বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কালিয়াকৈরে পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ॥ সংঘর্ষে আহত ৫০

কালিয়াকৈর সংবাদদাতা : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় রোববার এটিএস এ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মূল ফটক বন্ধ রেখে ভিতরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষের হয়। শ্রমিকের ইটপাটকেল এবং পুলিশে লাঠিচার্জ, টিয়াসেল ও গুলীতে সাত শ্রমিক গুলীবৃদ্ধ, এসআই ও পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছে।
পুলিশ, কারখানার শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় এটিএস এ্যাপারেলস লিমিটেড নামে তৈরি পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা এক মাসের বকেয়া বেতন ও পাঁচ মাসের ছুটির বকেয়া টাকার দাবিতে গত পাঁচ দিন ধরে ওই কারখানার ভিতরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। যার কারণে গত পাঁচ দিন ধরেই যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গত ১০ মার্চের মধ্যে শ্রমিকদের ওই বকেয়া বেতন ও ছুটির টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক ওই কারখানার ভিতরে ঢুকে। পরে তারা কাজে যোগদান না করে মূল ফটক বন্ধ রেখে কারখানার ভিতরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় দাবি মেনে না নেয়ায় তারা উত্তেজিত হয়ে কারখানার কর্মকর্তাদেরও অবরোদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরে কারখানার ভিতরে ঢুকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত ও অবরোদ্ধ কর্মকর্তাদের মুক্ত করার চেষ্টা চালায়। এতে কারখানার শ্রমিকরা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে। এক পর্যায় কারখানার শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে শিল্প-পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, খাদিজা, মাহমুদা, হিরাসহ পাঁচজন আহত হন। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা লাঠিচার্জ, তিন রাউন্ড টিয়ারসেল ও ১৮ রাউন্ড গুলী ছুড়ে। এতে সাত শ্রমিক গুলীবৃদ্ধসহ কর্মপক্ষে অর্ধশত পুলিশ-শ্রমিক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া গুলীবৃদ্ধদের মধ্যে সুমী খাতুন, লিলি আক্তার, আয়শা বেগম, রুমানা আক্তারের নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে সুমী খাতুন, আক্তার বেগম গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বাকিদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনায় প্রায় ৩৮-৪০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আহতদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম, জুয়েল রানা, রতন হোসেন, রুবেল হোসেন, হাসিনা আক্তার, স্বাধীন মিয়া, শিল্পী আক্তার, আসমা আক্তার, জয়া, আলাল হোসেন, রফিক মিয়া, শাহিদা আক্তার, সাহানাজ বেগম, মিলন রানী, নাছিমা আক্তারের নাম জানা গেছে। এদিকে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনার আতঙ্কে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ও আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক, যাত্রী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা।
কারখানার শ্রমিক মিলন হোসেন, মনিরা আক্তার, মরিয়ম বেগম, বকুল বেগম, জুলেখা বেগম, শফিকুল ইসলাম জানান, বকেয়া বেতন ও পাঁচ মাসের ছুটির টাকার দাবিতে কারখানার ভিতরে শান্তভাবে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিলাম। হঠাৎ পুলিশ কারখানার ভিতরে ঢুকে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও গুলী ছুড়ে । এতে প্রায় সাত শ্রমিক গুলীবৃদ্ধসহ প্রায় ৩৮-৪০ জন শ্রমিক আহত হন।
ওই কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। ওই বকেয়া বেতন ১০ মার্চের পরিবর্তে ১৬ মার্চে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শ্রমিকরা মানেনি। এ ঘটনায় ওইদিনের জন্য কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শিল্প-পুলিশ গাজীপুর-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, হঠাৎ শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের হামলায় এসআই সহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাউন্ড গুলী ছুড়া হয়েছে। এরপর শ্রমিকরা ছত্রবঙ্গ হয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ