মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সমাধানে করণীয়

বিল্লাল হোসেন কলতান : যেকোন কাজ করলে তাতে ত্রুটি বা সমস্যা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে ত্রুটিমুক্ত হয়ে কাজ করার। অধিকাংশ সময়ই ত্রুটিগুলো হয়ে থাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ব্যক্তির নিজস্ব চরম অবহেলায়। আর সমস্যা বা ত্রুটি সৃষ্টির কারণেই সমাধানের দরকার হয়। এভাবে ত্রুটি সংশোধন করতে করতে বা সমস্যা সমাধানের পর সংশ্লিষ্ট কাজটি সকলের নিকট যেমন সহজ অনুভুত হয় তেমনি হয়ে উঠে উপভোগ্য বা আনন্দদায়ক। অন্যদিকে ব্যক্তির নিজস্ব অবহেলা বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বা নৈতিক মানের অভাবে প্রতিষ্ঠানকে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কখনো বা চরম খেসারত দিতে হয়।
কোন বিদ্যালয় যখন তার শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে যায় বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তখন সে সংশ্লিষ্ট কাজে বেশ কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে। সে ত্রুটিগুলোকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করতে পারি-
১. প্রশ্নপত্র প্রণয়নে, ২. প্রশ্নপত্র বাছাইকরণে, ৩. প্রশ্নপত্র ছাপানোতে, ৪. প্রুফ রিডিংয়ে, ৫. পরীক্ষার হলে ৬. উত্তরপত্র মূল্যায়নে, ৭. ফলাফল তৈরিকরণে, ৮. কম্পিউটার বিভাগে।
এখন উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা যাক-
১. প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমস্যা/ত্রুটি :
ক) প্রতিটি বিদ্যালয় বছরের শুরুতে পাঠ পরিকল্পনা বা সিলেবাস প্রণয়ন করে থাকে। সে সিলেবাসে মিডটার্ম / টিউটোরিয়াল, অর্ধ-বার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষার জন্য আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট পাঠ পরিকল্পনা থাকে। একজন বিষয় শিক্ষককে সে সিলেবাসের আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে সিলেবাসের আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হয়নি। কিছু প্রশ্ন সিলেবাসের বাহির হতে প্রণয়ন করা হয়েছে।
খ) প্রতিটি বিষয়ের জন্য NCTB (National Curriculum & Textbook Board) হতে গড়ফবষ ছঁবংঃরড়হ বা নমুনা প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হয়। কখনো কখনো বিষয় শিক্ষক সে নির্দেশনা / Model Question অনুসরণ করেন না। তিনি নিজের ইচ্ছামতো প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন।
গ)  একজন প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী একই শিখনফল / বিষয়বস্তুর আলোকে একবার প্রশ্ন তৈরি করবেন। অর্থাৎ তিনি একই প্রশ্ন দুইবার করবেন না। কিন্তু প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী কখনো কখনো সে নীতিমালা ভুলে যান। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, ৯ম শ্রেণির English First Paper এর ক্ষেত্রে একই প্রশ্নপত্রে যে Seen Passage টি প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী সেট করেছেন তা হলো A Good Citizen সম্পর্কে। দেখা গেল তিনি আবার Writing Test এ A Good Citizen সম্পর্কে Paragraph প্রশ্ন সেট করেছেন। তাহলে একই প্রশ্ন দুইবার হয়ে গেল। তা সুস্পষ্টভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নীতিমালার বিরুদ্ধে।
ঘ) সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের চারটি অংশ থাকে। অনেক সময় দেখা যায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন অনুধাবনের ক্ষেত্রে এবং প্রয়োগের প্রশ্ন উচ্চতর দক্ষতার ক্ষেত্রে সেট করা হয়েছে। আবার কখনো কখনো এর উল্টো চিত্রও দেখা যায়।
ঙ) বহুনির্বাচনী প্রশ্নে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর স্তরের প্রতিটি অংশ থেকে আলাদাভাবে কত শতাংশ প্রশ্ন প্রনয়ন করতে হবে তা নির্ধারণ করা থাকে। কিন্তু বিষয় শিক্ষক সে অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করেন না। নিজের খেয়াল-খুশি মত প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করেন।
চ) মিডটার্ম/টিউটোরিয়াল এবং অর্ধ-বার্ষিক/বার্ষিক পরীক্ষায় নম্বরের তারতম্যের জন্য সময়ের তারতম্য হয়ে থাকে। আবার সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রের জন্য আলাদাভাবে সময়ের উল্লেখ করতে হয়। প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী বা বিষয় শিক্ষকগণ প্রশ্নপত্র প্রনয়নের সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখেন না। তিনি প্রশ্নপত্রে সঠিক সময় উল্লেখ না করে ভুল সময় উল্লেখ করেন। এতে করে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
ছ) একজন শিক্ষক শিক্ষার্থী বা সমাজের জন্য একজন মডেল বা অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি হবেন সৃজনশীল চিন্তা-চেতনার অধিকারী। নতুন কিছু করার উদ্ভাবনী ক্ষমতা তার মধ্যে থাকবে অবিরত। কিন্তু দেখা যায় একজন শিক্ষক প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করার ক্ষেত্রে সরাসরি বাজারের গাইড বই এর আশ্রয় নেন। অর্থাৎ তিনি সরাসরি গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেন। এতে করে শিক্ষকের সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষেত্র সংকুচিত হয় বা তার নিজস্ব স্বকীয়তা নষ্ট হয়। শিক্ষার্থীর উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষীর্থীরা পাঠ্য বই রেখে দিয়ে গাইড বই এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।
জ) প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী প্রশ্নের মান বন্টন এর ক্ষেত্রে ভুল করেন। কখনো বা আংশিক মান বন্টন দেন। আবার কখনো কোন প্রশ্নের মান বন্টন এ কত নম্বর দিতে হবে সে মান বন্টন-ই দেন না।
ঝ) প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারীকে বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্র প্রনয়নের সময় প্রতিটি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর আলাদা কাগজে লিখতে হয়। প্রশ্নপত্র জমা দেওয়ার সময় ঐ সঠিক উত্তরপত্রটিও জমা দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী কখনো কখনো বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিয়ে ভুল উত্তর দিয়ে থাকেন। আবার কখনো বা কোন কোন প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঠিক উত্তরপত্রটি জমা-ই দেন না।
ঞ) কোন কোন প্রশ্নপত্রে উদ্দীপকে ভুল তথ্য থাকে। আবার কখনো দেখা যায় প্রশ্নপত্রে ব্যক্তির যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে উদ্দীপকে সে নাম-ই নেই। বরং আছে ভিন্ন নাম। প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী হয়তো বিষয়টি খেয়াল করেননি। এতে করে পরীক্ষার্থীর উত্তর লিখতে সমস্যা হয়।
ট) উদ্দীপক হিসেবে কখনো কখনো চিত্র বা গ্রাফ বা লেখচিত্র ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময় এই চিত্র বা গ্রাফ বা লেখচিত্রের সাথে প্রশ্নপত্রের সামঞ্জস্য বা মিল থাকে না। তখন পরীক্ষার্থীদের উত্তর লিখতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়।
ঠ) সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের প্রথমে ক, খ, গ বিভাগের প্রত্যেকটি থেকে আলাদাভাবে কতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সে সম্পর্কে পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা দিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় এই নির্দেশনাটি দেওয়া থাকে না কিংবা থাকলেও ভুল থাকে। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা যায়। ধরা যাক, ক বিভাগ থেকে ৩টি, খ বিভাগ থেকে ২টি এবং গ বিভাগ থেকে ২টিসহ মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। দেখা যায় প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী নির্দেশনা লিখে দিলেন  ক বিভাগ থেকে ২টি, খ বিভাগ থেকে ১ টি এবং গ বিভাগ থেকে ৩ টিসহ মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর দাও।
ড) প্রশ্নপত্র প্রণয়নে নির্দেশনার সাথে প্রশ্নের অসামঞ্জস্য থাকে। যেমন প্রশ্নে বলা হলো “কথায় লিখ”। দেখা যায় প্রশ্নের অংক বা সংখ্যাগুলো কথায়-ই লিখে দেওয়া হয়েছে। তাহলে পরীক্ষার্থীরা কি উত্তর লিখবে? এরূপভাবে প্রশ্নে বলা হয় “ইংরেজিতে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত লিখ”। কিন্তু প্রশ্নটি হওয়ার দরকার ছিল “ইংরেজিতে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত লিখ”। তদ্রূপভাবে প্রশ্নে বলা হলো “ইংরেজিতে অনুবাদ কর”। কিন্তু প্রশ্নে বাক্য বা ঝবহঃবহপব গুলো ইংরেজিতে দেওয়া আছে।
ঢ)  বহুনির্বাচনী প্রশ্ন তিন ধরনের হয়। যথা- সাধারণ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, অভিন্ন তথ্যভিত্তিক বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এবং বহুপদী সমাপ্তিসূচক বহুনির্বাচনী প্রশ্ন। একজন প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী সাধারণ বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মাধ্যমে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন প্রনয়ন শুরু করবেন। অর্থাৎ প্রথম প্রশ্নটি সাধারণ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন হবে। তারপর অবশিষ্ট দু’টি ক্রমানুসারে হবে। কিন্তু কোন কোন প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী এ নিয়মটি মানেন না। ফলেশ্রুতিতে প্রশ্নপত্রটি মানসম্মত হয় না।
ণ) কোন কোন প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী কাগজের উভয় পৃষ্ঠা ব্যবহার করে থাকেন। অথচ উত্তম কাজটি হলো কাগজের এক পৃষ্ঠা ব্যবহার করা। কখনো কখনো কাগজের বাম পাশে মার্জিন ব্যবহার করেন না। ঠিক মার্জিন পরিমাণ জায়গাও রাখেন না।
ত) প্রশ্নপত্রের ভাষা হতে হয় শ্রেণি উপযোগী। কখনো দেখা যায় কোন কোন প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীর প্রশ্নপত্রের ভাষা শ্রেণি উপযোগী হয় না।
থ) একজন শিক্ষক যখন একটি প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করেন তখন ঐ প্রশ্নপত্রের প্রতিটি প্রশ্ন পরীক্ষার্থীর নিকট বোধগম্য হতে হয়। অর্থাৎ প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী তার প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর নিকট হতে কি তথ্য জানতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট হতে হবে। তাহলেই পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারবে। কিন্তু কোন কোন প্রশ্নের ভাষা পরীক্ষার্থীর নিকট বোধগম্য হয় না। অর্থাৎ প্রশ্নপত্র প্রনেতা প্রশ্নের মাধ্যমে কি তথ্য জানতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
দ) কখনো কখনো দেখা যায় কোন কোন প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী তার বিষয়ের বিগত বোর্ড পরীক্ষার কোন একটি প্রশ্নপত্রের সম্পূর্ণ অংশ হুবহু প্রশ্নপত্র হিসেবে প্রনয়ন করেছেন। যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার এবং বেদনাদায়ক।
২. প্রশ্নপত্র বাছাইকরণে সমস্যা :
ক) বিষয় শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র প্রনয়ন না করলে প্রশ্নপত্রের সংকট দেখা দেয়। তখন প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশ্নপত্রের অভাবে প্রশ্নপত্র বাছাইকরণে সমস্যা হয়। সকল শিক্ষক প্রশ্নপত্র প্রনয়ন না করায় অনেক সময় মানসম্মত প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় না। তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি মানহীন প্রশ্নপত্র বাছাই করতে হয়।
খ) বিষয় শিক্ষকগণ প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করে প্রশ্নপত্রের শেষে তাঁর স্বাক্ষর দিবেন পূর্ণ নাম লিখে। কখনো যদি প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী স্বাক্ষর না করেন তাহলে এই প্রশ্নপত্রটি কে প্রনয়ন করেছেন তা বুঝার উপায় থাকে না। তখন বাধ্য হয়েই অনেক সময় একটি মানসম্মত প্রশ্নপত্রকে বাছাইকরণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হয়।
গ) প্রশ্নপত্র প্রনয়নের ক্ষেত্রে সুন্দর বা স্পষ্ট হাতের লেখার গুরুত্ব অনেক বেশী। প্রশ্নপত্রের লেখা যদি অস্পষ্ট হয় বা পাঠোদ্ধার করা সম্ভব না হয় তাহলে বাছাইকরার উপযোগী একটি প্রশ্নপত্রও বাদ পড়ে যায়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রশ্নপত্রই যে অস্পষ্ট তা নয়। কিছু অংশের লেখা হয়তো অস্পষ্ট বা প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী কি লিখেছেন তা বুঝা যায় না।
৩. প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং / ছাপানোর ক্ষেত্রে সমস্যা :
ক) প্রশ্নপত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম ভুল থাকে।
খ) প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং বা ছাপানোর পর দেখা যায় প্রশ্নপত্রে উদ্দীপক নেই। কিন্তু জ্ঞানমূলক, অনুধাবন, প্রয়োগ, বা উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নগুলো ঠিকই আছে। এতে করে উদ্দীপকবিহীন প্রশ্নপত্র পেয়ে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলগুলোতে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে পরীক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
গ) বহুনির্বাচনী প্রশ্নের চারটি অপশন অর্থাৎ ক, খ, গ, ঘ অপশন ঠিকই থাকে; কিন্তু কোন অপশনে সঠিক উত্তর থাকে না।
ঘ) বহুনির্বাচনী প্রশ্নের চারটি অপশন ক, খ, গ, ঘ এই ধারাক্রমে থাকার কথা। কিন্তু দেখা যায় সেই ধারাক্রম থাকে না। কখনো দেখা যায় ক, খ, খ, গ কিংবা ক, খ, গ, গ কিংবা ক, খ, ঘ, ঘ এরূপে থাকে। এতে পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়।
ঙ) বহুনির্বাচনী প্রশ্নে চারটি অপশন ক, খ, গ, ঘ থাকে। অনেক সময় দুইটি অপশনে একই উত্তর থাকে। যেমন, যদি প্রশ্ন করা হয় “বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কি?” এর উত্তর অপশন ‘খ’ তে আছে ঢাকা। আবার অপশন ‘ঘ’ তেও আছে ঢাকা। এতে করে পরীক্ষার্থীরা ইনভিজিলেটরদের নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে।
চ) একই বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দুই বা ততোধিকবার থাকে। যেমন, ৪ নং এ যে বহুনির্বাচনী প্রশ্নটি আছে তা হয়তো আবার একই প্রশ্ন হিসেবে ১৩ নং কিংবা ২৫ নং প্রশ্নে আছে।
ছ) বহুনির্বাচনীতে দেখা যায় অনেক সময় প্রশ্নের সংখ্যা কম হয়। যেমন মোট ৩০ টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকার কথা। এর জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নের সংখ্যাগুলো ৩০ পর্যন্ত হবে। অনেক সময় দেখা যায় শেষ প্রশ্নটি ৩০ নং ক্রমিকেই আছে। কিন্তু মাঝখানের কিছু প্রশ্ন যেমন ১১ বা ১৫ বা ২৩ নং ক্রমিকও নেই এবং প্রশ্নটিও নেই।
জ) প্রশ্নপত্রে বিষয়ের নাম ভুল থাকে। দেখা যায় একটি বিষয়ের আংশিক নাম ঠিক আছে। বাকী নামটুকু ভুল ছাপা হয়েছে।
ঝ) দেখা যায় প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী প্রশ্নপত্রে সঠিক সময় উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কম্পোজ করার সময় তা ভুল করে সময় কম বা বেশি করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ীই তা প্রিন্ট বা ছাপানো হয়েছে।
ঞ) একজন প্রশ্নপত্র প্রনয়নকারী প্রশ্নপত্রের মানবন্টন সঠিকভাবে করার চেষ্টা করে থাকেন। অনেক সময় এমন হয় যে ছাপানো প্রশ্নপত্রে মানবন্টন সঠিক থাকে না। অথচ দেখা যায় যিনি প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করেছিলেন তিনি মানবন্টন সঠিকভাবেই করেছিলেন।
ট) প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং বা ছাপানোতে অস্পষ্টতা থাকে। পরীক্ষার্থীদের কাছে তার পাঠোদ্ধার করতে দুর্ভেদ্য মনে হয়। কখনো কখনো দেখা যায় দু/একটি লাইন বুঝাই যায় না।
ঠ) উদ্দীপকের চিত্রের সাথে প্রশ্নের সামঞ্জস্য থাকে না।
ড) বহুনির্বাচনী প্রশ্নের ক্ষেত্রে সংখ্যাক্রম অনুযায়ী ৩০টি প্রশ্ন ঠিক আছে। কিন্তু অনেক সময় এময় হয় যে একই ক্রমধারা দুই/তিন বার ব্যবহার করা হয়েছে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। যেমন ১১নং প্রশ্নের পর ধারাবাহিকভাবে ১২, ১৩, ১৪ এব ১৫ নং প্রশ্ন হবে। সেখানে সে ধারাবাহিকতা না থেকে এমন হয় যে ১১ নং প্রশ্নের পর ১২, ১২, ১২ এবং ১৫ প্রশ্ন হয়। অর্থাৎ প্রশ্নের ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে না।
ঢ) গণিতের ক্ষেত্রে প্রশ্নের সংখা তথ্য ভুল করলে পরীক্ষার্থীর জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। এমনিতেই গণিত শিক্ষার্থীর নিকট একটি কঠিন বিষয়ের নাম। তার উপর সংখ্যা তথ্যের ভুলের মাধ্যমে তাদেরকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। সংখ্যা তথ্যের ভুলের কারণে একটি অংকের যখন সমাধান করতে পারে না তখন তারা হতাশাগ্রস্থ হয়। দেখা যায় গণিতের এই সংখ্যা তথ্যের ভুল প্রায় সময়ই হয়।
ণ) এক শ্রেণির একই বিষয়ের প্রশ্নপত্র অন্য শ্রেণির প্রশ্নপত্র হিসেবে কম্পোজ করা হয় এবং তা প্রিন্টিং বা ছাপানো হয়। অর্থাৎ দেখা যায় ১০ম শ্রেণির জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্রটি ৯ম শ্রেণির জীব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র হিসেবে কম্পোজ এবং প্রিন্টিং বা ছাপানো হয়েছে।
ত) ইংরেজি প্রশ্নপত্রে ঝববহ এবং টহংববহ চধংংধমব থাকে। অনেক সময় দেখা যায় প্রশ্নপত্রটি যখন পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর হাতে বিতরণ করা হয়েছে তখন ঐ ঝববহ বা টহংববহ চধংংধমব টির দুই/তিনটি লাইন নেই। পরীক্ষার্থীরা তখন প্রশ্নের উত্তর বের করতে চরম বেকায়দায় পড়ে।
থ) প্রতিটি সৃজনশীলে চারটি প্রশ্ন থাকবে। প্রশ্নগুলো হলো জ্ঞান মূলক, অনুধাবন, প্রয়োগ, উচ্চতর দক্ষতা। অনেক সময় এই চারটি প্রশ্ন না থেকে ২/৩ টি প্রশ্ন থাকে। ১/২ টি প্রশ্ন বাদ পড়ে যায়। পরীক্ষার হলে প্রশ্নের সংশোধনী দেয়া না হলে পরীক্ষার্থীরা বাদ পড়া প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।
দ) বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মতো সৃজনশীলের প্রতিটি প্রশ্নে চারটি প্রশ্ন ক, খ, গ, ঘ এই ধারাবাহিকভাবে থাকার কথা। কিন্তু দেখা যায় সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না। কখনো দেখা যায় ক, খ, খ, গ কিংবা ক, খ, গ, গ কিংবা ক, খ, ঘ, ঘ এরূপে থাকে।
ধ) প্রশ্নপত্রে বাংলা হোক বা আরবী হোক কিংবা ইংরেজি হোক প্রচুর পরিমাণে বানান ভুল থাকে। ইংরেজির ক্ষেত্রে বানান ভুলের তীব্রতা অনেক বেশি। অথচ এই ভুল বানান কোমলমতি শিক্ষার্থীর মন-মগজে ঢুকে যাচ্ছে। এই কোমলমতি শিশু কিশোররা প্রশ্নপত্রের ভুল বানানকে ভুল হিসেবে বুঝতে পারে না। তারা এই ভুল বানানকেই শুদ্ধ বানান মনে করে ভুল করছে। এতে সম্ভাবনাময় মেধাবী শিশু-কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ন) পরীক্ষার্থীর সঠিক সংখ্যা অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং বা ছাপানো হয় না। অনেক সময় দেখা যায় কোন কোন শ্রেণির প্রশ্নপত্র অনেক কম হয়েছে। তখন পরীক্ষা বিভাগকে কক্ষ ভিত্তিক প্রশ্নপত্র বিন্যাস করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। আবার কখনো কখনো কোন কোন শ্রেণির প্রশ্নপত্র সঠিক সংখ্যার চেয়ে ঢের বেশি ছাপানো হয়।
প) সৃজনশীল হোক বা বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্র হোক, লক্ষ্য করা যায় প্রশ্নপত্রের এক পৃষ্ঠা থাকলে অপর পৃষ্ঠা থাকে না। এতে করে পরীক্ষার্থীরা ইনভিজিলেটরদের নিকট হতে পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নপত্র চায়। কখনো কখনো ইনভিজিলেটরগণ পরীক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নপত্রের জন্য নিচে অফিস কক্ষে পাঠিয়ে দেন। এতে করে পরীক্ষার্থীর মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
ফ) কিছু বিষয়ে শুধু বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হয়। সে বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীকে বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রেই উত্তর দিতে হয়। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রে সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে থাকে। পরীক্ষার্থীদেরকে মূল উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয় না। তখন পরীক্ষার্থীরা ঐ বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রেই তাদের নাম, শাখা, রোল নং লিখে থাকে। এ জন্য  বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রের উপরে শিক্ষার্থীর নাম-ৃ, শাখা-ৃ, রোল নং-ৃৃৃ এর অপশন থাকার কথা। অনেক সময় তা থাকে না। এতে করে পরীক্ষার্থীরা একেক জন একেক জায়গায় ঐ তথ্যগুলো দিয়ে থাকে। কখনো কখনো পরীক্ষার্থীরা নিজেদের নাম, শাখা, রোল নং না লিখেই পরীক্ষা দিয়ে চলে যায়।
৪. প্রুফ রিডিংয়ে সমস্যা/ত্রুটি : যত্নের সাথে বা আন্তরিকতার সাথে প্রুফ রিডিং করা হয় না। সঠিকভাবে প্রুফ রিডিং করলে প্রশ্নপত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে শুরু করে এত মারাত্মক ভুল হওয়ার কথা নয়।
৫. পরীক্ষার হলে সৃষ্ট সমস্যা/ত্রুটি : ক) শিক্ষকরা বা ইনভিজিলেটরগণ প্রায়ই দেরীতে পরীক্ষার হলে যান। শিক্ষক দেরী করে আসলে বেশ কয়েকটি সমস্যা সৃষ্টি হয়।
র) পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট পূর্বে ঐ হলে রিজার্ভ শিক্ষককে পাঠানো যায়।
রর) পরীক্ষার্থীদের নিকট দেরীতে উত্তরপত্র বিলি করা হয়।
ররর) পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠায় তাদের তথ্যগুলো তাড়াতাড়ি লিখতে গিয়ে ভুল   করে এবং তাদের মধ্যে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
রা) পরীক্ষার্থীরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক মিনিট পরে প্রশ্নপত্র হাতে পায়। ফলে তাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টির ফলে উত্তরপত্র লিখার জন্য স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগে।
খ) পরীক্ষার হলে শিক্ষকগণ কিছু কিছু পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে স্বাক্ষর করেন না। কোন কোন বিষয়ে শুধু বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হয়। কখনো কখনো দেখা যায় কোন কোন শিক্ষক সেই বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রে স্বাক্ষর করেন না।
গ) কখনো এমন হয় যে শিক্ষক না খেয়ে এবং নামায আদায় না করেই তাড়াহুড়া করে পরীক্ষার হলে চলে যান। এতে করে ঐ শিক্ষককে খাওয়ার সময় বা নামায আদায়ের সময় দিতে গিয়ে পরীক্ষা বিভাগকে হিমশিম খেতে হয়।
ঘ) কোন কোন শিক্ষক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার সময় পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্রের সাথে উত্তরপত্রে লিখিত তথ্যগুলো যাচাই করে দেখেন না। তাই পরীক্ষার্থী তার শ্রেণি, শাখা, রোল নং, বিষয় ইত্যাদি ভুল লিখলেও হল ইনভিজিলেটর হিসেবে ঐ শিক্ষক ভুল তথ্য সম্বলিত উত্তরপত্রে মুখস্থ স্বাক্ষর দিয়ে যান। এতে করে পরীক্ষা বিভাগকে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়।
ঙ) পরীক্ষা শেষে প্রত্যেক শ্রেণির উত্তরপত্রগুলো পরীক্ষার্থীর রোল নং এর ক্রমানুযায়ী সাজাতে হয় এবং সবার উপরের উত্তরপত্রের উপর কক্ষ নং ও সেখানে কতটি উত্তরপত্র আছে তা স্পষ্ট করে সংখ্যায় লিখতে হয়। সে অনুযায়ী পরীক্ষা বিভাগের কাছে তা জমা দিতে হয়। কোন কোন শিক্ষক এ কাজটি করেন না। আবার করে থাকলেও ভুল সংখ্যা লিখে দেন। পরীক্ষা বিভাগের লোকজন যখন পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্রগুলো শ্রেণি ও শাখা অনুযায়ী সর্টিং করতে যান তখন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী উত্তরপত্রগুলোর সংখ্যায় মিল পাওয়া যায় না। সে সময় এত বেশি উত্তরপত্র সর্টিং করতে গিয়ে শিক্ষকের ভুল সংখ্যা লিখে দেওয়ার কারণে পরীক্ষা বিভাগকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
চ) সবচেয়ে বেশি অবাক করা ঘটনা হলো মাঝে মাঝে কোন কোন শিক্ষক পরীক্ষা শেষে যখন হল থেকে চলে আসেন তখন দেখা যায় দুই/একটি উত্তরপত্র পরীক্ষার ঐ কক্ষেই রেখে এসেছেন। তিনি তখন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন।
ছ) পরীক্ষার হলে শিক্ষককে হাজিরা খাতায় পরীক্ষার্থীর হাজিরা নিতে হয়। অনেক সময় শিক্ষক পরীক্ষার্থীর হাজিরাটি সঠিকভাবে নেন না। দেখা যায় পরীক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানো হয়। আবার উল্টোটিও ঘটে থাকে।
জ) পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা মোবাইলে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থাকেন। এতে করে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে উত্তর লিখতে মনোযোগের ঘাটতি সৃষ্টি হয়।
ঝ) শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। এ পেশার একজন শিক্ষকের আচরণ কিংবা কথা-বার্তা হবে শিক্ষার্থীর জন্য অনুসরণীয় আদর্শ স্বরূপ। অনেক সময় দেখা যায় একজন শিক্ষক পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীর টেবিলের উপর (হাই বেঞ্চ) বসে মোবাইল টিপছেন।
ঞ) পরীক্ষা চলাকালীন সময় দুই/তিন হলের শিক্ষকগণ একত্রে বারান্দায় এসে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করেন। এতে করে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা একজন অন্যজন হতে দেখে লেখার সুযোগ পায়।
ট) একজন শিক্ষক সর্বাবস্থায় হবেন দায়িত্ববান, কর্তব্যনিষ্ঠ, একাগ্রচিত্ত, সৎ ও উদার নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। তিনি থাকবেন রাগ-বিরাগ, অনুরাগ এবং পক্ষপাতিত্বের উর্ধ্বে। কোন কোন পরীক্ষার হলে দেখা যায় শিক্ষকগণ দায়িত্ববোধ, কর্তব্যনিষ্ঠ আর একাগ্রচিত্তে সুচারুভাবে পরীক্ষার হল পরিচালনা করছেন। ঐ হলের পরীক্ষার্থীরা নিজেদের পরীক্ষা নিজেরাই দিচ্ছে। অন্য কারো কাছ থেকে দেখে লেখার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার এর উল্টো চিত্রটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
কোন কোন হলে লক্ষ্য করা যায় শিক্ষক অত্যন্ত দায়িত্বহীন আচরণ করছেন; তিনি মোটেই কর্তব্যনিষ্ঠ নন। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা ফ্রি স্টাইলে একজনের উত্তরপত্র দেখে অন্যজন লিখে থাকে। এতে করে উত্তরপত্র মূল্যায়নে এক হল থেকে অন্য হলের পরীক্ষার্থীদের ফলাফলে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
ঠ) কখনো কখনো এমনও অভিযোগ পাওয়া যায় যে বহুনির্বাচনী কিংবা সৃজনশীল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পূর্বেই শিক্ষক পরীক্ষার্থীর নিকট হতে উত্তরপত্র নিয়ে যান। আবার কখনো কখনো এমনও হয় উত্তরপত্র তাড়াতাড়ি জমা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রলুদ্ধ করা হয়।
৬. উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা/ত্রুটি :
ক) একটি সৃজনশীল প্রশ্নের চারটি অংশ থাকে। নিয়মানুযায়ী এই চারটি অংশের প্রতিটির জন্য আলাদাভাবে মার্কিং করতে হয় বা প্রাপ্ত নম্বর আলাদাভাবে দিতে হয়। কোন কোন পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়নে এ কাজটি করেন না। তিনি এই চারটি অংশের জন্য গড়ে একবার নম্বর দিয়ে দেন। শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্র হাতে পেয়ে বুঝতে পারে না কোন অংশের জন্য কত নম্বর পেলো।
খ) মার্কিং স্কিম না থাকায় মূল্যায়ন সঠিক হয় না। একজন পরীক্ষক একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে নম্বর দিচ্ছেন, দেখা যায় অন্য একজন পরীক্ষক ঠিক একই প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়ন করতে গিয়ে অনেক কম বা বেশি নম্বর দিচ্ছেন। এতে করে উত্তরপত্র মূল্যায়নে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
গ) একজন পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে নম্বর প্রদান করবেন পরীক্ষার্থী যে উত্তর লিখেছে সে উত্তরের মার্জিন এর বাহিরে। দেখা যায় পরীক্ষক এ নিয়মের ব্যত্যয় সৃষ্টি করেন। তিনি পরীক্ষার্থীর লিখিত উত্তরের মাঝখানে নম্বর দিয়ে দেন।
ঘ) উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে একজন পরীক্ষককে উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠার নির্দিষ্ট স্থানে স্বাক্ষর করতে হয়। কোন কোন পরীক্ষক এ নিয়মটি মানেন না। তিনি প্রথম দিকের দুই/তিনটি উত্তরপত্রে স্বাক্ষর করেই দায়িত্ব শেষ করেন। বাকী উত্তরপত্রগুলো স্বাক্ষরবিহীন থাকে।
ঙ) উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে প্রাপ্ত নম্বর ক্রমানুযায়ী উঠাতে হয়। সৃজনশীল, বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মোট নম্বর এবং প্রাপ্ত নম্বর কাভার পৃষ্ঠায় আলাদাভাবে উঠিয়ে মোট নম্বর ও প্রাপ্ত নম্বর লিখতে হয়। পরীক্ষক সম্পূর্ণ কাজটি সম্পাদন করেন না। আংশিক করে থাকেন।
চ) একজন পরীক্ষক সকল শিক্ষার্থীকে সমান দৃষ্টিতে দেখবেন। কখনো দেখা যায় কোন কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউকে কাছের শিক্ষার্থী আবার কাউকে দূরের শিক্ষার্থী বলে বিভাজন করে ফেলেন। কাছের শিক্ষার্থীকে বেশি নম্বর দেন আর দূরের শিক্ষার্থীকে কম নম্বর দেন। শিক্ষকের মধ্যে যদি নৈতিক মান না থাকে তাহলে যে সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন তাদের মধ্য হতে কারো কারো ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
ছ) শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার পর একজন পরীক্ষককে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর একটি ছাপানো নম্বর ফর্দে উঠিয়ে তাতে পূর্ণ স্বাক্ষর দিতে হয়। পরীক্ষক অনেক সময় নম্বর ফর্দে স্বাক্ষর করেন না। আবার তিনি যে নম্বর ফর্দ শ্রেণি শিক্ষকের কাছে জমা দেন তাতে মাঝে মাঝে এমনভাবে কাটাকাটি/ঘষামাজা করেন যে তিনি কত নম্বর দিয়েছেন তা জানার জন্য শ্রেণি শিক্ষককে তার কাছে যেতে হয়।
জ) একজন পরীক্ষক একজন মানুষ হিসেবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে ভুল করতেই পারেন। তিনি হয়তো কোন প্রশ্নের উত্তরে নম্বর প্রদান করেননি কিংবা নম্বর দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু গণনা করেননি। আবার এমনও হয় শিক্ষার্থীর উত্তর ঠিকই সঠিক হয়েছে অথচ পরীক্ষক হিসেবে শিক্ষক সেই সঠিক উত্তরটি কেটে দিয়েছেন। এই উত্তরপত্রগুলো যখন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হয় তখন শিক্ষার্থীরা ভুলগুলো চিহ্নিত করে এবং বিনয়ের সাথে ঐ শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষক সেই সময়ে শিক্ষকসুলভ দরদী আচরণ করেন না। শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর দিতে আগ্রহী হন না। [চলবে]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ