শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচারণায়

খুলনা অফিস : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ( কেসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মেতে উঠেছেন। তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে নগরবাসী সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।

কেসিসির মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন আগামী ১৫ মে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে জয়ী করতে কেসিসির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করে নানা কৌশলে আবার কেউ প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণামূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রতিটি দপ্তরে গত ২৩ এপ্রিল নোটিশ আকারে নির্দেশনা জারী করে। ওই চিঠিতে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই সাথে নির্দেশ অমান্যকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

কেসিসির অফিস আদেশ নং-৫৬১, তাং-২৩.৪.১৮ইং। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৮-এ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেসিসির সচিব মো. ইকবাল হোসেন সাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারী করা হয়। কিন্তু তারা কোন আদেশকে তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে। এদের মধ্যে রয়েছে কর আদায় শাখার তদারকি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন তালুকদার, একই শাখার ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা আ. সাত্তার, গ্যারেজ শাখায় কর্মরত আফজাল হোসেন খোকন, পূর্ত বিভাগের সার্ভেয়ার আব্দুর রহমান, ভেটেরিনারি দপ্তরের আবু শেখ, সাধারণ শাখার পিওন বাবু, পরিচ্ছন্ন কর্মী শাহ আলমসহ ৩০/৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে কাজ করছেন। তবে নৌকা ও ধানের শিষের উভয় পক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণায় অংশ নিলেও একটি পক্ষ প্রকাশ্যে থাকলেও অপর পক্ষটি রয়েছে অনেকটা গোপনে। তবে কর্তৃপক্ষ আদেশ দিয়েই খালাস। তারা এ ব্যাপারে কোন ধরনের তদারকি করছে না বলে সাধারণ কর্মচারীরা জানান। 

কর আদায় শাখার তদারকি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অফিস টাইমে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। পরিচ্ছন কর্মী শাহ আলমকে দেখা যায়, নগরভবনের নীচে বসেই একজন মেয়র প্রার্থীর লিফলেট বিতরণ করছেন। জিজ্ঞাসা করলেই তিনি বলেন, ‘লিফলেট বিতরণের জন্য যদি চাকরি যায়, তো যাক। আমি লিফলেট বিতরণ করবোই।’

কেসিসির নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বলেন, কেসিসির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে তাদের বেতন গ্রহণ করে থাকেন তারা কোনভাবেই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬-এর ২২ ধারা মোতাবেক (১) সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময় নির্বাচন এলাকায় প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। তবে এলাকায় ভোটার হলে কেবল ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে। (২) নির্বাচন পূর্ব সময় কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা কোন ব্যক্তি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী কাজে প্রচারযন্ত্র, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারবেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, নাগরিক সেবা রেখে কোনভাবেই কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনী।

কেসিসির সচিব ইকবাল হোসেন বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেয়রের উপস্থিতিতে এক সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একই নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি বিভাগীয় ও শাখা প্রধানকে বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করে তবে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে অব্যাহতি নিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী লিটন : ৯নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাহাফুজুর রহমান লিটন দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ শেখ জাবিউল বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করায় লিটনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। এ কারণে নিজেই পদত্যাগ করেন লিটন। ফলে এখন থেকে দলের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। মাহাফুজুর রহমান লিটন ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘুড়ি মার্কা প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।

এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মোল্লা হায়দার আলী রেডিও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন, এলাকায় লিটনের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষ গণসাক্ষর দিয়েছেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তা পাঠিয়েছি।

মাহাফুজুর রহমান লিটন বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে। ওয়ার্ডবাসী আমার সম্পর্কে জানে। এ ধরনের কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ