পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ গল্লামারীর ভাসমান ব্যবসায়ীরা
খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর প্রবেশদ্বার গল্লামারীর ভাসমান ব্যবসায়ীরা পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এখানে মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গল্লামারী ময়ূর নদের ওপর পাশাপাশি দু’টি সেতু পুরোটা দখল করে বসেছে ভাসমান কাঁচাবাজার। সেতুর ওপর ভ্যান রেখে পেঁয়াজ, রসুন, মুরগি, শাক-সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় সময় পরিবহন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ওঠা নামা করে যাত্রী। এতে পথচারীরা মূল সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এসব বেআইনি কাজগুলো স্থানীয় কথিত সাংবাদিক ও পুলিশকে চাঁদা দিয়ে বৈধ করছেন এসব ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকরা। যাদের প্রতিদিন ও মাস চুক্তিতে চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় এ সকল সাংবাদিক ও পুলিশের ভয়ে দীর্ঘদিন নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছেন ভুক্তভোগী এসব ব্যবসায়ীরা।
খুলনা শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার এটি। প্রতিদিন এ সেতুর ওপর দিয়ে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াত। এই সেতুর ওপর দিয়েই যাতায়াত করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। কিন্তু সেতুর দুই পাশে ফুটপথের ওপর কাঁচা বাজার বসায় তাঁদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। জনসাধারণ চলাচলে সমস্যার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সেতু থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে গল্লামারী পুলিশ বক্স।
পথচারিদের অভিযোগ, সেতুর ওপর যাতে অবৈধভাবে বাজার বসতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু তারাই সেই দায়িত্ব ঠিকমত পালন করছে না বলে সেতুর এ দশা। সালাম, মামুন, রুবিসহ একাধিক পথচারী বলেন, সেতুর ওপর বাজার বসায় ও গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলায় যানজট লেগেই থাকে। ফুটপথ থাকা সত্ত্বেও আমাদের রাস্তার ওপর দিয়ে চলতে হয়।
চাঁদার কথা স্বীকার করলেও চাঁদাবাজদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘সেতুর ওপর মানুষের হাঁটাচলার জায়গায় বাজার বসানো ঠিক না, তাও জানি। তবে সবাই বসে, তাই আমরাও বসি। আমরা গরীব মানুষ একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা পুজি নিয়ে ব্যবসা করি। যা লাভ হয় তা থেকে এখানে বসার ভাড়া দিয়ে যা থাকে তাতে কোনোমতে সংসার চলে।’ কাদের বসার জন্য ভাড়া দেন? জবাবে তিনি বলেন, এটাতো বলতে পাব না ভাই। তবে এখানে দুই তিনজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আছে যাদের দায়িত্ব চাঁদা তোলা। এরা এক এক দিন এক এক জন আসে। তাদেরকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা প্রতিদিন দিতে হয়। সেই হিসেব মতে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে এ সেতু এলাকা থেকে।
আরেক ভাসমান ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, মাঝে মধ্যে তাঁদের উঠিয়ে দেয়া হয়। যারা টাকা নেয় তাদের নাম বললে পুলিশ তাদের এখানে আর বসতে দেবে না।
এক মুরগী ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের খাচা প্রতি প্রতিমাসে একজন সাংবাদিককে দুই হাজার করে টাকা দিতে হয়। এখানে সবমিলিয়ে প্রায় ২০টি খাচা আছে।
এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সেতুর ওপর প্রায় দুইশ’ ভাসমান ব্যবসায়ী আছি। আমাদের শুধু প্রতিমাসে নাইট গার্ড বাবদ একশ’ টাকা দিয়ে থাকি। আর কোনো চাঁদা কেউ নেয় না। তবে অনেকেই জানান, বিভিন্ন মহল নামে বেনামে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। সেতুর নিচে কিছু পান, হাঁস-মুরগি, কাপড় বিক্রেতারা রয়েছে তাদের কাছ থেকে বাজার কমিটি ও স্থানীয় সাংবাদিকরা চাঁদা তোলে।
মার্কেটের এক দোকানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু চাঁদা কেন বলছেন, এসব ভাসমান দোকানীদের নিকট থেকে পুলিশ বক্সের অনেক পুলিশ সদস্যই প্রতিমাসে দুই-তিনটা করে হাঁস-মুরগী ফ্রি নিয়ে যায়।
গল্লামারী পুলিশ বক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এসব ভাসমান ব্যবসায়ীদের মাঝে মধ্যে উঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার তারা বসে। তিনি আরও বলেন, এ সেতুটি হরিণটানা, লবণচরা, সদর ও সোনাডাঙ্গা এই চার থানার মধ্যে পড়েছে। এরিয়া নিয়ে জটিলতার কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা যায় না।