সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা ও মহানগর বিএনপি
গত মঙ্গলবার সিলেট সরকারি আলীয়া মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিএনপি ও সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন ‘মিথ্যাচার ও অপপ্রচারমূলক’ বক্তব্যেরও নিন্দা জানান তারা। নেতৃবৃন্দ বলেন- ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে গদি দখল করে থাকা সরকারের কাছ থেকে মিথ্যার ফুলঝুড়ি ছাড়া সিলেটবাসী আর কিছুই পায়নি।
গতকাল বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন- একদিকে সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রী সিলেটে এসে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন অপরদিকে তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। এটা কোন ধরনের নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? এতে জাতি বিস্ময়ে হতবাক।
দীর্ঘ লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের উন্নয়নের রূপকার প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পুরোটাই সিলেট বিদ্বেষী। সিলেটবাসী এই মিথ্যাচারমূলক বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সিলেটে স্বাধীনতার পর যে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্থবায়িত হয়েছে তা হয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এবং সাইফুর রহমানের হাত দিয়ে। সাইফুর রহমানে অস্বীকার মানে সিলেটকে অস্বীকার। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালের একটি বক্তব্য টেনে এনে বলেছেন- তৎকালিন সময়ে নাকি এম সাইফুর রহমান বলেছিলেন খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে নাকি বিদেশে থেকে সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে যাবে। মরহুম এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে এুবড় অপবাদ সিলেটবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরনের শামিল। সাইফুর রহমান জীবিত থাকতে এমন কথা কেউ কোনদিন বলেনি। যা প্রধানমন্ত্রীর মনগড়া এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বক্তব্য বলে সিলেটবাসী মনে করে।
তারা বলেন- ‘আওয়ামী লীগ ৯ বছরে দেশকে লুটপাট সন্ত্রাস, খুন, গুম হামলা-মামলা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে আওয়ামী লীগ। শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কোন ব্যাংক আওয়ামী লীগের ধ্বংসাত্মক লুটপাট থেকে রেহাই পায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মত শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের টাকা আওয়ামী লীগের আমলেই চুরি হয়েছে। বিএনপিকে চোরের দল বলে আওয়ামী লীগ জাতির কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। বিএনপিকে ‘চোরের দল’ বলার আগে আওয়ামী লীগকে নিজেদের ডায়রী খুলে পড়ে দেখা উচিত। বৃহত্তর সিলেটে নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ তো দূরের কথা বিএনপির আমলে নির্মাণ করা রাস্তাঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জেলা সদর থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের রাস্তাঘাটের অবস্থা কেমন তা সিলেটের মানুষই ভাল জানেন। এ নিয়ে সরকারের মিথ্যাচার সিলেটবাসী ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে।
বিবৃতি আরোও উল্লেখ করা হয়, ‘সিলেটকে শান্তির নগরী বলে আওয়ামী লীগ নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। সিলেটে সরকার দলের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে একের পর এক লাশ পড়ছে, খালি হচ্ছে মায়ের বুক। সিলেটের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি দলীয় সন্ত্রাসীদের মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছে। সেখানে লেখাপড়ার পরিবর্তে চলছে সরকার দলের অস্ত্রের মহড়া।’
সিলেট বিএনপি নেতৃবৃন্দ আরো বলেন- বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে উন্নয়ন করেছে আর আওয়ামী লীগ করেছে নাম পরিবর্তন। যারা প্রয়াত এম সাইফুর রহমানকে অস্বীকার করে তারা সিলেটকে অস্বীকার করে। সিলেট আর সাইফুর রহমান মিশে একাকার। সিলেটের প্রতিটি ধূলিকনায় এম সাইফুর রহমানের অবদান মিশে আছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বাদ দিয়ে দেশে অবাধ সুষ্টু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সিলেটের উন্নয়ন ও সাইফুর রহমান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান তারা। নেতৃবৃন্দ বলেন- আমরা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি প্রতিহিংসায় নয়। ক্ষমতার মসনদ কারো চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় সকল মিথ্যাচারের ফুলঝুড়ি লিখা থাকবে। সময়ের ব্যবধানে সকল মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব দিতে সিলেটবাসী কোনদিন ভুলবেনা। বিজ্ঞপ্তি