বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিক্রির রেকর্ড দিয়ে শেষ হলো একুশের বই মেলা

স্টাফ রিপোর্টার : রেকর্ডসংখ্যক বই বিক্রি দিয়ে গতাল শেষ হলো মহান একুশের বই মেলা। গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ছিল মেলার শেষ দিন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এবার বই মেলায় রেকর্ডসংখ্যক বই বিক্রি হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, এবছর একশ’ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। তবে আমি মনে করি, গতবারের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। আর এবারে বইও প্রকাশ হয়েছে রেকর্ডসংখ্যক। তিনি জানান, মেলার ২৭তম দিনেই আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বইয়ের মান প্রসঙ্গে বলেন, এবারে প্রায় ৫শ’র মতো মানসম্পন্ন বই প্রকাশ পেয়েছে। এটি একটি বড় অর্জন এবং মেলার সার্থকতা ঠিক এখানেই।
পুলিশ বইয়ের মান যাচাই বা মনিটরিং করছেন এটি শিল্প-সাহিত্যের বিকাশে অন্তরায় কি-না-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সব কিছুই তো লাগাম ছাড়া চলতে পারে না। ধর্ম অবমাননা এবং ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে তো একজন লেখক যা ইচ্ছে তাই লিখতে পারেন না। অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দেয়া মানেই শিল্পের বিকাশ নয়, প্রগতিশীলতা নয়। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখা তো সময়ের দাবি।
মেলা ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নিয়ে বলেন, ভালোর শেষ থাকে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বইমেলাকে বিশ্বমানের করে তোলা। এরপরেও কিছু ত্রুটি থাকেই। অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতে পূর্ণতা আসবে বলে মনে করি।
প্রতিবছরের মতো এবারও ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বইমেলার দ্বার উন্মোচন হয়। মাসব্যাপী বহু গ্রন্থের সমাবেশ আর দেশি-বিদেশি খ্যাতিমান, উদীয়মান লেখকদের পদচারণায় মুখর এই মেলা সাঙ্গ হয়।
৫২ ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে ক্ষুদ্র কলেবরে যাত্রা শুরু করা এই বইমেলা আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ বইমেলার গুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। একদিন যারা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্চিত করেছিল তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও বাংলা ভাষাকে বিশ্বদরবারে উচ্চ আসনে আসীন করতে বইমেলার তাৎপর্য অপরিসীম। গতকাল বুধবার বইমেলার শেষ দিন একদিকে যেমন বিকেল গড়ানোর আগে থেকেই লেখক-পাঠক-ক্রেতাদের ভিড় জমছিল, ঠিক তার বিপরীতে অনেকের মনে কিছু বিষাদের ছায়াও দেখা গেছে। কারও কারও সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোটা মাসটি তাদের কাছে দারুণ কাটলেও আজ থেকে এখানে আর কেউ আসবে না বইয়ের খোঁজে, সাহিত্যের আড্ডা নিয়ে। তবে তারা আগামী বছর বইমেলার অপেক্ষায় থাকবেন বলেও জানান।
এ বছর প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো নতুন বই মেলায় এসেছে। যার মধ্যে কবিতার বইয়ের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে অধিকাংশই আছেন তরুণ কবি। তবে তাদের মধ্যে অনেকের লেখাতেই প্রতিশ্রুতিশীলতার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠেছে বলে ক্রেতা-পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
 মেলার শেষ দিন বিকেলে কথা হয় একাধিক লেখকের সঙ্গেও। তারাও এবারের বইমেলা নিয়ে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বইয়ের মান নিয়ে কারও কারও কিছু অভিযোগ আপত্তি থাকলেও সুন্দর পরিবেশে এমন মেলার আয়োজন করায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাঠকের সাড়াও অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন লিখিয়েগণ।
মেলা শুরুর প্রথম দিকে বেচাবিক্রির গতি কম থাকলেও শেষ কদিনে প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতাদের উপস্থিতি থাকায় খুশি প্রকাশক ও বিক্রেতারাও। আগামী দিনে বইয়ের মান মূল্যায়নের পাশাপাশি এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাপারে তারা আরও যতœবান হবেন বলেও জানান।
গতকাল বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিন হওয়ায় বইপ্রেমীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। মেলায় আসা বইপ্রেমীরা এদিন কিনেছেন পছন্দের লেখকের বই। স্টলে স্টলে বইপ্রেমীদের ভিড় সামলাতে ভীষণ ব্যস্ত দেখা যায় স্টলের বিক্রয়কর্মীদের। চাহিদা অনুযায়ী বই দিতে তারা হিমশিম খেয়েছেন।
কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জাহিদ হাসান বলেন, প্রতিবছর শেষ দিনে বই বিক্রি বেশি হয়। অনেকে শেষ দিন বই কেনার জন্য পরিকল্পনা করেন। সে হিসেবে আজ বইপ্রেমীদের ভিড় থাকাটাই স্বাভাবিক। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। মেলায় যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই বই কিনে ফিরছেন। সবার হাতে ব্যাগভর্তি বই। পছন্দের বই সংগ্রহে কুমিল্লা থেকে এসেছেন ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহীন। বলেন, মেলায় আসার পরিকল্পনা করেছিলাম শুরু থেকেই। কিন্তু ক্লাস শিডিউলের কারণে আসা হয়নি।  শেষ মুহূর্তে মেলায় আসতে পেরে ভীষণ খুশি এ পাঠক। কিনেছেন পছন্দের সব বই।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সোহরাব হাসান বলেন, বইমেলায় আজকের দিনটিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। অনেকেই পরিকল্পনা করেন শেষ দিনে বই সংগ্রহ করবেন। সে হিসেবে সব পাঠকই বই কিনছেন। কথা হলো মধ্যবয়সী পাঠক আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি এসেছেন গাজীপুর থেকে। বলেন, যেহেতু বইমেলা শেষ হচ্ছে, তাই শেষবারের মতো বইপ্রেমী হয়ে চলে এলাম। এর আগেও কয়েকবার এসেছি, তবে কিছু কেনার বাকি রয়েছে, সেগুলো।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ