জমে উঠেছে খুলনা সিটি নির্বাচন
খুলনা অফিস : পাড়া-মহল্লায় মাইকিং ও পোস্টার-লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়েই জমে উঠেছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ভোটারদের বাড়িতে, অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেড়েছে প্রার্থীদের পদচারণা। সেই সাথে মিছিল-স্লোগান আর প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কর্মী-সমর্থকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে প্রতীক হাতে পেয়েই প্রচারণার মাঠে নেমে পড়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণের কাজ। চলছে নগরজুড়ে মাইকিং।
বড় মির্জাপুর রোডের বাসিন্দা লাভলু বলেন, পুরো খুলনাজুড়ে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ভোটারদের বাড়ি, পাড়া-মহল্লায় প্রার্থী ও সমর্থকদের পদচারণায় হঠাৎ করেই বদলে গেছে পরিবেশ। সবাই আগ্রহ নিয়েই নির্বাচনী আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন।
এদিকে প্রথম দিনের প্রচার-প্রচারণায় বাড়তি উৎসাহ দেখা যায়, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচন কার্যালয়ের নীচে বিক্রেতাদের নানা রঙের প্রতীক-ব্যানারের পসরা থেকে তারা নিজেদের প্রতীক কিনে নেয়। তারপর সেখান থেকেই শুরু হয় মিছিল-স্লোগান। ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না বলেন, এবার নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। ভোটাররা এখন অনেক বেশি সচেতন। প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথে প্রচারণা শুরু হয়েছে ফেসবুকেও। আমরা যে তথ্য প্রযুক্তিতেও এগিয়ে যাচ্ছি-সেটা আজ প্রমাণিত।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক প্রায় ৬১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন।
এবারও খুলনা সিটি নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যেই। এছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৭ জন ও ১০টি সংরক্ষিত আসনে ৩৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
কেসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ : খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার কর্পোরেশনের সচিব মো. ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর অনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রচারণার অংশ হিসেবে তারা গণসংযোগ, মিছিল-মিটিং, শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করছেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান ও যোগাযোগ মাধ্যমেও অংশ নিচ্ছেন। এসব প্রচারণায় কেসিসি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিচ্ছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার ও অনেক বিষয় শেয়ার করছেন। যা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী। সিটি কর্পোরেশন আচরণ বিধিমালার ২২নং ধারার ১নং উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে-সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে উক্ত রূপ ব্যক্তি শর্ত থাকে নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে হলে তিনি কেবল তার ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। এ অবস্থায় কেসিসি-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার : শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠন পরিপন্থী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এফ এম জাহিদ হাসান জাকিরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মো. মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ এক প্রেস বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিছুর রহমানের সই করা একটি চিঠিতে জাহিদ হাসান জাকিরের বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়েছে।
মুন্সি মাহবুব জানান, দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন জাহিদ হাসান জাকির। তাকে একাধিকবার বলা হলেও তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এর মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। এ কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের জাহিদ হাসান জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ না করার আহ্বান জানিয়েছেন খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিছুর রহমান।
কেএমপি’র তিন ওসি রদবদল : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র দু’টি থানা ও নগর গোয়েন্দা ডিবি’র ইন্সপেক্টর পদে রদবদল হয়েছে। কেএমপি’র মিডিয়া কর্মকর্তা সোনালী সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কেএমপির সূত্র জানায়, খুলনা সদর থানার ওসি এম এম মিজানুর রহমানকে কেএমপির গোয়েন্দা শাখা-ডিবিতে এবং দৌলতপুর থানার ওসি মো. হুমায়ূন কবিরকে খুলনা সদর থানা ও ডিবির ইন্সপেক্টর কাজী মোস্তাক আহমেদকে দৌলতপুর থানার ওসি হিসেবে বদলী করা হয়েছে। গত সোমবার কেএমপি কমিশনার মো. হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে এ রদবদল করা হয়।