শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এসএসসি’র গণিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা: আগৈলঝাড়ায় কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিন ঘন্টার চলতি এসএসসি’র গনিত পরীক্ষা  চার ঘন্টা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারপরেও ২০১৬ সালের ভুল প্রশ্নপত্রে চার ঘন্টা পরীক্ষা নেয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্ন ভুল, সৃজনশীল পরীক্ষার প্রশ্ন সংকটের কারণে ফটোকপি দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন ও হতাশা প্রকাশ করছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। ইউএনও’র সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিন ঘন্টার পরীক্ষা চার ঘন্টা ব্যাপি নেয়ার ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সংবাদ কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রের সামনে গেলে সেখানে উপস্থিত পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল কোন সাংবাদিককে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেননি। তিনি কেন্দ্রের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। মোবাইল ফোনে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে চার ঘন্টা পরীক্ষা নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রশ্নপত্র দেরিতে দেয়ায় তাদের পরীক্ষার সময় বাড়ানো হয়েছে। অবশ্য তিনি প্রথমে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে তার কাছে পুনরায় ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল। তবে বিষয়টি তাৎক্ষনিক বরিশাল শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। বোর্ডের বরাত দিয়ে ইউএনও রাসেল আরও জানান, বোর্ড তাকে মৌখিকভাবে বলেছেন যে, উত্তরপত্র দেখার সময় ওই ভাবেই মুল্যায়ন করা হবে। নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রে মোট ৩৮৩জন পরীক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে ৮১জনকে ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে তাদের ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহের খবর কেন্দ্র সচিব বা হল সুপার তাকে জানায়নি। সৃজনশীল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার পরে পরীক্ষার্থীদের কাছে ভুলের বিষয়টি ধরা  পরে। এই ৮১জন পরীক্ষার্থীর ভাগ্যে কি ঘটবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।   
উপজেলার কাঠিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬নং হলের পরীক্ষার্থী অপূর্ব বাড়ৈ, অমিয় অধিকারী, অরিন্দমসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের হলে ১২জন পরীক্ষার্থী শনিবার গনিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরকম সকল হলেই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। যথাসময়ে তাদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। পরীক্ষার্থীরা প্রথমে এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অন্তত ত্রিশ মিনিট পর তাদের ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বলে পরীক্ষার্থীরা হল সুপার ও কেন্দ্র সচিবকে অবহিত করে। কেন্দ্র সচিব ও শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ ও হল সুপার কাঠিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিল চন্দ্র কর পরীক্ষার্থীদের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে সরবরাহকৃত প্রশ্নেই তাদের উত্তর লিখতে বলেন। শিক্ষার্থীরা সেই মোতাবেক ২০১৬ সালের সরবরাহ করা ভুল প্রশ্নে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হয়। এমসিকিউ পরীক্ষার পর সরবরাহকৃত সৃজনশীল প্রশ্ন বিতরণকালে প্রশ্নপত্রে সংকট ধরা পরে।  এসময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করে পাশ্ববর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী ও গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ফটোকপি করা প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সরবরাহকৃত ফটোকপি করা সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয় পরীক্ষার্থীরা।  এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, দ্বায়িত্বে অবহেলার কারণে তিনি কেন্দ্র সচিব, হল সুপারসহ অন্যন্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে শুপারিশ করবেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রাঙ্গুনিয়া: রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গতকাল শনিবার এসএসসি পরীক্ষার গনিত শিক্ষার প্রশ্নপত্রের স্থলে কৃষি শিক্ষা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছে উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পূর্ব নির্ধারিত গণিতের স্থলে কৃষি শিক্ষা প্রশ্নপত্র পেয়ে শিক্ষার্থীরা হতবাক হয়ে যায়। বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ জানালে পুনরায় সরবরাহকৃত প্রশ্ন ফেরত নেয়া হয়। র্দীঘক্ষণ গণিত প্রশ্নপত্রের জন্য পরীক্ষার্থীরা অপেক্ষা করতে হয়। জানা গেছে, সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোড নং ১০৯ মুলে গনিত পরীক্ষার জন্য রাঙ্গুনিয়া থানা হেফাজত থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে নেয়া হয়। প্যাকেটের গায়ে গনিত লিখা থাকলেও কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর সময়ে খুলে কৃষি শিক্ষা তৃতীয় বিষয়ের কোড নং ১৩৪ (খ- সেট) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। যার পরীক্ষা আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী পরীক্ষা অনুষ্টিত হওয়ার নির্ধারিত রয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র সুত্র জানায়, তাৎক্ষণিক ভাবে পার্শ¦বর্তী শিলক উচ্চ বিদ্যালয়, পদুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে  সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গণিতের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, মাত্র ২ টি প্যাকেটে প্রশ্নের ব্যতিক্রম পাওয়া গেছে। গনিতের স্থলে কৃষি শিক্ষা প্রশ্নপত্র পাওয়ার ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডি করা হয়েছে। ব্যতিক্রমি কৃষি শিক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো রাঙ্গুনিয়া থানা গোপন হেফাজতে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর একঘন্টা আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ফাঁস হওয়া গণিত পরীক্ষার হুবুহু প্রশ্নপ্রত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহকালে খায়রুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবককে আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন। আটকৃকৃত ওই যুবককে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলেও তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃত খায়রুল ইসলাম চিরিরবন্দর উপজেলার গলাহার গ্রামের লতিফুর রহমানের ছেলে। সে দিনাজপুর সরকারী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। চলতি ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় গতকাল শনিবার ছিলো গণিত বিষয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর এক ঘন্টা আগেই খায়রুল ইসলাম চিরিরবন্দর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে স্মার্ট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গণিত পরীক্ষার হুবুহু প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহের চেষ্টা করে। এসময় চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী তাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে এবং মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। পরীক্ষা শুরু পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্রের সাথে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবুহু মিল খুজে পায়। চিরিরবন্দর থানার ওসি হারেসুল ইসলাম জানান, আটককৃত খায়রুল ইসলামকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর এর সাথে জড়িত আরও ৩ যুবককে দিনাজপুর শহর থেকে আটক করা হয়। তবে তদন্তের স্বার্থে পরে আটক ৩ যুবকের নাম জানায়নি পুলিশ। ওসি জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত চক্রকে আটক করার জন্য তারা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। 
এই ঘটনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়।  এদিকে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পরীক্ষা শুরুর আগে উপজেলার গোয়ালডিহি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে  একই পদ্ধতিতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করার খবর পাওয়া গেছে।
নওগা : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় শনিবার বদলগাছী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের মহিলা কলেজ শাখায় এসএসসি গণিত পরীক্ষায় নকল সরবরাহের দায়ে মহিলা কলেজের পিয়ন মোশারফ হোসেনকে হাতে নাতে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে ২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আলী বেগ। একই সময় যে ২ ছাত্রের নিকট নকল সরবরাহ করা হয় সেই ২ পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়। বহি®কৃতরা বৈকুন্ঠপুর স্কুলের ছাত্র সৈকত হোসেন ও আছির হোসেন। পাবলিক পরীক্ষা সমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০ মোতাবেক ওই  পিয়নকে সাজা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব বদলগাছী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ জানান, নকল সরবরাহের দায়ে ১ পিয়নের জেল ও ২ পরীক্ষার্থী বহিস্কার হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ