বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাংলা নববর্ষ

বাংলা নববর্ষ ইংরেজি Bangla New Year  অথবা বর্তমানে ইংরেজিতেই Bangla Nobaborsho লিখা হয়ে থাকে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালিত্বের চেতনার তীব্র চাপে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার বাংলা নববর্ষের ছুটি ঘোষণা করেন। সেই থেকে দিনটি জাতীয়ভাবে পালিত হয় এবং তা সকল বাঙ্গালির জাতীয় দিবসে পরিণত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নববর্ষ উৎসব ভাতা হিসেবে মূল বেতনের শতকরা ২০% প্রদান করা হয়ে থাকে। ১৪ এপ্রিল ইংরেজি তারিখেই প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে পালিত হয়। কিন্তু ঐতিহ্য ভুলে বাংলা নববর্ষ এখন অপসংস্কৃতির উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ-পঞ্জির সাথে জড়িয়ে থাকা মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। 

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল কৃষির। কারণ কৃষি কাজ ছিল বিশেষ ঋতু নির্ভর। এই কৃষি কাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সন)। এই দিন সম্রাট আকবর দ্বিতীয় পানি পথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করে সিংহাসন আরোহণ করেন। তাঁর সিংহাসনে আরোহণের ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে এ দিন থেকে নতুন সনের প্রবর্তন করা হয়। তখন এ নতুন সনের নাম ছিল তারিখ- ই- এলাহী। হিজরি চন্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। নতুন সনটি প্রথমে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। আমরা বাংলা নববর্ষে নতুন বছরকে বরণ করার নামে বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে যে দৃশ্য দেখি তাতে মুসলিম নয়, প্রতিফলিত হয় পৌত্তলিক সংস্কৃতির নানান আচার অনুষ্ঠান। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে- গঞ্জে নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাঁদের পুরনো হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খূলতেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাঁদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগ সূত্র স্থাপন করতেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে বাংলা সনে উৎপত্তির ইতিহাসটাও হারিয়ে যেতে বসেছে। আনন্দ শোভাযাত্রা থেকে বর্তমানে মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো কর্তৃক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ৮০% মুসলমানের দেশে নিশ্চিত তাদেরকে কুপথে বা ধ্বংসে পতিত করবেই। 

‘হিন্দুরূপী মুসলমান’ এই মঙ্গল শোভাযাত্রার ইনার টার্গেট এটাও বলতে পারি। কেননা একটি ধর্মের ধর্মীয় কালচার ও উৎসবকে পূর্ণ চাতুর্য্যরে সাথে অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বীদের উপর চাপানো হয়েছে। এছাড়াও যদি আমরা সংবিধানের চারটি মূলনীতির দিকে লক্ষ্য করি তাহলেও এ শোভাযাত্রা সার্বজনীন হয় না। অধিকস্তু সংবিধানের ৪১ (১) (খ) অনুচ্ছেদে প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে। উপধারা অনুযায়ী সংবিধানের পরিপন্থি। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের লিখা ‘আধুনিক পরিবেশে ইসলাম’ বইয়ের ১০ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে, “সংস্কৃতি হলো কোনো একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠীর জীবন যাপনের নৈপুণ্য। তার বিভিন্ন শাখা হলো ধর্ম, ভাষা, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, ব্যবহারের ধরণ, স্থাপত্য, শিল্প, সুক্ষ্মতর আবেগ সমূহের প্রকাশ পদ্ধতি এবং অন্যান্য রীতিনীতি........।” তাঁর লিখা ‘আমার দেশ বাংলাদেশ’ বইয়ের ১৮ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে, “যদি কোনো স্বাধীন দেশ অন্য দেশের আদর্শ ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়, তাহলে এর পরিনামে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক আযাদী থেকে চিরতরে বঞ্চিত হতে সে বাধ্য।” কোনো এক হাস্যরসিককে গল্প করতে শুনেছিলাম, এক ব্যক্তি তার ছেলের জন্যে একটি তাবিজের উদ্দেশ্যে জনৈক ‘মেয়াজী’ সাহেবের কাছে গিয়েছিল। ছেলেটি ঘুমের ঘোরে বিছানায় পেশাব করতো। ‘মেয়াজী’ সাহেব যথারীতি তাবিজ দিলেন বটে, কিন্তু ফল হলো বিপরীত। তাবিজ দেয়ার পূর্বে ছেলে যেখানে শুধু পেশাবই করতো তাবিজ গলায় পরার পর পেশাবের সাথে সাথে এখন সে বিছানায় পায়খানাও করতে শুরু করেছে। বিষয়টি মাতা পিতাকে করে তুলেছে অধিক চিন্তাগ্রস্ত। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ২নং সূরা বাকারার ১৫০ নং আয়াতে, ‘......... হে আমাদের পালন কর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে।’ ১৫১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ .............. আল্লাহ্ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ্ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। আল-কোরআনে ২২ নং সূরা- হজ্জের ৪০ ও ৪১ নং আয়াতে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আহমদ, আবু-দাউদ ও তিবরানী বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) এর বর্ণনা: রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক উম্মতে কিছুলোক মজুসী (অগ্নিপুজারী কাফের) থাকে। আমার উম্মতের মজুসী তারা, যারা তকদীর মানে না। এরা অসুস্থ হলে এদের খবর নিও না এবং মরে গেলে কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করো না। (রুহুল মা’আনী) 

 আবু মুনীর

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ