শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শান্তি সমৃদ্ধি আর আন্তঃকোরিয়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু

দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজমের সামরিক সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে স্বাগত জানাতে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা মুন জায়ে। তার দিকেও হাত বাড়িয়ে ঐতিহাসিক মিলনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন উন -ছবি:এএফপি

২৭ এপ্রিল, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি: কোরীয় যুদ্ধ দুই কোরিয়ার মাঝে যে সীমান্তের ভেদরেখা টেনে দিয়েছিল, সাড়ে ছয় দশক পর সেই সামরিক সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রেখে ইতিহাস গড়লেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন।
রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, দুই দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজমের ওই সীমান্তে গত শুক্রবার ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার  প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে হাসিমুখে করমর্দন করেন কিম জং-উন। পরে দুই নেতা বৈঠকে বসেন পানমুনজমের এক বাড়িতে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিস হাউস’।
 দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর উত্তেজনার অচলায়তন পেরিয়ে উত্তরের নেতা দুই দেশের মিলিটারি লাইনে পৌঁছালে  দক্ষিণের নেতা মুন তাকে স্বাগত জানান। কিমের অভাবনীয় এক তাৎক্ষণিক আমন্ত্রণে মুনও সীমারেখা টপকে উত্তরের মাটিতে পা রাখেন। করমর্দনের পর কিমের হাত ধরে ফের তাকে সীমান্ত পার করে দক্ষিণে নিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট মুন। সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার দিয়ে অভিবাদন জানানো হয় উত্তরের নেতাকে।
১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধের অবসানের পর এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার কোনো শীর্ষ নেতার দক্ষিণে পদার্পণ।
উষ্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকের উদ্বোধনীতে কিম বলেন, শান্তির পথে এগিয়ে যেতে এই সম্মেলনে খোলামেলা আলোচনা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।
“আমরা আজ সেই বিন্দু থেকে শুরু করলাম, যেখান থেকে শান্তি, সমৃদ্ধি আর আন্তকোরিয়া সম্পর্কের এক নতুন ইতিহাস লেখা হবে।”  বিবিসির খবরে বলা হয়, ঐতিহাসিক এই বৈঠকে উত্তরের পরমাণবিক কর্মসূচি, পিয়ংইয়ং ও সিউলের সম্পর্কোন্নয়ন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াও সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই কোরিয়ার এই শীর্ষ সম্মেলনের আগে গত শনিবার এক ঘোষণায় কিম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রের কাজ সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেন।
মুন ও কিমের এই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। মে মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে ওই বৈঠকে কিম ও ট্রাম্পের মুখোমুখি সাক্ষাতের সম্ভাবনা আছে।
পিয়ংইয়ংয়ে ২০০০ ও ২০০৭ সালে দুই কোরিয়ার নেতৃবৃন্দের মধ্যে দুই দফা শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল। যদিও সেসব বৈঠক আন্তঃকোরিয়া সম্পর্ক উন্নয়নে তেমন ফল বয়ে আনতে পারেনি।
কিম জং উন উত্তরের শীর্ষ নেতা হওয়ার পর একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বাড়ানো উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কড়া অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আছে।
 চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে হওয়া শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তরের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের পর থেকে দুই কোরিয়ার সম্পর্কে উন্নতির আভাস পাওয়া যায়। এরপর সিউলের প্রতিনিধিরা পিয়ংইয়ং গেলে দুই কোরিয়ার মধ্যে শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয়। ওই প্রতিনিধিদলই পরে ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে কিমের আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন। সবাইকে চমকে দিয়ে ট্রাম্প ওই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ওই ধারাবাহিকতাতেই গত মাসের শেষদিকে সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পেও উত্তর কোরিয়ায় গোপন সফর করে কিমের সঙ্গে দেখা করেন।
ট্রাম্প-কিম সম্ভাব্য বৈঠক কোথায় হবে, সেখানে কি নিয়ে আলোচনা হবে তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শুক্রবারের কিম-মুন বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনে (সিসিটিভি) দুই কোরিয়ার এই শীর্ষ সম্মেলন লাইভ দেখানো হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা পিপলস ডেইলি উত্তর ও দক্ষিণের নেতার করমর্দনকে ঐতিহাসিক অ্যাখ্যা দিয়েছে। চোখে চশমা, মাও জে দঙ ঘরানার স্যুট পরা কিম ডিমিলিটারাইজ জোনে পৌঁছানোর পর দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় দক্ষিণ কোরিয়ার এক শিশু।
ঐতিহ্যবাহী অনার গার্ডের সদস্যরা এরপর কিম ও মুনকে লাল গালিচায় নিয়ে আসেন। আলোচনা শুরুর আগে কিম পিস হাউসের গেস্ট বুকে শুভেচ্ছা বার্তা লেখেন।
আলাদাভাবে দুপুরের খাবারের পর বিকালে কিম ও মুনের ডিমিলিটারাইজ জোনে একটি পাইন গাছের চারা রোপন করার কথা।এজন্য উত্তর কোরিয়ার পায়েকতু এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হাল্লা পাহাড় থেকে মাটি এবং উত্তরের তায়েডং ও দক্ষিণের হান নদী থেকে পানিও আনা হয়েছে।
এরপর মুন ও কিম ফের পানমুনজনে গিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। ফলপ্রসূ হলে দুই নেতা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন এবং এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন বলে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল চিফ অব স্টাফ ইম জং সিউক জানিয়েছিলেন। দক্ষিণের অংশে গিয়ে রাতের খাবার খাবেন কিম ও মুন; পরে তারা ‘স্প্রিং অব ওয়ান’ নামে একটি ভিডিও ক্লিপও উপভোগ করবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ