শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গ্রীষ্মে প্রকৃতিতে দৃষ্টির প্রশান্তি বেগুনি জারুল

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : ছ’টি পাঁপড়ির মাঝখানে পুংকেশরের সঙ্গে মিশে আছে হলুদ পরাগকোষ। গ্রীস্মে প্রস্ফুটিত হয়ে শরতেই বিদায় জানায় প্রকৃতিকে। থোকা থোকা ফুল। সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি রঙা। যেন সবুজের ক্যানভাসে বেগুনি আলপনা। নাম তার জারুল। উত্তর চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে বেগুনি রঙের আভা ছড়িয়ে আপন মহিমায় প্রস্ফুটিত। রৌদ্র তপ্ত প্রকৃতিতে লোকালয়ে প্রশান্তির শুভ্রতা নিয়ে হাজির হয় একঝাঁক জারুল।
বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী। তাই লেখক কবিদের চোখে ভিন্নরূপে ধরা দেয় প্রকৃতির সমস্ত সুন্দর। জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টি এড়ায়নি জারুল। প্রকৃতির কবি লিখেছেন ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে, সবচেয়ে সুন্দর করুণ/ সেখানে সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, বট, অশ্বত্থ জারুল’।
অথবা কবি আহসান হাবীবের কবিতায়, ‘এই ছবিটি চেনা/ মনে মধ্যে যখন খুশি/ এই ছবিটি আঁকি/ এক পাশে তার জারুল গাছে/ দু’টি হলুদ পাখি’। শুধু কি সাহিত্যে, এই ফুল রমণীর খোঁপায়ও উঠে আসে সৌন্দর্য ছড়াতে।
জারুলের বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। সুইডেনের বৃক্ষপ্রেমী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে নেয়া হয়েছে ‘ল্যাজারস্ট্রমিয়া’। আর স্পেসিওজা ল্যাটিন শব্দ। এর মানে সুন্দর। সুন্দর এই ফুলে পাপড়ি খুব কোমল ও নমনীয়। জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতে এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। তবে শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।
মাঝারি আকৃতির এই বৃক্ষটি শাখা প্রশাখাময়। এর লম্বাটে পাতাগুলো পত্রদুরে বিপরীতে সাজানো থাকে। এই পাতাঝরা বৃক্ষ শীতকালে পত্রশূন্য অবস্থায় থাকে। বসন্তে নতুন গাঢ় সবুজ পাতা গজায়। গ্রীস্মে ফোটে অসম্ভব সুন্দর বেগুনি রঙের থোকা থোকা ফুল।
জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। ঘরের কড়িবরগা, লাঙল, আসবাবপত্র ইত্যাদি বহুকাজে ব্যবহার করা হয়।শুধু সৌন্দর্য ছড়ানোয় নয়, ভেষজগুণ সম্পন্ন এই জারুল। জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় উপকারী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ