বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দেশকে শোষণের ক্ষেত্র বানাতে কিছু মিডিয়া সরকারকে মদদ দিচ্ছে-খোন্দকার দেলোয়ার সাংবাদিকদের ওপর আঘাত নীরবে আর সহ্য করা হবে না -মুজাহিদ

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, দেশকে বিদেশীদের শোষণের চারণভূমিতে পরিণত করার জন্য বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে কিছু মিডিয়া মদদ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্রের আবরণে বাকশালী শাসন চলছে। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে সরকার দ্রব্য সামগ্রীর দাম কমার কথা বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা যেভাবে ট্যাক্স নির্ধারণ করে দিয়েছে তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন জিনিসের দামই কমবে না। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ফোরাম আয়োজিত ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : সাংবাদিকদের নিরাপত্তা' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, আ'লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর আঘাত নীরবে আর সহ্য করা হবে না। এই বাকশালী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আমরা শপথ নিয়েছি, স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরে যাবো। নাগরিক ফোরামের সভাপতি আব্দুল্লাহিল মাসুদের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার এমপি, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খান, উইং কমান্ডার (অব.) এম হামিদুল্লাহ খান, নিউনেশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জিয়া পরিষদ সভাপতি কবীর মুরাদ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোবিন, লেবার পার্টির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, প্রফেসর এবিএম খাইরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জাকির হোসেন প্রমুখ। গোলটেবিল আলোচনা পরিচালনা করেন নাগরিক ফোরাম সহ-সভাপতি এডভোকেট পারভেজ হোসেন। খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার, আমার দেশ ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধ সবকিছুই একই সূত্রে গাঁথা। একটি দেশের গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকা। গণতন্ত্রের আবরণে থাকা আওয়ামী স্বৈরশাসকের সময় আবারও সংবাদপত্র বন্ধ করা হচ্ছে। একটি স্বৈরশাসকের শাসনামলে যেভাবে দেশ পরিচালিত হয় এখন সেভাবেই সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। তাদের এসব কাজে কিছু মিডিয়া মদদ দিচ্ছে। সরকারও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। তিনি বলেন, দেশের কোথাও আইনের শাসন নেই। আদালত, প্রশাসন ও পুলিশকে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার দলীয় ক্যাডারদের ঢুকানোর জন্য ভিন্নমতের লোকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। টেন্ডার ছাড়াই কাজ ভাগ করে নেয়া হচ্ছে। আর এসব কাজের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে প্রতিনিয়ত তারা নিজেরাই মারামারি করছে। তিনি বলেন, যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, গত ১৭ মাসে ৬ হাজার খুন এবং ১৮ হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেখানে আইন-শৃক্মখলার কি পরিস্থিতি তা বুঝাই যায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি দেশ আমাদেরকে শোষণ ও লুণ্ঠন করার জন্যে গ্রাস করে ফেলছে। সে জন্যই দেশটি আমাদের দেশে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের কথা বলছে। আর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এটা অন্যায় কিছু নয়। তিনি বলেন, আগামী ২৭ জুনের হরতালে সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে তার জন্য সংঘটিত সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু দেশে যখন স্বৈরশাসক থাকে তখন সংবাদপত্র স্বাধীন থাকে না। মিছিল সমাবেশ করা যায় না, মানুষের বাকস্বাধীনতা থাকে না। বর্তমানে গণতন্ত্রের নামে থাকা এ সরকারের আমলে সংবাদপত্রের কোন স্বাধীনতা নেই। মানুষ তাদের কথা বলতে পারছে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, দখল ও নৈরাজ্যের কারণে জনগণ তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। নির্বাচন দিলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই বলেই শুরু থেকেই সংসদে যোগ দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এ সময় দেয়াকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক হবে না। আমরা তাদের শুভবুদ্ধির উদয়ের জন্য সময় দিয়েছি। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, '৭২-৭৫ সালের আ'লীগের বিকট চেহারা নতুন প্রজন্ম দেখেনি। এখন তারা আ'লীগের কুৎসিত চেহারা দেখতে পাচ্ছে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানের ওপর আঘাত ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটা পুরো জাতির ওপর আঘাত। এটা তার কণ্ঠরোধ করে সংবাদপত্রকে বন্দি করার কৌশল। তিনি বলেন, কোন স্বৈরশক্তি জানে না কিভাবে তাদের পতন হবে। আজ চতুর্দিক থেকে মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। তিনি বলেন, এ সরকার নিজেদের সংবাদপত্রের বন্ধু বলে দাবি করে। অথচ অর্থের অভাবে অবজারভার পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেল। এখন সরকার যদি আসলেই সংবাদপত্রের বন্ধু হন তাহলে থোক বরাদ্দ থেকে সাংবাদিকদের বেতনের ব্যবস্থা করে তা প্রমাণ দিক। যদি সংবাদপত্রে বিশ্বাসী হন তাহলে অবজারভারের থোক বরাদ্দ দিন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৯ জুন জনগণ তাদের মতামত দিয়ে দিয়েছে। তারা আর এ সরকারকে দেখতে চায় না। আন্দোলন আরও সম্প্রসারিত হবে এবং তা লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। তিনি দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। এমকে আনোয়ার বলেন, আ'লীগ কোন দিনই সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের নেতার কথার দ্বারাই। শেখ মুজিব স্বাধীনতার আগে গণতন্ত্রের জন্যে অনেক কথা বলেছেন। অথচ ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছেন। আমরা আজ আবারও উদ্বিগ্ন দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে। তিনি বলেন, আ'লীগের গণতন্ত্র হল তারা যা চায়, পছন্দ করে এবং যেভাবে বলে সেভাবে চলতে হবে। গঠনমূলক অথবা মুক্ত চিন্তা করা যাবে না। তিনি বলেন, যারা নিজেরা বিভ্রান্ত হতে পারে তারা অন্যদেরও বিভ্রান্ত করতে পারে। রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আ'লীগ যখনই ক্ষমতায় ছিল তখনই সংবাদপত্র ও গণতন্ত্রের ওপর নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় তারা আমার দেশ ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিয়েছে। আরও কয়েকটি বন্ধের তালিকা তারা করেছে। যা সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রচার করছে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে বিবস্ত্র করে যেভাবে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তা কোন সভ্য সমাজে সহ্য করা যায় না। তিনি বলেন, আগে যারা সামান্য মানবাধিকার লংঘন হলে তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন সেই সব সুশীল ও মানবাধিকার কর্মীরা আজ কোথায়? তিনি বলেন, যদি জনগণকে সচেতন করা না যায় তাহলে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ