শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নয়নকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ

খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীতে ক্রিকেটার তরুণী (১৪) ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার একমাত্র আসামী মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন ওরফে নয়ন রহমানকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলা দায়েরের ১৫ দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ধর্ষক নয়নকে গ্রেফতারে পুলিশের দৃশ্যমান তেমন কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে ধরার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এদিকে, আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় নির্যাতনের শিকার তরুণী এবং তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। বিশেষ করে ধর্ষক নয়নের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ওঠা-বসা এবং তার বাবা ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের কমিটির নেতা হওয়ায় ভয়ে তিনি মুখও খোলার সাহস পাচ্ছেন না। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটিকে নিয়ে তার বৃদ্ধ বাবা এখন অন্ধকার দেখছেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ক্রিকেট খেলার কথা বলে বটিয়াঘাটার কৈয়া বাজারের মাঝের বেড়ী সংলগ্ন মৎস্য ঘেরে নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন ওরফে নয়ন রহমান ওই তরুণী ক্রিকেটারকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে এবং তার বাবাকে গুলী করে হত্যার হুমকি দেয় সে। এ কারণে সে ভয়ে মুখ খোলেনি। পরবর্তীতে ৫ নবেম্বর নয়ন ওই তরুণীকে জরুরি কথা আছে- মর্মে নিরালা আদর্শ পার্কে ডেকে নেয়। সেখানে গেলে তার কোন সন্তান ধারণ হবে না- বলে একটি ট্যাবলেট সেবন করিয়ে আবারও ধর্ষণ করে। বিষয়টি গোপন থাকলেও সম্প্রতি তার শারীরিক পরিবর্তনে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনা প্রকাশ করে।
বিষয়টি জানতে পেরে তরুণীর বাবা নিরাপত্তা প্রহরী মো. গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন ওরফে নয়ন রহমানকে আসামী করা হয়। অভিযুক্ত নয়ন নগরীর নিরালাস্থ ২ নম্বর কাশেমনগর লেন এলাকার ইট-বালু ব্যবসায়ী বজলুর রহমানের ছেলে। তার বাবা বজলুর রহমান কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, ওয়ার্ড পুলিশীং কমিটির সদস্য এবং ২ নম্বর কাশেমনগর জনকল্যাণ সমিতি ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি।
এদিকে, মামলা দায়েরের ১৫ দিন পার হলেও ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তভার নিয়েছেন সদর থানার এসআই মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আসামী নয়ন খুলনার বাইরে আত্মগোপন করেছে। তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু ধরা সম্ভব হয়নি। তবে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
এর আগে স্থানীয় সূত্র জানান, ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর অভিযুক্ত নয়নের বাবা আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান শুক্রবার রাতে জনকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সরদার, এডভোকেট উজ্জ্বল, ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম সবুজ, প্রাক্তন ব্যাংকার হাফিজুর রহমান এবং শেখ শাহজালালসহ কয়েকজনকে নিয়ে গোলাম মোস্তফার বাড়িতে যান। সেখানে তারা শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার জন্য তরুণীর বাবাকে প্রস্তাব দেন। তখন তরুণীর বাবা বৃদ্ধ গোলাম মোস্তফা ধর্ষক নয়ন কর্তৃক তার মেয়েকে বিয়ে এবং দেনমোহর (কাবিননামা) বাবদ পাঁচ লাখ টাকা প্রদানের শর্তে বিষয়টি মীমাংসা করতে রাজি হন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান শুধুমাত্র ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। যে কারণে মীমাংসার উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
ধর্ষণের শিকার ক্রিকেটার তরুণী নগরীর নিরালা সংলগ্ন ২ নম্বর কাশেমনগর এলাকার বাসিন্দা নিরাপত্তা প্রহরী গোলাম মোস্তফার মেয়ে। নগরীর বানরগাতি ইউসেফ স্কুল থেকে সে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিসহ বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছে সে। কিন্তু ধর্ষকের পাপের ফসল এখন তার গর্ভে। অসহ্য যন্ত্রণা এবং লোকলজ্জার ভয়ে মাতৃহারা এ তরুণীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সে এখন আর প্রিয় খেলা ক্রিকেটের দিকে ছুটতে পারছে না। মৃত্যু হয়েছে সম্ভাবনাময় এবং উদীয়মান একটি প্রতিভার।
সুন্দরবনে অবাধে চলছে
পারশে পোনা নিধন
পারশে পোনাসুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে চলছে পারশে মাছের পোনা নিধন। মৎস্য প্রজনন এলাকা বা নিষিদ্ধ বনাঞ্চল ও বনের বিভিন্ন নদ-নদীতে নেটজাল দিয়ে পোনা ধরতে গিয়ে শতাধিক প্রজাতির জলজ সম্পদ নষ্ট করারও অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোনা নিধনকারীরা প্রথমে সাদা মাছ পরিবহনের জন্য ট্রলারের অনুমতি নেয়। এরপর সাদা মাছ আহরণের বদলে তারা সুন্দরবনের আলোর কোল, দুবলার চর, বাটলুরচর, ছাচানাংলা, পশুর, আগুন জ্বালা, কালির চর, গেড়া চালকি, বজবজা, হংসরাজ, আন্দারমানিক, ঢাংমারী, ছিচখালী ও মজ্জত নদী থেকে বিপুল পরিমাণ পারশে মাছের নিষিদ্ধ পোনা আহরণ করে। এক্ষেত্রে মনো ফিলামেন্ট নেট ব্যবহার করায় পারশে পোনাসহ নিধন হচ্ছে বাগদা, গলদা ও বিভিন্ন প্রজাতি মাছের পোনা।
পশুর নদী ওয়াটার কিপারের (সুন্দরবন কেন্দ্রিক পেশাজীবী সংগঠক) সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ জানান, একশ্রেডুর মহাজন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে গরিব জেলেদেরকে হাজার হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে পোনা নিধনের জন্য সুন্দরবনে পাঠায়। গোন চুক্তিতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এতে সহযোগিতা করছে কতিপয় বনকর্মকর্তা-কর্মচারী। তাই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পূর্ব সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কাশেম। তিনি দাবি করেন, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে এ পোনা নিধন করছে।
পূর্ব সুন্দরবনের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শাহীন কবির বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে সব ধরনের মাছের পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জেলেরা বনবিভাগের অফিস থেকে সাদা মাছের পারমিট নিয়ে অবাধে পোনা নিধন চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। তারা ক্ষুদ্রনেট দিয়ে ছাকনির মাধ্যমে পোনা আহরণের ফলে শুধু পারশে পোনা ধ্বংস হচ্ছে না, সমুদ্রের হাজার হাজার প্রজাতির জলজপ্রাণীও ধ্বংস হচ্ছে। তাছাড়া পারশে পোনা অন্যান্য প্রজাতির পোনার চেয়ে নরম প্রকৃতির হওয়ায় নেট জাল থেকে অন্য পাত্রে রাখার সময় অর্ধেকের বেশি মারা যায়।’ তিনি বলেন, ‘অবৈধ পোনা শিকারিদের আটকে বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, দ্রুতগামী ট্রলারের মাধ্যমে প্রতিটি দলে ৮/১০ জন জেলে দুশ’-তিনশ’ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪০-৫০ মিটার প্রস্থ নেট জালের মাধ্যমে প্রতি টানায় কয়েক মণ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ধরে নষ্ট করছে। এভাবে ২০-২৫টি দল প্রতিদিন পোনা শিকার অব্যাহত রেখেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা সুন্দরবনে অভিযানে আসলে অসাধু বনকর্মচারীরা আগেই জেলেদের জানিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ জেলেরা বনের মধ্যে পালিয়ে থেকে অভিযান শেষ হলে আবারও পোনা ধরতে থাকে।
পরিবেশবিদ ড. মিজানুর রহমান জানান, এভাবে পোনা শিকার করায় সুন্দরবনের জলজসম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে সামদ্রিক মৎস্য সম্পদ কমে দেশে আমিষের ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন (মংলা সদর দফতর) এর জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মিনারুল হক বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে বিভিন্ন এলাকায় পারশে মাছের পোনা ধরার খবরে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দবনের সন্ধ্যা নদীতে অভিযান চালিয়ে পাঁচ লাখ পারশে পোনা, এক লাখ শ্রীম্পফ্রাই জাল ও একলাখ কারেন্ট জালসহ চন্নু শেখ নামে এক জেলেকে আটক করা হয়।’ তিনি জানান, গত ১০ জানুয়ারি থেকে কোস্টগার্ড জাটকা রক্ষা অভিযান পরিচালনা করছে। কোস্টগার্ডের আওতাভুক্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মা ইলিশ ও জাটকা নিধনরোধে কোস্টগার্ড জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে বলে জানান সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ