বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার : কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি এ দাবি জানান। বিএনপি নেতাদের দাবির জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে তার সচিবালয়ের দফতরে দেখা করে খালেদা জিয়াকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন ১২টা ১৫ মিনিটে। গত রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তে প্রতিনিধি দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে সচিবালয়ে যান। খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দেয়াসহ বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কারাবন্দি বেগম জিয়া জেলকোড অনুযায়ী সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি আগেই কতগুলো রোগে ভুগছিলেন। আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডিলাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস- এই সব রোগে তিনি ভুগছিলেন। জেলখানার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারটা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন সেগুলোর বিষয়ে আমরা একের পর এক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপরও তিনি কয়েকজন ডাক্তারের কথা বলছিলেন, যেসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তার চিকিৎসা সেবা দিতেন। তিনি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন। আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা করেছি। তারা দেখেছেন ও আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছেন। এর মধ্যে একটি পরীক্ষা এমআরআই, তার শরীরে আর্টিফিসিয়াল নি (কৃত্রিম হাঁটু) তার শরীরে সংস্থাপিত আছে। এই ধরনের মেটাল শরীরে থাকলে নাকি সব মেশিনে তারা এমআরআই করতে পারে না। এ জন্য বিশেষ এমআরআই মেশিন লাগে। এটি তারা আমাদের জানিয়ে গেছেন। এই এমআরআই মেশিনটি ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে, এ জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের জন্য তারা রিকোয়েস্ট করেছেন। এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রয়েছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুই নেতাকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বলেছি যে, আমাদের যা যা করার তা করছি। সামনে যা প্রয়োজন হবে সেটাও আমরা করবো। জেলকোড অনুযায়ী হবে, জেলকোডের বাইরে যদি কিছু করতে হয় সেটা আমরা পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেবো। পরামর্শ হচ্ছে- ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ। তিনি বলেন, আশা করি তারা ডায়াগনোসিসের জন্য যেসব বিষয় বলেছেন আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সেসব ব্যবস্থা করব। বিএনপি নেতারা বলছেন বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ, আসলে তার শারীরিক অবস্থা কী- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আগেই বলেছি, কতগুলো রোগে তিনি আগেই ভুগতেন। সেগুলোর চিকিৎসা তো হচ্ছে।
ফিজিওথেরাপিসহ যাই প্রয়োজন হবে জেলকোড অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী যতটুকু করার আমরা করবো। জেলকোড অনুযায়ী বেসকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে কোনো বাধা আছে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জেলকোড অনুযায়ী সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ও জেলখানায় যে চিকিৎসক রয়েছেন সেগুলোর বিষয়ে নিয়ম-কানুন রয়েছে। আমরা সেই জায়গাটায় বলছি পরামর্শের পর যদি প্রয়োজন হয় সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব। কবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মৃদু হেসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওনারা তো বলে গেছেন এবং আমরাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমাদের ডাক্তাররা তো বসে নেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু হবে।
বিএনপির ২৫ এপ্রিল মানববন্ধনে বাধা না দেয়া ও ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশের অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবকিছু স্পষ্ট। আমরা সবসময় বলে আসছি কোনো পলিটিক্যাল পার্টি এমন কিছু করবেন না যাতে আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটে। সেক্ষেত্রেই আমরা বিধিনিষেধ আরোপ করি। তারা মিটিং করতে পারবে কি পারবে না সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমাদের যা করণীয় আমরা তা করছি। ২৫ এপ্রিল ও ১ মের কর্মসূচির কথা তারা আমাকে বলেছেন, আমি বলেছি যিনি অনুমতি দেবেন সেই ডিএমপি কমিশনারকে আপনারা লিখিতভাবে জানান। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বা অন্য কোনো অবস্থা না থাকে তবে উনি অবশ্যই ব্যবস্থা করবেন। আমি বলেছি শান্তিপূর্ণ যেসব প্রোগ্রাম দেবেন সেগুলোর কোনোটাতেই পুলিশ কমিশনার বাধা দেবেন না।
বন্দি অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশি পাঠানোর নজির আছে, এ বিষয়টি সরকারের মাথায় আছে কিনা- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের যেসব চিকিৎসা এর কোনোটার জন্যই তো তিনি ঘন ঘন বিদেশে যাননি। এমন নজির তো নেই। তিনি দেশে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বেগম জিয়া নিচে নামতে না পারলে, তার মহিলা আত্মীয়দের কারাগারের দোতলায় ওঠার অনুমতির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, জেলকোড অনুযায়ী একটা ইন্টারভেল আছে, সময়টা ঠিক আমার জানা নেই। সেই অনুযায়ীই আত্মীয়, রাজনৈতিক নেতারাসহ সবাই যাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন খালেদা জিয়া মাঝে মাঝে বলছেন তিনি সবার সঙ্গে দেখা করবেন না। ওনাকে যেন লিস্টটা আগে পাঠিয়ে দেয়া হয়, সেই অনুযায়ী উনি যার সঙ্গে দেখা করতে চান তাকেই নিয়ম অনুযায়ী দেখানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তারপরও তার আত্মীয়-স্বজন যখনই আসছেন ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। জেলকোড ও তার গুরুত্ব বিবেচনা করেই সবসময় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
খালেদাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি বিএনপির
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে ‘গুরুতর অসুস্থ’ খালেদা জিয়া হাঁটতে পারছেন না।  দ্রুত তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো উপযুক্ত স্থানে করার কথাও বলেছি। তিনি বলেন, আমরা বলেছি- ইউনাইটেড হাসপাতালে এর আগেও উনার পরীক্ষা হয়েছে এবং সেখানকার যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং ডাক্তার তাদের ওপর আস্থা আছে। কাজেই চাইলেই তারা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ) সেখানে করাতে পারেন। এতে অন্য কারো অনুমতির দরকার হয় না। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষই যথেষ্ট। কয়েকদিন আগে পিজি হাসপাতালেও তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, উনি আইজি প্রিজনকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। উনার সামনেই কথা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে খালেদা জিয়ার ভালো চিকিৎসা বা পরীক্ষা করা সম্ভব সেখানে করার ব্যাপারে উনি তার সম্মতির কথা জানিয়েছেন। এখন আমরা অপেক্ষা করব আইজি প্রিজন কি ব্যবস্থা নেন। আশা করব, ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি নেয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা এক-দুইদিন নয়, এটা ধারবাহিকভাবে বেশ কিছু দিন দরকার হবে। সেটা জেলখানায় সম্ভব নয়। অন্য কেউ এসে শিখিয়ে দিয়ে যাবে আর জেলখানার নার্সরা করবে- এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা জানেন ফিজিওথেরাপিতে ভুল হলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, রোগের জন্য আরো ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমরা আশা করি, আজকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়া নিচে নামতে না পারার কারণে তার পরিবারের মহিলা সদস্যদের দোতলায় নিয়ে সাক্ষাতের ব্যবস্থা নিতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রশ্ন আসে কেন আমি বুঝি না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এখানকার হাসপাতালেই করার কথা আমরা বলেছি। এখানে চিকিৎসা হলে অন্য কোথায় নেওয়ার প্রশ্ন আসে কেন? কেউ কেউ এই প্রশ্নটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুলছেন বলে আমি মনে করি। বাইরে তাকে পাঠানোর কোনো প্রশ্নই আসছে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব অথবা বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে আগামী ২৫ এপ্রিল মানববন্ধন কর্মসূচি ও ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশসহ অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ যাতে বাধা না দেয় সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়া  গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় দোতলা থেকে নিচে নামতে না পারায় ১১দিন ধরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের সদস্যরা তার সাক্ষাৎ না পেয়ে দল ও পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন।
প্রসঙ্গত. জিয়া এতিমখানা মামলায় ৫ বছরের দন্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়াারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে বন্দি আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর এই মাসের শুরুতে তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তার অসুস্থতা গুরুতর নয় বলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বোর্ড জানিয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শে তার এক্সরে পরীক্ষা করতে ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তবে সরকারের গঠিত এই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে বিএনপির অনাস্থা রয়েছে। এর আগে ২৭ মার্চও বিএনপির এই প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তবে ওই সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য মহানগর পুলিশের কাছে দুই দফায় অনুমতি না পেয়ে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ