বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের প্রশস্ততা ও গভীরতা বৃদ্ধিতে দ্বিমুখি নৌ চলাচলের দাবি

খুলনা অফিস: মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে দ্বিমুখি নৌযান চলাচল সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়রা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বর্তমান অবস্থায় ওই চ্যানেলটিতে দ্বিমুখি নৌযান চলচল করলে স্রোতের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং পলি পড়ার হার কমবে ফলে চ্যালেনটি স্থায়ী সচলকরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দিবা-রাত্র ও দ্বিমুখি নৌযান চলাচল ব্যবস্থা চালুর জন্য কার্যকরী নৌ-ট্রাফিক সিস্টেম চালু করে নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে সরকারের রাজস্ব আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, মংলা-ঘষিয়াখালী এই নৌ-চ্যালেনটি ২০১১ সালের পর থেকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালের ১ জুলাই পাঁচটি ড্রেজারের মাধ্যমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় প্রশাসন নিরলসভাবে খনন করে চ্যালেনটি ২০১৫ সালের ৬ মে নৌ চলাচল উপযোগী করে উন্মুক্ত করে দেয়। এরপর চ্যানেলটি প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে দিনের বেলায় একমুখিভাবে নৌযান চলাচল করে আসছে।
বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ সংরক্ষণ ড্রেজিং এর পাশাপাশি প্রশস্তকরণের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে এই চ্যানেলটির গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেয়ে নৌযান চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এ রুটে চার মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করছে।
মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ইজারাদার শফিকুর রহমান পলাশ জানান, প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি অর্থবছরে ইজারা গ্রহণ করা হয়। সপ্তাহে দুই দিন রকেট সার্ভিস চলাচলের কারণে অন্যান্য নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে এবং শুধুমাত্র দিনের বেলায় একমুখি নৌযান চলাচল করায় বিপুল পরিমাণ লোকসানের শিকার হচ্ছেন তিনি।
নদী গবেষক মো. শাহাবুদ্দিন শিকদার জানান, বাস্তব প্রেক্ষাপটে এই চ্যানেল দিয়ে দিবা-রাত্র ও দ্বিমুখি নৌযান চলাচল শুরু করা যেতে পারে। এতে চ্যানেলের স্রোত প্রবাহ বৃদ্ধি, সিল্টেশনের হার হ্রাস, নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বহুগুণে বেড়ে যাবে। তবে এ ব্যবস্থায় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে কার্যকর নৌ-ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সম্প্রতি চ্যানেলের রামপাল খেয়াঘাটের কাছে সিমেন্ট ভর্তি যে কার্গোটি ডুবে আছে যে কোন মূল্যে তা উদ্ধার করতে হবে। তানা হলে এটি সদ্য খননকৃত চ্যানেলের অপমৃত্যুর কারণ হতে পারে। এর ফলে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে চ্যানেলটি সচলকরণের উদ্যোগ সম্পূর্ণ ভেস্তে যাবে। ভবিষ্যতে এ ধরণের যে কোন দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সিইজিআইএস এর নদী মর্পোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট কামাল হুসাইন জানান, বর্তমানে এই চ্যানেলের মংলা থেকে জয়খা অংশে সিল্টেশনের হার অনেক বেশি। মাটি ফেলানোর জায়গার অভাবে খনন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খননকৃত মাটি দ্রুত অপসারণ করা না হলে মারাত্মক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। খননকৃত মাটি অপসারণের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৮৩টি নদী-খাল দ্রুত খনন করে স্রোতের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। তবে দিবা-রাত্র ও দ্বিমুখি নৌযান চলাচলের বিষয়ে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
বিআইডাব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. সাইদুর রহমান জানান, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে জোয়ারের সময়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট এবং ভাটার সময়ে ১৮ থেকে ২২ ফুট গভীরতা বিদ্যমান এবং গড়ে একশ’ মিটার প্রশস্ততা রয়েছে। এ অবস্থায় দিবা-নৈশ ও দ্বিমুখি নৌযান সতর্কতার সাথে চলাচল সম্ভব বলে মত প্রকাশ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে নৌ ট্রাফিক সিগন্যাল বিশেষ করে ড্রেজার মেশিনের পাস দিয়ে সতর্কতার সাথে চলাচল করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ