শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি’র বিরুদ্ধে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের ভ্যাট এলটিইউ কমিশনার মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সোমবার দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, রবি’র বিরুদ্ধে বিশাল অংকের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি খাতে আইনি লড়াইয়ে ১৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলায় হেরে গেছে রবি। গতকাল সোমবার উচ্চ আদালত রবিকে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দ্রুত এ অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানা গেছে, রবি অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার উপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও মূসক এবং বিটিসিএলকে দেওয়া সেবার উপর মূসক বাবদ মোট ১৮ কোটি ৭২লাখ ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না করে ফাঁকি দিয়েছে। এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কাছে বিভিন্ন বকেয়া ভ্যাট বাবদ ৯২৪ কোটি ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ টাকা আদায়ে চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করে এনবিআর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলটিউ ভ্যাট কমিশনার মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রবির প্রধান নির্বাহী (সিও) আমাকে বার বার এসএমএস দিচ্ছেন। তিনি বলছেন- বাধ্য করে নাকি ভ্যাট আদায় করা যাবে না। রবি ভ্যাট পরিশোধ করবে না বলেও তিনি হুমকি দিচ্ছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রবি ভ্যাট দিতে বাধ্য। বাধ্য করাই এনবিআরের কাজ। রবিকে সরকারের প্রাপ্য ভ্যাট পরিশোধে বাধ্য করা হবে। তা না হলে আমরাই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দেব। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার আরও বলেন, বকেয়া রাজস্ব আদায়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক দাবিনামা ইস্যু করা হলেও রবি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে তৎপর ছিল না। আমরা তাদের যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছি। অন্যান্য কোম্পানি যেখানে ইন্টারকানেকশন ফি ও মার্জ ফির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভ্যাট দিচ্ছে, শুধু তারা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু তাই নয় কোম্পানিটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে রেয়াত সুবিধা নিয়েছে, যা মূসক আইনে প্রযোজ্য নয়। এজন্য আমরা চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করার পর আজকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য রবির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে এখন পর্যন্ত রবিকে দেয়া পাঁচটি চিঠির মধ্যে একটি চিঠিতে কোম্পানিটির কাছে ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা টাকা দাবি করেছে এলটিইউ। ওইসব চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ মূসক অডিটের পাঁচ সদস্যের কমিটি কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এসএপি সফটওয়্যার খাতে অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা এবং অপরিশোধিত উৎসে মূসক বাবদ ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা কম পরিশোধের প্রমাণ পায়। অর্থাৎ অনাদায়ী হিসেবে মোট ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা আদায়ের জন্য মূসক আইন-১৯৯১ এর ৫৫ এর ৩ উপধারা অনুযায়ী দাবিনামা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পৃথক অপর চিঠিতে ইন্টারকানেকশন চার্জ হিসেবে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা দাবিনামা চূড়ান্ত করে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ। এর আগে এ দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মূসক আইন- ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছিল সংস্থাটি। কোনো জবাব না পাওয়ায় এবারে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে। আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাইডার ও সুইচ ইত্যাদি আমদানিতে রেয়াত গ্রহণ করে রবি আজিয়াটা ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে আর একটি চিঠিতে দাবি করেছে মূসক কর্তৃপক্ষ, যা মূসক আইন-১৯৯১ এর ৯ (১)(ঙ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বকেয়া ওই অর্থ আদায়ে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করার পর রোববার দাবিনামা চূড়ান্ত করে নোটিশ দেয় বৃহৎ করদাতা ইউনিট। অপর চিঠিতে টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, টেলেক্স, ফ্যাক্স বা ইন্টারনেট সংস্থা ও সিমকার্ড সরবরাহকারীসহ বিবিধ সেবার ওপর প্রযোজ্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ভ্যাটবাবদ চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করা হয়। সর্বশেষ চিঠিতে রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একীভূতকরণের ক্ষেত্রে মার্জ ফি বাবদ ১০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেলের অনুকূলে তরঙ্গ মূল্য সমন্বয়বাবদ ৫০৭ কোটি টাকাসহ মোট ৬০৭ কোটির ওপর প্রযোজ্য উৎসে মূসক হিসেবে ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে, যা মূসক আইন-১৯৯১ এর ৬(৩), ৬(৪ক), ৬ (৪খ), ৬(৪ঙ) ধারা ও বিধিমালা অনুযায়ী আদায়যোগ্য। অনাদায়ী ওই টাকার দাবিনামা মূসক আইনের ৫৫ এর (৩) উপধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়। আর দাবিকৃত রাজস্ব অনতিবিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান জন্য অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিটি চিঠিতে।
এসব বিষয়ে জানতে রবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে অপরাগকতা প্রকাশ করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ