বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পড়াধরা খেলা

আব্দুস সালাম : সামিরা ও নাজিয়া দুই বান্ধবী। ওরা একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। ভবনের অষ্টম তলায় পাশাপাশি ইউনিটে ওদের বসবাস। অবসর সময়ে অথবা ছুটির দিনে ওরা একে অপরের বাসায় গিয়ে ে গল্পগুজব ও খেলাধুলা করে সময় কাটায়। ভবনের নিচতলায় খেলাধুলার জন্য কোন সুব্যবস্থা না থাকায় ওদের মা-বাবার নিষেধ রয়েছে ওরা যেন কক্ষনও নিচে না নামে। তাই সামিরা নাজিয়াদের বাসায় গেলে অথবা নাজিয়া সামিরাদের বাসায় গেলে ওদের মা-বাবা কোন আপত্তি করেন না বরং উনারা খুশিই হন। সামিরার ছোট্ট একটি ভাই আছে। সে সারাদিন সেই ভাইটির সঙ্গে দুষ্টুমি করে। সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে চায় না। সুযোগ পেলেই পড়াশুনায় ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে। ওদিকে নাজিয়ার মা-বাবা দু’জনায় চাকরি করেন। গ্রামের দুর সম্পর্কের এক ফুফু নাজিয়াদের বাড়িতে থাকেন। মা-বাবার অনুপস্থিতিতে উনিই মূলত নাজিয়াকে দেখাশুনা করেন। ক্লাসের পড়া সে নিয়মিত তৈরি করে ঠিকই কিন্তু পূর্বের অনুশীলনী বা পাঠগুলো আর ঠিকমতো পুনরালোচনা করে না। বেশির ভাগ সময় সে কম্পিউটারে কার্টুন দেখে অথবা গেম খেলে। আর সামিরা এলে তো কথাই নেই। দু’জনা বেশ আমোদ-ফূর্তি করে সময় কাটায়।  

সামিরা ও নাজিয়া দু’জনায় মূল্যায়ন পরীক্ষায় তেমন ভালো করতে পারেনি। এর ফলে ওদের মা-বাবা ওদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। ভালোভাবে পড়াশুনার করার জন্য খুব চাপ দিতে থাকেন।  তারপরও তারা পড়াশুনায় ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করে না। এভাবে দেখতে দেখতে একদিন বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসে। বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নগুলো তাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। পরীক্ষায় সব প্রশ্ন কমন পড়ে না। তারা মাথা ঠা-া রেখে পরীক্ষা দিল ঠিকই কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হলে দেখা যায় যে, তারা কেউই পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি। কোনরকমে উত্তীর্ণ হয়েছে। অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবরা ওদের চেয়ে অনেক ভালো করেছে। এর ফলে সামিরা ও নাজিয়া’র মনটা যেমন খারাপ হয় তেমনি ওদের মা-বাবাদের মনটাও খারাপ হয়। উপর ক্লাসে ওঠার পর তারা দেখে যে, যেসব বন্ধু-বান্ধবরা ভালো ফলাফল করেছে স্যাররা তাদেরকে বেশি বেশি আদর-স্নেহ করেন, বেশি বেশি গুরুত্ব দেন। আবার বাসাতে এলে মা-বাবাও ওদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। সবসময় বকাবকি করেন আর পড়াশুনার জন্য চাপ দিতে থাকেন। ঠিকমতো কম্পিউটার ও টেলিভিশন দেখতে দেন না। তাই ওদের মনটা খুব খারাপ থাকে। অবসার সময়ে জানালা ধরে বাইরের খোলা আকাশ আর পিচঢালা পথে যানবাহন চলাচলের দৃশ্য দেখে ওদের সময় কাটে। দুই বান্ধবীর সঙ্গেও ঠিকমতো দেখা-সাক্ষাৎ হয় না বললেই চলে।

একদিন সামিরা ও নাজিয়া দু’জনায় সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা এখন থেকে ভালোভাবে পড়াশুনা করবে। ওরা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যে, যেভাবেই হোক আমাদের পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে। প্রয়োজনে আমরা একে অপরকে সাহায্য করব। স্কুল থেকে ওরা বাসায় এসে প্রথমেই ক্লাসের পড়াগুলো ভালোভাবে তৈরি করে। তারপর অবসর সময়ে ওরা একে অপরের বাসাতে বইয়ের পড়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে। বিভিন্ন বই সামনে নিয়ে একজন অন্যজনকে পড়া ধরে। এতে কেউ বেশি পারে আবার কেউ কম পারে। ওরা নিজেরা নিজের মধ্যে ভালো করার জন্য প্রতিযোগিতা করে থাকে। একদিন হয়তো ‘বাংলা ব্যাকরণ’ সামনে নিয়ে সিলেবাস অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াধরা খেলায় মেতে ওঠে। যেমন- একজন অন্যজনকে ১০টি করে এককথায় প্রকাশ বা সন্ধি-বিচ্ছেদ বা বিপরীত/সমার্থক শব্দ ধরে। তারপর হিসাব করে দেখে কার কয়টা ভুল হলো। সে মোতাবেক একজন প্রথম হয় আর অপরজন দ্বিতীয় হয়। অনরূপভাবে অন্যদিন হয়তো ঊহমষরংয এৎধসসধৎ এর  চধৎঃং ড়ভ ঝঢ়ববপয, এবহফবৎ, ঞবহংব, অৎঃরপষব নিয়ে পড়াধরা খেলা করে। তারা টেলিভিশন ও কম্পিউটার দেখা কমিয়ে দেয়। মা-বাবার সঙ্গে বসে মাঝে মাঝে খবর এবং শিক্ষনীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখে থাকে। 

এভাবে পড়া ধরাধরির মাধ্যমে সামিরা ও নাজিয়া আনন্দ খুঁজে পায়। মাঝে মাঝে ওদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। একসময় বইয়ের সব পড়া তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা হয়ে যায়। তাই কেউ কাউকে সহজে হারাতে পারে না। দুই বান্ধবীর পড়াধরা খেলা দেখে মা-বাবারাও খুশি হয়। ক্লাসে স্যাররা বই থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা খুব সহজেই উত্তর দিতে পারে। প্রথম মূল্যায়ন পরীক্ষাতে ওরা বেশ ভালো করে। ভালো ফলাফল দেখে ওরা নিজেরা যেমন খুশি তেমনি ওদের স্যাররা এবং মা-বাবারাও খুশি। মা-বাবার উৎসাহে পড়াধরা খেলা করে ওরা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পরীক্ষায় আরও ভালো করার জন্য  চেষ্টা করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ