ঢাকা, শুক্রবার 19 April 2024, ০৬ বৈশাখ ১৪৩০, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

স্বাস্থ্যের উপর খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইলের প্রভাব

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

জীবনযাত্রার সাথে রোগ-বালাইয়ের নিবিড় সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করেই যুক্তরাজ্যে এখন মেডিকেল পড়ুয়াদের শিক্ষায় কিছু প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিচ্ছেন দেশটির নেতৃস্থানীয় ডাক্তারেরা।

ব্রিটেনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একদল শিক্ষার্থী বলছেন, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে যে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এই সম্পর্কে তাদেরকে বলতে গেলে কিছুই শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না।

তাদের ভাষ্য মতে, ক্লাসে তাদেরকে যা শেখানো হচ্ছে বাস্তব জীবনের রোগীদের সাথে আজকাল তার কমই মিল খুঁজে পাচ্ছেন তারা।

দেশটির জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা জিপি ডাক্তারেরা বলছেন, তাদের কাছে রোগীরা যে সব রোগ-বালাই নিয়ে আসেন এর শতকরা ৮০ ভাগই রোগীদের জীবনযাত্রা আর ডায়েট বা খাদ্যাভাসের সাথে জড়িত।

বিভিন্ন রোগের মধ্যে স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থেকে শুরু করে টাইপ-২ ডায়বেটিস এবং বিষণ্নতার মতন দীর্ঘস্থায়ী অষুখও রয়েছে।

এবছর যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএস কেবল ডায়বেটিসের পেছনেই ১১ বিলিয়ন পাউন্ড খরচা করতে যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

বিবিসি ওয়ানের স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ডা. মাইকেল মোসলি বলেন, "পুষ্টিবিদ্যা আমাদের চিকিৎসাশাস্ত্রের গতানুগতিক প্রশিক্ষণের অংশ নয়। মেডিকেল স্কুলে আমরা এই বিষয়ে কিছুই শিখিনি। এখন আমার ছেলেও মেডিকেল স্কুলে পড়ে, আর তার শিক্ষাক্রমেও এই বিষয়ে কিছু শেখানো হয় না।"

"তাই আমার মনে হয় অধিকাংশ ডাক্তাররা রোগীদের এই বিষয়ে পরামর্শ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।"

বলা হচ্ছে, জীবনযাত্রার সাথে যেসব রোগ জড়িত এর মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত স্থূলতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন অন্তত ৮০ ভাগ রোগীর সমস্যাই সামগ্রিক অর্থে জীবনযাত্রার অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত।

যুক্তরাজ্যে স্থূলতার পরিমাণ এতোই বেড়েছে যে দেশটি এখন 'ফ্যাট ম্যান অফ ইউরোপ' বা 'ইউরোপের সবচেয়ে মোটা ব্যক্তি' নামে খ্যাত হয়ে উঠছে।

বিবিসি রেডিও ফোরের 'দি ফুড' প্রোগাম অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় লেখক ও পডকাস্ট হোস্ট ড. রঙ্গন চ্যাটার্জি বলেছেন, গত ৩০-৪০ বছরে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক চিত্র নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে।

ড. চ্যাটার্জির মতে, দীর্ঘদিন ধরে জেনারেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন অন্তত ৮০ ভাগ রোগীর সমস্যাই সামগ্রিক অর্থে জীবনযাত্রার অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত।

তাই, এই বাস্তবতা মোকাবেলা করতে ড. চ্যাটার্জি এবং কার্ডিওলোজিস্ট ড. অসীম মালহোত্রাসহ নেতৃস্থানীয় অন্যান্য ডাক্তারেরা মিলে ব্রিটেনের জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল, মেডিকেল স্কুলস কাউন্সিল এবং দেশটির খোদ হেল্থ সেক্রেটারি বরাবর এক পত্র লিখেছেন।

সেই পত্রে তাদের মূল বক্তব্য ও তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের মেডিকেল পড়ুয়াদেরকে শুধু বইয়ের উদাহরণের ভেতরে আবদ্ধ না রেখে বাস্তবের বিভিন্ন কেস স্টাডির ভিত্তিতে শিক্ষা দিতে।

কেস স্টাডির ভিত্তিতে হাতে-কলমে শেখানো হলে লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসকে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে নানান জটিল রোগ সারানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানবে বলেই মনে করছেন ড. চ্যাটার্জিসহ অন্যান্য ডাক্তারেরা।

যুক্তরাজ্যের মেডিকেল স্কুলগুলো জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিলের নীতিমালা সাপেক্ষে নিজেদের মত করে পাঠ্যসূচি তৈরী করে।

জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল এখন নতুন করে তাদের নীতিমালা নির্ধারণ করার কথা চিন্তা করছে। রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের পুষ্টিবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি বলে মনে করছে তারা।

মেডিকেল স্কুলগুলোও তাদের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের মেডিকেল বিভাগ বিবিসি'কে জানায় তারা পুষ্টিবিজ্ঞান সংক্রান্ত কোর্স দ্বিগুন করার কথা ভাবছে।

ব্রিস্টল মেডিকেল স্কুলও নতুন করে পাঠ্যসূচি তৈরী করার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ