বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য ভণ্ডুল হয়েছে

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : যে টার্গেট নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে সরকারের সেই উদ্দেশ্য একেবারেই ভেস্তে গেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশে হাজারো গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যের কারণেই বেগম জিয়ার মামলাগুলোকে সামনে আনা হয়েছে। অনেকটা তড়িঘড়ি করে মামলাগুলো শেষ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার মনে করেছিল, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দায়ে সাজা দিলে তার জনপ্রিয়তা কমে যাবে। বিএনপির তৃণমূলে ভাঙ্গন সৃষ্টির পাশাপাশি দলটিকে দুর্বল করা যাবে। খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে বিএনপির একটি অংশকে আগামী নির্বাচনে আনা যাবে। এছাড়া খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে বিরোধী জোট হরতাল-অবরোধের ন্যায় কর্মসূচি দেবে। যাতে করে নিজেরাই জ্বালাও পোড়াও এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে। আর এই ঘটনায় আবারো দলের শীর্ষ নেতাসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে। বিদেশীদের কাছে এসব বিষয়ে নালিশ জানাবে। কিন্তু সরকারের এসব উদ্দেশ্যের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। বিএনপি আগের থেকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সরকারের মারমুখী আচরণের নিন্দা জানাচ্ছে সবাই। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ প্রায় সব দেশ ও সংস্থাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিহিংসা হয়ত সফল হচ্ছে, কিন্তু অন্য যেসব উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়া হয়েছে তা আদৌ সফল হবে কিনা এ মুহূর্তে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করছেন, হিতে বিপরীত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারাও ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে বেশ চিন্তিত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
সূত্রমতে, ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার এসেই নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে  ‘টু মাইনাস’ ফর্মুলা হাতে নিয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে দল ভাঙা, দলের ভেতর সংস্কারপন্থি তৈরি করা ছাড়াও দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের এবং উভয়কে কারান্তরীণ করা হয়। কিন্তু মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সেই লক্ষ্য সফল হয়নি। অবশ্য, এতে মূল কৃতিত্ব ছিল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ পাঠাতে সক্ষম হলেও শত চেষ্টা করেও বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো যায়নি। তাতে ‘টু মাইনাস’ ফর্মুলাও আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর ফল হিসেবে তৎকালীন ওয়ান-ইলেভেন সরকার নিজেদের সেইভ এক্সিটের পথ খুঁজতে থাকে। নিজেদের বাঁচার তাগিদে অবশেষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হয়। অথচ ওয়ান-ইলেভেন সরকারকে ব্যর্থ করা এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি করার যিনি মূল কৃতিত্বের দাবিদার সেই বেগম খালেদা জিয়াকেই এখন ওয়ান ইলেভেনের মামলায় জেলে যেতে হলো। তাও ‘ঠুনকো’ এমন একটি ঘটনা নিয়ে যে ঘটনায় বেগম জিয়া কোনভাবেই জড়িত নন। কোথাও তার সই-স্বাক্ষরও নেই।  যে অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতির অভিযোগ এখন পর্যন্ত সেই ট্রাস্টের কোনো অর্থও খরচ হয়নি। আত্মসাতের তো প্রশ্নই আসে না।  বরং এফডিআর’র মাধ্যমে অরফানেজ ট্রাস্টের তহবিলের অর্থ কয়েকগুণ বেড়েছে। তাছাড়া অনেক ঘষা-মাজা করে মামলাটি তৈরি করা হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ওয়ান-ইলেভেনের মামলাগুলো বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধের মামলাগুলো সচল হয়। তারই একটি হলো এই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জেলখানায়ও তার সঙ্গে নানাবিধ অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত সরকারি দল আওয়ামী লীগ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি চূড়ান্ত করে রায় ঘোষণার ব্যবস্থা করেছে। বিশেষ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এটি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান উদ্দেশ্য হলো ‘মাইনাস ওয়ান’ অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করা। তাকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। দুর্নীতি ইস্যুকে সামনে এনে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ধস নামানো, দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, জ্বালাও-পোড়াও অপবাদ দিয়ে গ্রেফতার-নির্যাতনের মাধ্যমে দলটিকে কাবু করে ফেলা এবং সরকারের অনুগত বিকল্প বিএনপি তৈরি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া প্রভৃতি নানান প্রক্রিয়ায় এই ‘মাইনাস-ওয়ান’ ফর্মুলা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি রয়েছে।
তবে, সরকার যে টার্গেট নিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে তার সবই ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমতঃ এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এতে তার সুনাম নষ্ট হবে। জনপ্রিয়তাও কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর ঘটনা সম্পূর্ণ হিতে বিপরীত হচ্ছে। আর দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়ার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করা হলেও ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হয়েছে। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ভালবাসা ও সহমর্মিতা আগের চেয়ে আরও বহুগুণে বেড়েছে। মনে হচ্ছে মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে এখন বন্দী খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বেশি। মানুষ জানে, সরকারই রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য খালেদা জিয়া বিরুদ্ধে সাজার আয়োজন করেছে।
দুই বারের একজন সফল সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মাত্র ২ কোটি টাকার জন্য ৫ বছরের সাজার বিষয়টি মানুষকে বিস্মিত করেছে। টাকার অংক যদি ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা হতো তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতো। আর টাকাটাও রাষ্ট্রের না। এটা তার স্বামীর নামে করা একটি এতিম খানার। একজন প্রধানমন্ত্রীর যেখানে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ থাকে সেখানে এতিম খানার ফান্ডের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা মানুষের কাছে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এই টাকার এখনও কিছুই খরচ হয়নি। বরং ব্যাংকে এফডিআর করার কারণে এতিমখানার ফান্ডের টাকা ইতোমধ্যে অনেক বেড়েছে।
বরং মানুষ প্রশ্ন তুলেছে, শেয়ারবাজার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে লুটপাটকারীদের নাম প্রকাশের পরও তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব নিয়ে এখন বিশিষ্টজনেরাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসব নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটকারীদের আশ্রয় দিয়ে মাত্র ২ কোটি টাকার কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঠিয়ে সরকার এখন বলা যায় কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এছাড়া সরকারের টার্গেট ছিল খালেদা জিয়াকে জেলে ভরে বিএনপির মধ্যে ফাটল ধরানো। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। কিন্তু এখানেও সরকারের টার্গেট মিস হয়ে গেছে। কারণ, খালেদা জিয়ার এ রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক সুসংহত হয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরে আগে যে কোন্দল ছিল এখন সেটাও দূর হয়ে গেছে। কারণ, জেলে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া হুঁশিয়ার করে গেছেন, এবার ভুল করলে আর ক্ষমা করা হবে না। তাই খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিএনপি নেতারা এখন সব ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার মনে করেছিল খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো বড় ধরনের আন্দোলনের ডাক দেবে। বিএনপির এ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে স্যাবোটাজ এবং বিশেষ লোক দিয়ে যানবাহনে আগুন দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টির আশঙ্কা ছিল। তাতে দোষ চাপাতো বিএনপির ওপর। বিএনপি নেতাদেরকে গণহারে গ্রেফতার করার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তেমন পরিস্থিতিও হচ্ছে না। বিএনপি এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সহিংস কর্মকা- হয়নি। বরং পুলিশ উল্টো তাদের মিছিলে বিনা উস্কানিতে হামলা-লাঠিচার্জ ও গুলী করেছে। কালো পতাকা প্রদর্শন ও অবস্থান ধর্মঘটে নজিরবিহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। এমনকি কর্মসূচির অনুমতি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে প্রাপ্য সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে জানানো হলেও বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিক কারণেই তার ডিভিশন পাবার বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে না। কোনও আবেদন ছাড়াই তার ডিভিশন পাওয়ার কথা। অথচ সেটি নিয়েও টালবাহানা হয়েছে। প্রথমে তার ডিভিশনের জন্য আবেদন করার পরও সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। সাধারণ বন্দী হিসেবেই তাকে রাখা হয়েছে। পুরান ঢাকার যে কারাগারে রাখা হয়েছে সেখানে অন্য কোনও বন্দী নেই। ইতোপূর্বে সেই কারাগারটি পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। বেগম জিয়া যে কক্ষে আছেন সেটি একেবারেই সাধারণ একটি কক্ষ। এখন বেগম জিয়াকে তার ওকালত নামায় স্বাক্ষর করতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে বিএনপি।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সরকার যে টার্গেট নিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলে ভরেছে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং সরকার আরও উল্টো চাপে পড়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন। তাকে কারান্তরীণ করায় দলটির নেতাকর্মীসহ দেশবাসী মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। দলটি এখন সাম্প্রতিক বছরগুলোর যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। যেটা মনে করা হয়েছিল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বা মনোবল ভেঙে পড়া- সেটা আদৌ হয়নি। বরং রায়ের পর ‘সরকারের পাতানো ফাঁদে’ পা না দেয়ায় বেড়েছে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা।
অন্যদিকে হতাশ হয়েছে বলা যায়, আওয়ামী লীগ। এমনটাই মন্তব্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। একই কথা বলছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অভিজ্ঞজনরাও। তারা বলছেন, এ রায়ে বেগম জিয়া ও বিএনপি’র জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে বহুগুণ। মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে কারাবন্দী খালেদা জিয়া এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। এমনকি এ মুহূর্তে দেশে জনপ্রিয়তায় খালেদা জিয়া এক অপ্রতিরোধ্য নাম। ভারতীয় গণমাধ্যমও বলছে, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে।’ বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই আশার আলো দেখছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
‘কারাগার হলো রাজনীতিকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়’ এই প্রবাদবাক্য দেশের কোন নেতার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে সে হিসেব অজানা হলেও ‘কারাগার’ যে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আলোকিত করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। গোটা বিশ্বের দৃষ্টি যেন ঢাকার দিকে, বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। জাতিসংঘ বেগম জিয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে মামলা পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত খালেদা জিয়ার কারাবরণ শতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ঢাকায় কর্মরত প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা নড়েচড়ে উঠেছেন। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য ঢাকায় কর্মরত নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ‘বন্দী খালেদা জিয়ার’ ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছেন। ইন্ডিয়া এক্সেপ্রেস বলছে, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে।’ দেশের সর্বত্রও একই অবস্থা। সবার মুখে মুখে খালেদা জিয়ার নাম। টিভির টকশোগুলোতে এখন একই আলোচনা হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ টিভি মিডিয়া সরকারের পক্ষের লোকদের মালিকানায় হওয়ায় টকশোতে সরকারি দল অনুগত ব্যক্তিদের বেশি আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীক কারণে দর্শক ধরে রাখার কৌশল হিসেবে ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকেও মাঝেমধ্যে টকশো’য় ডাকা হয়। তারমধ্যে বশির ভাগ আলোচনায় উঠে এসেছে ‘মুক্ত খালেদা জিয়ার’ চেয়ে ‘বন্দী খালেদা জিয়া’ অনেক বেশি শক্তিশালী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ বাঘের পিঠে উঠে গেছে, তাদের পক্ষে এখন স্বাভাবিক কিছু ভাবার সুযোগ নেই। আর সেই কারণেই বেগম খালেদা জিয়া বা বিএনপির বিষয়ে এমন চরম পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে তাদের। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে ৪১ সাল পর্যন্ত নিশ্চিন্ত ক্ষমতাসীন ভাবছিল। এখন সেই অবস্থা আর নেই। এ মুহূর্তে ভাবনা হলো, সামনের এই টার্মটা অন্তত ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা। এ জন্য ৫ জানুয়ারির আদলেই একটি নির্বাচন প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে জরিপ করে দেখা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কোনোভাবেই তাদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। এমনকি এরশাদকে সঙ্গে নিলেও সম্ভব হবে না। বরং চরম ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু, আদৌ কী এবার ৫ জানুয়ারির মতো পার পাওয়া যাবে? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত ২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক এক বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। এদিকে ভারত, পশ্চিমা বিশ^সহ প্রভাবশালী সব দেশই বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা জোর দিয়ে বলে আসছে। বিএনপিও এবার অতি মাত্রায় সতর্ক। সব মিলিয়ে সরকার আগামী নির্বাচন নিয়ে মহা ফ্যাসাদেই পড়েছে বলা যায়। বিশেষ করে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের পর থেকে। খালেদা জিয়ার কারাবাসের মেয়াদ যতই বাড়ছে তার প্রতি সাধারণ মানুষ ততই সহানুভূতিশীল হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম জিয়াকে সাজা দেয়ার পেছনে সরকারের কি উদ্দেশ্য তা দেশবাসী জানে। তারা যা চেয়েছিল তার কোনটাই হয়নি, হবেও না। বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা এখন আগের থেকেও বেশি। এছাড়া বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করতে সরকার বিভিন্ন কৌশলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে তাতে কোনো কাজ হবে না। অতীতেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই সফলতা আসবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ