বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ভিয়েতনামী প্রেসিডেন্টের সফর

ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তার দেশ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান অর্জনের চেষ্টায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গারা যাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নেবে। গত রোববার দীর্ঘ ১৪ বছর পর দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আগত মিস্টার দাই কুয়াং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এদেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশ ভোজে সস্ত্রীক অংশ নিয়েছেন তিনি। সোমবার প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান অর্জনের ব্যাপারে ভিয়েতনামের সমর্থন চেয়েছিলেন। তার জবাবেই ভিয়েতনাম বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের উপস্থিতিতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহযোগিতার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের পরিবেশে ও সংস্কৃতিতে মিল রয়েছে। দুটি দেশেরই জনসংখ্যা অনেক এবং বিশাল বাজার রয়েছে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হওয়ার তথ্য জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং বলেছেন, দু’ দেশের মধ্যে আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে তথ্য এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় ছাড়াও অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতেও তারা একমত হয়েছেন। আমরা ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এমন এক সময়ে তিনি ঢাকা সফরে এসেছেন, বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশ যখন প্রচন্ড সংকট ও চাপের মুখে রয়েছে। এশিয়ার দেশ বলে শুধু নয়, ভৌগোলিক অবস্থানের পাশাপাশি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও মিয়ানমারের সঙ্গে ভিয়েতনামের যথেষ্ট মিল রয়েছে। দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কও অতি চমৎকার। এসব কারণে ভিয়েতনাম কোনো অনুরোধ জানালে মিয়ানমারের পক্ষে তা প্রত্যাখ্যান করা বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হওয়ার কথা নয়। এদিকে ঐতিহাসিক বিভিন্ন কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গেও ভিয়েতনামের সম্পর্ক গভীর। ১৯৬০-এর দশকে বছরের পর বছর ধরে ভিয়েতনাম যখন স্বাধীনতার জন্য সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবে নিয়োজিত ছিল বাংলাদেশের তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তখন ভিয়েতনামের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। সা¤্রাজ্যবাদী হামলা ও হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। শুধু তা-ই নয়, ১৯৭১ সালের মার্চে শুরু হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পেছনেও ভিয়েতনামের ছিল বিরাট ভূমিকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, ভিয়েতনামের জনগণ স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাছাড়া স্বাধীনতার পরপর ভিয়েতনাম ছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে। এভাবে সব মিলিয়েই বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। একই কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট যখন বলেন, তারা রোহিঙ্গা সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় বাংলাদেশের পাশে থাকবেন তখন আমরা উৎসাহিত হই। উজ্জীবিত হয়ে উঠি। বিষয়টি অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। তাই বলে কেবলই আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। এজন্য প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের সফরকালে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সমঝোতা এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সকল বিষয়সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে বাংলাদেশকে তৎপর হয়ে উঠতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে দেশটির সহযোগিতা নেয়ার প্রশ্নেও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভিয়েতনাম সত্যিই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ালে মিয়ানমারের পক্ষে পাশ কাটিয়ে যাওয়া এবং নিত্যনতুন প্রতারণাপূর্ণ কৌশলকে আশ্রয় করা সম্ভব হবে না বলেই আমরা মনে করি। মিয়ানমারকে বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের ভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বলাবাহুল্য, সবকিছু নির্ভর করবে সরকারের পরিকল্পনা, বুদ্ধিমত্তা এবং কার্যক্রমের ওপর।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ