বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সংযোগ বন্ধ তবুও গ্যাসের গ্রাহক এক বছরে ৭ লাখ ১২ হাজার বেড়েছে

কামাল উদ্দিন সুমন : আবাসিকে নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও তিতাসের গ্রাহক এক বছরে বেড়ে গেছে ৭ লাখের বেশি। গ্রাহক সংখ্যা এক লাফে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার জন্য ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে ডাটাবেইজে হালনাগাদকে কারণ দেখিয়েছেন তিতাস।
তবে পাশাপাশি গ্যাসের গ্রাহক বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে তিতাস গ্যাস। কমিটিকে আগামী ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সাত সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (দক্ষিণ) মো. আমিনুল ইসলামকে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড সূত্র জানায়, গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও প্রতিনিয়ত গ্রাহক বাড়ছে। বাড়ছে গ্যাসের ব্যবহার। কীভাবে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে তা খতিয়ে দেখতে এই কমিটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে উত্তোলিত গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে যে ছয়টি সরকারি কোম্পানি বিক্রি করে, তার মধ্যে তিতাসই বিক্রি করে প্রায় ৬০ শতাংশ। ঢাকাসহ ১২টি জেলায় গ্যাস বিক্রির দায়িত্ব তিতাসের।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে জুন পর্যন্ত তাদের আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৬,০১৩। ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৬। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে গ্রাহক বেড়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৫২৩। এছাড়া অনেক শিল্প  প্রতিষ্ঠান তাদের চাহিদা বাড়িয়ে নিয়েছে। এতে গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে।
সরকারের আদেশ অনুযায়ি গত সাত বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধ আছে। শুধু কিছু শিল্পে সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে তাও বিশেষ কমিটির মাধ্যমে। আবাসিক সংযোগ দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। নিয়ম অনুযায়ী সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছেই।
এরআগে অবৈধ গ্রাহক বাড়তে থাকলে ২০১৩ সালে তা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। তারপর আবার সংযোগ দেয়া পুরো বন্ধ করা হয়। কিন্তু সেই বন্ধের পরও বন্ধ থাকেনি সংযোগ। সেই অবৈধ গ্রাহকদের বৈধ করার প্রক্রিয়া চার বছর পর এখনও চলছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ হাজার ১৮ মিলিয়ন ঘন মিটার গ্যাস বিক্রি করেছে। যার মূল্য ১২ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। এ থেকে প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ৫০৬ কোটি টাকা।
তিতাসের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, তিতাসের তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে বলে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে। তিতাসের ২৬টা আঞ্চলিক কার্যালয়। এ কার্যালয়ের সাথে সমন্বয়ের অভাব ছিল। এখন সমন্বয় হয়েছে বলে এমন তথ্য এসেছে। উত্তরে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান বলেন,তথ্যে এক ধরনের অসঙ্গতি ছিল, সেটা হালনাগাদ করা হয়েছে।
কী ধরনের অসঙ্গতি ছিল- সে ব্যাখ্যায় কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানির আইটি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এ আধুনিকায়নের আওতায় কোম্পানির আবাসিক গ্রাহকদের ডাটাবেইজসহ লেজার সিস্টেম হালনাগাদ করা হয়। এই ‘হালনাগাদের ফলে’ গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সমিতির জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, “এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। তিনি প্রশ্ন করেন,আইটি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করলে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যাবে, আর তা ম্যানুয়ালি থাকলে গ্রাহক সংখ্যা কম থাকবে, এটা কোনোভাবে হতে পারে? এ ধরনের তথ্য দেওয়াটা এক ধরনের ‘ম্যানিপুলেশন’ (তথ্য জালিয়াতি) বলে মন্তব্য করেন শামসুল আলম।
এদিকে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব  বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দিয়েছে। অন্য তিন কোম্পানি কয়েকদিনের মধ্যেই প্রস্তাব দেবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, প্রস্তাবনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানায় তিন থেকে চারগুণ দাম বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি, শিল্প খাতে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত দর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এদিকে গ্যাস সঞ্চালন মাসুল বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠিয়েছে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (জিটিসিএল)।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। মার্চ থেকে তা কার্যকর হয়। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য সাত টাকা ৩৫ পয়সা।
বিদ্যুৎ  উৎপাদনে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা। এই দাম ১০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২ টাকা ৭১  পয়সা।, নতুন প্রস্তাব ১২ টাকা ৮০ পযসা করার কথা বলা হয়েছে। শিল্প-কলকারখানায় আছে গড়ে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ১৫ টাকা করার।
সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস সিএনজিতে আগে দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা। নতুন করে ৪৮ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ছিল ৯ টাকা ৬২ টাকা। নতুন প্রস্তাবে দাম বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ টাকা। চা বাগানে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৪২ পয়সা। নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। তবে  বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকদের বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ