আবার ফুটেছে আমের মুকুল

সুুহৃদ আকবর : ‘বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল চাইনা হেনা, আনো আমের মুকুল’ (কাজী নজরুল ইসলাম)। বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, জাতীয় কবি গানটি কি জন্য রচনা করেছেন জানি না। তবে সেদিন সকালবেলা বাসে করে বাড্ডা থেকে শাহবাগ আসতে আমের মুকুল দেখে আমার মনটা ভরে গেল। ফাল্গুন মাসের কোন একদিন। মাথার উপর পরিস্কার সাদা-নীলাভ আকাশ। ছিমছাম পরিবেশ। ঝিরিঝিরি বাতাস। মনোমুগ্ধকর একটা দিন। পাখিরা ডাকছে। গাছের কচি পতারা খেলা করছে বাতাসের সাথে। চোখে পড়ল একটি আমগাছ। গাছের পাতাগুলো ধুলোমাখা। সে গাছে এত ফুল ফুটেছে, সে ধুলোমাখা পাতা কারো নজরেই পড়ছে না। সবার নজর মুকুলের দিকে। আমার নজরও আমের মুকুলের দিকে। আমার মতো অনেক মানুষকে আমের মুকুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম।
প্রতি বছরের তুলনায় এবার মনে হয় একটু আগেই শীত বিদায় নিয়েছে। অতিরিক্ত শীতের কারণে রাতে শিশির ঝরে পড়ার ফলে আমের মুকুল ঝরে পড়ে; এবার তা হয়নি। শীত কম থাকায় কুয়াশা নেই বললেই চলে। আর সে কারণে অকালে আমের মুকুলও ঝরে পড়েনি।
ইট-পাথুরে গড়া নিষ্ঠুর ঢাকা শহরের এক দুপুরে বাসে চড়ে আমের মুকুল দেখতে দেখতে কখন যে আমার সোনাঝরা কিশোরবেলার এক টুকরো মিষ্টি স্মৃতি আমার স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠল তা টেরই পেলাম না। মনে পড়ে আজ থেকে দশ পনের বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দক্ষিণে একটা আমগাছ ছিল। সে গাছে অনেক বড় বড় আম ধরত। আমরা বলতাম মাদলাই আম। শীতের শেষে যখন সে গাছে মুকুল আসত তখন আমার চোখে মুখে আনন্দের রেখা ফুটে উঠত। আমি সকাল সকাল শিশিরভেজা ঘাস মাড়িয়ে আলের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে আমাদের সেই মাদলাই আমের গাছতলায় যেতাম। কৌতূহলি দৃষ্টি আমের মুকুলের দিকে চেয়ে থাকতাম। মুকুলের দিকে তাকালে কেন জানি আমের ঘ্রাণ অনুভব করতাম। জিহ্বায় আমের স্বাদ আস্বাদন করতাম। আমার নাকে এসে লাগত আমের টক গন্ধ। গ্রামের দুষ্টু ছেলের দল কারণে অকারণে আমাদের সেই আমগাছ তলায় ঘুরে বেড়াত। আমরা মাঝে মধ্যে সেই আমগাছ তলায় গিয়ে পাহারা দিতাম যাতে দুষ্টু ছেলের দল আমের মুকুল ঝরাতে না পারে।