শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

৬৮ কারাগার কানায় কানায় পরিপূর্ণ ॥ দ্বিগুণের বেশি বন্দী

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : ৩০ জানুয়ারি থেকেই ধর-পাকড়ের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই আইনশৃংখলা বাহিনীর এই ধর-পাকড় অভিযানের শিকার ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার পর থেকে ধর-পাকড়ের ব্যাপকতাও বেড়েছে। এর ফলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮টি কারাগারে সম্প্রতি বন্দী কয়েদি-হাজতির সংখ্যা বেড়েছে। দু-তিন মাস আগেও কারাগারগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৭২ হাজার বন্দী থাকতো সেখানে রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ হাজারে। কারা অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এমন তথ্য জানান।

কারা সূত্রগুলো জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে সর্বসাকুল্যে ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৬ হাজার ৬১৪ জন। রোববার এ সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৮১৪ জন। বন্দীদের মধ্যে পুরুষ ৭৩ হাজার ১৪৯ জন এবং নারী দুই হাজার ৬৬৫ জন।

একাধিক কারাগার সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে। পরে তাদের কারাগারগুলোতে পাঠানো হয়। এ কারণে বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিশেষ করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার হচ্ছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামী ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করছে।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে ডেকে অভিযোগ করেন, গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম নস্যাৎ করতে এ কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কারা কর্মকর্তা জানান, সাধারণত কারাগারগুলোতে প্রতিদিন যে সংখ্যক আসামী আদালতের মাধ্যমে কারাগারে আসে, সমান সংখ্যক আসামী জামিনে মুক্তি পায়। সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আসামীর সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী জামিন হচ্ছে না। ফলে কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে।

কারাবন্দীদের সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে কারা অধিদফতরের এআইজি প্রিজন (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী রোববার সারাদেশে প্রায় ৭৬ হাজার বন্দী ছিল। এ বিষয়ে আর কিছু জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

গত ৩০ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট এলাকায় জড়ো হওয়া কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে রাখে পুলিশ। সে সময় খালেদার গাড়ি বহরের সঙ্গে একটি মিছিল ওই স্থানে এসে প্রিজন ভ্যান ভেঙে আসামীদের ছিনিয়ে নেয়। এ সময় পুলিশের দুইটি অস্ত্রও ভেঙে ফেলে তারা। এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুইটি ও রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ মোট ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামী করা হয়। মামলার পর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। এরপর আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির প্রায় ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

 রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত পাঁচ দিনে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 

এ সময় রিজভী বলেন, সরকার দুরন্ত গতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বেপরোয়া গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ আকস্মীক ঝাপটা মেরে তাদের আটক করছে। শনিবার লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা চলাকালে ও সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে ৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে , রোববার বিকেলে বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান , হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও প্রিজন ভ্যান ভাংচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা ফিল্মি স্টাইলে পুলিশকে আক্রমণ করেছে, হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

একই দিন রাজধানীর গুলশানে দলীয় এক কর্মসূচীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রায়ের আগে সরকারের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তারের বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানান , এখন পর্যন্ত সারা দেশে  প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তবে তিনি বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। “পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী ভিডিও ফুটেজ দেখে যারা অপরাধী তাদেরকে অ্যারেস্ট করছেন। কোনো নিরাপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।”

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ