকল্প চালু হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দেরিতে প্রকল্প চালু হলে আবারও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন পূর্বে শাখা ম্যানেজারদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ম্যানেজার একটি সভা করেছেন। আমরা প্রত্যেক শাখা ম্যানেজার যতটুকু সম্ভব আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। দ্রুত প্রকল্পটি চালু হলে কৃষকরা উপকৃত হবে। উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ এরশাদ উল্যাহ জানান, আমাদের খাল খনন কর্মসূচী চলছে। খাল খনন শেষে প্রকল্প চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের বকেয়া কিংবা শাখা ম্যানেজারদের গাফলতির বিষয়টি যতটুকু বলা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কেন্দ্রিয় ম্যানেজার আবু হানিফের ভূমিকা নিয়ে। তিনি উপজেলা বিএডিসি অফিসের সাথে তেমন গুরুত্ব নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করছেন না। কেন্দ্রীয় ম্যানেজারের কাছে বিএডিসি অনেকগুলো পাম্পের ভাড়া পাওনা রয়েছে। তাছাড়া ওই স্থানে নতুন কিছু পাম্প স্থাপন এবং বিদ্যুৎ লাইনের সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএডিসি পল্লী বিদ্যুতের সাথে লেনদেন করবে কেন্দ্রিয় ম্যানেজার সরকারী কিছু ফি দিয়ে সহযোগিতা করবেন। কেন্দ্রীয় ম্যানেজার আবু হানিফ সেচ প্রকল্পটি যেখানে স্থাপিত ওই ইউপি’র চেয়ারম্যান। তিনি চাইলে বিএডিসি ও পল্লী বিদ্যুতের সাথে সমন্বয় করে প্রকল্পটি চালু করতে পারেন। বিল বকেয়ার জন্য কৃষকদের দিকে তাকিয়ে থেকে সময় নষ্ট না করে সেচ প্রকল্পটি চালু করার বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারেন। তিনি কেন এড়িয়ে যাচ্ছেন সেটি বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ শাহরাস্তি জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, গত মৌসুমে সেচ প্রকল্পের কেন্দ্রিয় ম্যানেজার আবু হানিফ একটি বিলও পরিশোধ করেননি। বিধি অনুযায়ী তাকে বেশ কয়েকবার নোটিশ করার পরও তিনি বিল পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় লাইন কেটে নেয়া হয়েছে। পুনরায় সংযোগ নিতে হলে বিধি অনুযায়ী নিতে হবে। বিল পরিশোধ না করে সময়ের প্রার্থণা করে কোন লাভ নেই। এটি আমার ব্যক্তিগত সম্পদ নয়-সরকারের সম্পদ। তাই সরকারের আইন অনুযায়ী বকেয়া বিল পরিশোধ এবং নতুন সংযোগের যাবতীয় ফি পরিশোধ সাপেক্ষে পুনঃ সংযোগ নিতে হবে। ওই প্রকল্পের ম্যানেজার বিষয়টি উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় উত্থাপন করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ অবহিত রয়েছে। সকলেই তাকে বিল পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি এটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করছেন, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধে সমস্যা কোথায়। অহেতুক পল্লী বিদ্যুতকে দোষারোপ করে নিজের দোষ ঢাকা সম্ভব হবে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ