শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কাশ্মিরে নিরাপত্তা অভিযানে নিহত ৩

বিক্ষোভ দমাতে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীল আগাম প্রস্তুতি

বিক্ষোভের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি প্রশাসনের

১২ মার্চ, দ্য ইকোনমিক্স টাইমস : দক্ষিণ কাশ্মিরের অনন্তনাগে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তিনজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন স্থানীয় সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। অপর একজনের পরিচয় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সোমবারের (১২ মার্চ) এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল কাশ্মির পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠার আশঙ্কায় সেখানে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনের দুই নেতাকে গৃহবন্দী করার খবর দিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। নিহতদের জানাজায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নৌহাট্টা, খানিয়ার, রাইনাওয়ারি, সাফাকাদল, এমআর গুঞ্জ, মাইসুমা, ক্রালখুদ এবং সুরা অঞ্চলকে কঠোর নজরদারির আওতায় নিয়েছে প্রশাসন। শ্রীনগরের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিক নিরপরাধ মানুষকে হত্যার পর তাদের জঙ্গি প্রমাণের চেষ্টার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তানের গোলাগুলি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত ৪ মার্চ রাতে সোপিয়ানে সেনা অভিযানে নিহত ৫ জনের তিন জনকে জঙ্গি সহযোগী দাবি করা হয়। যদিও স্থানীয়রা জানিয়েছিল তারা নিরপরাধ। ‘বেসামরিক নিরপরাধ’ হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে কাশ্মির। লোকজন বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসে। জারি করা হয় কারফিউ। স্কুল-কলেজ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ১০ মার্চ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলীয় এলাকার স্কুল-কলেজগুলো খুলে দেয়া হয়। জানানো হয়, ১২ মার্চ থেকে দক্ষিণ কাশ্মিরের স্কুল-কলেজগুলো খুলবে। তবে এদিন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নতুন করে তিনজন নিহত হওয়ার পর দক্ষিণ কাশ্মিরের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

পুলিশকে উদ্ধৃত করে দ্য ইকোনমিক টাইমস জানায়, নিহতদের একজনের নাম ঈশা ফাজিল। তার বাড়ি শ্রীনগরে। আরেকজনের নাম সৈয়দ ওয়াইস। তার বাড়ি দক্ষিণ কাশ্মিরের কোকেরনাগ এলাকায়। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, তারা দুজনই প্রকৌশলবিদ্যার শিক্ষার্থী ছিল এবং পরে স্থানীয় সশস্ত্র সংগঠনে যোগ দেয়। হিজবুল মুজাহিদীন ও তেহরিক উল মুজাহিদীনের সদস্য তারা। নিহত তৃতীয় জনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবিকে উদ্ধৃত করে আরেক ভারতীয় সাময়িকী আউটলুক জানায়, রবিবার রাতে অনন্তনাগের হাকুরা অঞ্চলে জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়। জঙ্গিদের সঙ্গে জওয়ানদের বন্দুকযুদ্ধ চলে। সোমবার স্থানীয় সশস্ত্র সংগঠনের দুই সদস্য এবং এক অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত হয়। নিহত তিনজনের একজন সম্প্রতি শ্রীনগরে পুলিশের উপর হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে দাবি করা হয়। সোমবারের কথিত ওই বন্দুকযুদ্ধে সেনাবাহিনীর কোনও জওয়ান হতাহত হননি। ঘটনাস্থল থেকে একে-৪৭ রাইফেল, পিস্তল, হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ইকোনমিক টাইমস জানায়, নতুন করে এ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শ্রীনগরের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে জম্মু-কাশ্মির সরকার। ফাজলি শ্রীনগরের বাসিন্দা হওয়ায় শহরটির বিভিন্ন অংশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শ্রীনগরভিত্তিক কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ কাশ্মিরের আওয়ান্তিপোরাভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সোমবারের সব পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত করেছে। পরীক্ষা স্থগিত করেছে দ্য বোর্ড অব স্কুল এডুকেশনও। নতুন তারিখ পরে জানানোর কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, সোমবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তিনজন নিহত হওয়ার পর কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনের দুই নেতা ইয়াসিন মালিক ও মিরওয়াইজ ওমর ফারুককে গৃহবন্দি করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ