শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

চুলকাঠিতে গ্রাহকদের ২০ কোটি টাকা নিয়ে চলন্তিকা সোসাইটির কর্মকর্তারা উধাও

খুলনা অফিস : বাগেরহাটের চুলকাঠিতে চলন্তিকা যুব সোসাইটির প্রায় সহস্রাধিক গ্রাহক তাদের আমানত ও সঞ্চয়ের ২০ কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে। কি আছে তাদের ভাগ্যে? কোথায় গেলে তাদের শেষ রক্ষা হবে? এ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত গ্রাহকরা। এসব গ্রাহকদের অধিকাংশই তাদের সহায়-সম্বল যা ছিল তারই সঞ্চিত বা আমানত গচ্ছিত রেখেছিল চলন্তিকায় উচ্চ মুনাফা লাভের আশায়।
অভিযোগে জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি বাজারের চলন্তিকা যুব সোসাইটির কার্যক্রম শুরু হয় প্রায় ১০ বছর পূর্ব থেকে। স্থানীয় কর্মী নিয়োগ ও উচ্চ মুনাফা দিয়ে চলন্তিকা ‘হট কেকের’ মতো লাফিয়ে লাফিয়ে সাড়া জাগানো একটি এনজিও’তে পরিণত হয়।
একদিকে স্থানীয় কর্মীদের উপর আস্থা, অন্যদিকে নামডাক দুই-ই মিলে চুলকাঠি বাজারের ব্যবসায়ীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মূলধনের বিনিয়োগের পাশাপাশি চলন্তিকায় লাখ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখে। এলাকার ছোট ছোট দোকানদার, ব্যবসায়ী, ভ্যান-চালক, কুলি-মজুরীসহ নিম্ন আয়ের লোকজন তাদের সকল গচ্ছিত ও সঞ্চয়কৃত টাকার নিরাপদ স্থান হিসাবে এখানে টাকা বিনিয়োগ করে।
চুলকাঠি বাজারের মোবাইল ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমার ভদ্র জানান, তিনি তার বোনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে এখানে গচ্ছিত রেখেছিলেন। তিন বছর মেয়াদী এক লাখে ১৪শ’ টাকা মুনাফায় তিনি এই টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রায় মাস খানেক ধরে চলন্তিকার কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা উঠলে স্থানীয় কর্মকর্তারা তাকে অভয় দেন।
বাজারের স্বর্ণকার অমিত কর বিলাস জানান, তার প্রায় ১১ লক্ষ টাকা চলন্তিকায় আমানত রয়েছে। এছাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মিন্টু দেবনাথ, কমলেশ সাধু, আব্দুল হালিম শেখ, নির্মল আচার্য্য, প্রভাস আচার্য্য, নিভাস আচার্য্য, নিশির আচার্য্য, ননী গোপাল আচার্য্য, গোপাল পাল, তপন সাধু, শংকর দত্ত, কৃষ্ণ মন্ডল, মোজাফ্ফার শেখ, গোপাল ঘোষ, চন্দন দেবনাথ, সাধন দেবনাথ, সাধন শীল, বেল্লাল মোড়ল, শিবপদ সাহা, ওহিদুল ইসলাম শেখ, রাজ্জাক গাজীসহ এলাকার প্রায় সহস্রাধিক গ্রাহক এখন প্রতারণার শিকার হয়ে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাবার সামান্য আশা নিয়ে প্রহার গুনছে। এদিকে চলন্তিকা সোসাইটির চুলকাঠি শাখায় কর্মরত বাদশা শেখ, দেবতোষ দাশ, ওমর ফারুক, সঞ্জিতা দত্ত, দীপা দত্ত, সাগর কুন্ডু, কামাল, লিটন দত্ত, রানা দেবনাথ, সাগর, মিতা দাশ, পূর্নিমা দাশ, অর্পনা রানী, শংকর মন্ডল, রিপন দাশ, গৌরাঙ্গ ঘোষসহ প্রায় ডজনখানেক স্থানীয় কর্মকর্তা ও মাঠকর্মী এখন পলাতক রয়েছে। তাদের মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের সাথে কথা বলা যায়নি। তাই চুলকাঠি শাখায় গ্রাহকদের প্রকৃত সংখ্যা ও আমানতে টাকার পরিমাণ সঠিকভাবে জানা না গেলেও বিভিন্ন গ্রাহকদের ধারণামতে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি এবং গচ্ছিত টাকার পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা হতে পারে। এদিকে চুলকাঠি শাখার ব্যবস্থাপক মো. বাদশা শেখের সাথে সপ্তাহখানেক আগে কথা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, এখানে কর্মরত কর্মীদের অধিকাংশ স্থানীয় লোক। তারাতো চলন্তিকায় নিয়োগ পেয়ে কাজ করে আছে। স্থানীয় লোকজনও তাদের দেখে চলন্তিকায় ঝুঁকে পড়ে। তারা তাদের উপরিমহলের (ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ) সাথে আলাপ করেছেন এবং এলাকার গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য চলন্তিকা সোসাইটির চেয়ারম্যান খবিরুজ্জামানের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ