শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পাঁচ ঘণ্টার মানবিক বিরতি যথেষ্ট নয় -------------জাতিসংঘ

পূর্ব ঘৌটায় আসাদ সমথির্ত বাহিনীর উপসিস্থতি

২ মার্চ, রয়টার্স : সিরিয়ায় পূর্ব ঘৌটায় সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় রাশিয়া প্রস্তাবিত পাঁচ ঘণ্টার ‘মানবিক বিরতি’তে খুব একটা লাভ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসামরিকদের কাছে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে আরও সময় প্রয়োজন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাত বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটায় নতুন করে তা-ব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারই অস্ত্রবিরতির মাঝেই এক বিমান হামলায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরামর্শক জ্যান এগল্যান্ড বলেন, ‘আপনারা সিরিয়ায় সাহায্য করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। পূর্ব ঘৌটায় কোনও আন্তর্জাতিক আইনই মানা হচ্ছে না।’

পূর্ব ঘৌটায় প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস। ২০১৩ সাল থেকে এলাকাটি বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। রাজধানী দামেস্কের কাছে অবস্থিত এটিই সর্বশেষ এলাকা, যেটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকাটির পুনর্দখল নিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে অভিযান জোরালো করে সরকারি বাহিনী। এতে শত শত মানুষ হতাহত হয়। সম্প্রতি ১ হাজার ২৪৪ সম্প্রদায়ের ৫৬ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তার স্বার্থের কথা উল্লেখ করে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব আনে কুয়েত ও সুইডেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে রাশিয়ার স্বার্থগত বিরোধে সেই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি পিছিয়ে যায় কয়েকবার। অবশেষে, শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরীয় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন পায়। ত্রাণ ও চিকিৎসা সরবরাহে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে একমত হয় সংস্থাটির স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই।

জাতিসংঘের স্যাটেলাইন ইমেজে দেখা যায় ৩ ডিসেম্বর থেকে ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হযেছে পূর্ব ঘৌটা। 

মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদভিত্তিক ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর নিহত হয়েছে ৬৮ জন। এদের মধ্যে ১৭ জন শিশু, ১১ নারী ও ৪০ জন পুরুষ রয়েছেন। এই সময়ে আহত হয়েছে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে একটি এলাকাতেই ব্যবহার হয়েছে, ২৪ টি বিস্ফোরক ব্যারেল, ৭২৬ টি রকেট লাঞ্চার, ১৩৭ টি ভূমি থেকে নিক্ষিপ্ত মিসাইল ও ১৮২ টি বিমান হামলা।

আর ৫ ঘণ্টার এই বিরতিতেও মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এগল্যান্ড বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।

এদিকে সিরিয়ার ঘৌটায় বেশ কয়েকদিন বিমান হামলার পর এবার সেখানে ঢুকে পড়ছে আসাদ বাহিনী। তাদের সহায়তায় রয়েছে রাশিয়ান ও সিরিয়ার বিমান বাহিনীর বোমাবর্ষণ। আসাদ বাহিনী সেখানে প্রবেশ করে বেশ গোলকধাধায় পড়ছে। কারণ সেখানে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ ঘাঁটি তৈরি করে সেখানে অবস্থান করছে হাজার হাজার বিদ্রোহী। মাকড়সার জালের মতো ঘৌটার অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

শুধু মাটির নিচেই নয়, ট্যাঙ্ক, রকেট, আর্টিলারি থেকে শুরু করে সব ধরনের আধুনিক অস্ত্র রয়েছে বিদ্রোহীদের হাতে। দামেস্ক শহরের কাছে হারাস্তাসহ অন্যান্য শহরে এদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

আসাদ বিরোধীদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। তবে সবাই আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকেই ঘৌটা বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। এটিই সর্বশেষ এলাকা, যেটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা সত্ত্বেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দিনে পড়েছে যুদ্ধবিরতি। সকাল ৯টা থেকে রাত ২টা মাত্র পাঁচ ঘণ্টার বিরতির সময় বেঁধে দিয়েছে রাশিয়া।

যুদ্ধবিরতির পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এতটুকুও। বুধবারও চলেছে গোলাগুলি। এখনো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আটকে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। অব্যাহত বোমা হামলায় গত ১০ দিনে অন্তত ৬০০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। বোমা হামলার মধ্যে আটকে পড়াদের জন্য কোনো ত্রাণ সরবরাহও সম্ভব হয়নি। ত্রাণ বোঝাই প্রায় ৪০টি ট্রাক ওই এলাকায় ঢোকার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির অনুমোদন সত্ত্বেও হামলা বন্ধ না হওয়ায় ট্রাকগুলো ঢুকতে পারছে না। বুধবার রাতেই পূর্ব ঘৌটার হাউয়েসে আল দাওয়াহরা শহরসহ পূর্বাঞ্চলের ভেতরে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে আসাদের সিরিয়ান আরব আর্মির (এসএএ) সেনারা। এই এলাকা থেকে আটকে পড়া সিরীয়দের বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিলেও কোনো অধিবাসীই ঘৌটা ছেড়ে বের হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ