শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ঢাকা-কুনমিং সড়ক স্থাপনে চীনের সহযোগিতা চাইলেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা-কুনমিং সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে চীনের সহযোগিতার চেয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণে চীনের আরও সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে চীনের সফররত ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে খালেদা জিয়া এসব সহযোগিতার অনুরোধ জানান। খালেদা জিয়া সকাল ১০টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের বল রুমে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষৎ করেন। তিনি বিএনপির নয় সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলের সদস্য সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, চীনের কাছে ঢাকা-কুনমিং সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা। আমাদের সঙ্গে চীনের আকাশ ও জলপথে যোগাযোগ রয়েছে। তবে স্থলপথের যোগাযোগ নেই। এই যোগাযোগটি স্থাপিত হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চীনা ভাইস প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন। এ সময় দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, এই বৈঠকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করে একটি ত্রি-মাত্রিক সামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চীনের সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় ২০০২ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা উল্লেখ করেন দুই নেতা। মহাবুবুর রহমান আরও বলেন, ওই চুক্তির আওতায় আমাদের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী হতে পারে বলে আমরা মনে করি। সাক্ষাতের পর হলরুম থেকে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আন্তরিক পরিবেশে বৈঠকটি হয়েছে। দুই নেতা দ্বি-পাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে গোড়াপত্তন করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বৈঠকে দুই নেতাই জিয়াকে স্মরণ করেন। তিনি জানান, চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনে চীনকে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে আরও সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে। দেলোয়ার বলেন, সাক্ষাতে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট। খালেদা জিয়া এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। একটা সুবিধাজনক সময়ে এই সফর হবে। এ সাক্ষাতে বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। দু'দিনের বাংলাদেশ সফর শেষ করে চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করবেন। চীন বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে জিনপিং বাসস : সফররত চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সবধরনের সমর্থন ও সযোগিতা দেবে। গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জিনপিং বলেন, বাংলাদেশ অবকাঠোমো, কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক সাফল্য অর্জন করেছে এবং আমরা এসব খাতে আমাদের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। বঙ্গভবনে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরের জন্য জিনপিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আশবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই সফরে দু'দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অব্যাহত সমর্থনের জন্য চীনের ভাইস প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি তার চীন প্রতিপক্ষে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে চীনের জনগণের দীর্ঘ পরিচিতি বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে জিনপিং এক চীন নীতির প্রতি সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নিপিং বলেন, এই সফরের মধ্যে দিয়ে দু'দেশের সম্পর্ক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। তিনি রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে তার সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরের জন্য সে দেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি, এ্যাম্বসেডর এট লার্জ মোহাম্মাদ জিয়া উদ্দিন, বেইজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ ও রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বাংলাদেশের পক্ষে এবং অর্গানাইজেশন ডিপার্টমেন্টের ভাইস মিনিস্টার শেন ইয়েনইয়ে, ফরেন এফেয়ার্সের ভাইস মিনিস্টার ঝাং জিয়ানি, ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ও রিফর্ম কমিশনের ভাইস মিনিস্টার লিউ লিনান ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং ঝিজুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। চীনা ভাইস প্রেসিডেন্টের ঢাকা ত্যাগ বাসস : দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট জি জিন পিং গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বিকেল ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনা নেতাকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জিন পিংয়ের সফরটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের বিপরীতে ফিরতি সফর। প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের মার্চ মাসে চীন সফর করেছিলেন। গত বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের এটিই ছিল চীনের কোন জাতীয় নেতার প্রথম বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশ সফরের সময় জিন পিং প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের সাথে দেখা করেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় মিলিত হন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত এক নৈশভোজ সভায়ও মিলিত হন। জিন পিং স্পিকার আব্দুল হামিদ সিদ্দিকী প্রদত্ত এক ভোজসভায় ছাড়াও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির প্রতিনিধিদের সাথেও বৈঠকে মিলিত হন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ