বিলুপ্তির পথে দেশী ফল আতা
হেদায়েতুল ইসলাম, আদমদীঘি (বগুড়া) : বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় দেশীয় আতাফলের গাছ এক সময়ে গ্রামের গঞ্জের প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যাচ্ছিল। বিগত দু’দশকের ব্যবধানে দেশি ফল আতা এ অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, যেসব আতা ফল এখন বাজারে দেখা যাচ্ছে সেই ফল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানিকৃত। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে এবং কৃষি বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাই এর কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধিতে বাড়িঘর নির্মাণে নির্বিচারে ফলের গাছ কাটা, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদিকে ঐতিহ্যবাহী দেশি ফল হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলীম উদ্দীন।
এছাড়া বিদেশি ফলের আমদানিও দেশি ফলের উৎপাদন হ্রাস ও বিলুপ্তির জন্য অনেকখানি দায়ি বলে অভিমত তাদের। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে ফলের বাজারের ৮০ শতাংশই দখলে রেখেছে আমদানি করা ফল। আদমদীঘি বাজারের ফল ব্যবসায়ী সুদিন গ্রামের মিঠন জানান, তার দোকানে যে আতা ফল গুলো বিক্রি করছে সেগুলো সে পাইকারি আড়ৎ থেকে ক্রয় করে নিয়ে এসে বিক্রয় করছে। প্রতি কেজি আতা ফল সে ১২০ টাকায় বিক্রি করছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গ্রীষ্মম-লীয় ফল উৎপাদনে বিশেষভাবে সহায়ক। রোপণ না করা সত্ত্বেও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ফলের সংখ্যাও ছিলো উল্লেখযোগ্য। বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ-এই চার মাসেই পাওয়া যায় শতকরা ৫৪ শতাংশ দেশি ফল। আর বছরের আট মাসে পাওয়া যায় ৪৬ শতাংশ।
ফল বিজ্ঞানীদের মতে, কৃষি প্রধান ও উর্বর মাটির এই দেশের গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফলগাছের সংখ্যা ছিলো প্রায় শতাধিক। তবে নানা কারণে গত দু’দশকের ব্যবধানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধশতে। তবে এ বিষয়ে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যের সঙ্গে কিছুটা তফাৎ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মত।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বর্তমানে প্রধান ও অপ্রধান মিলিয়ে দেশি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি। এগুলোর মধ্যে-আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, গোলাপজাম, নারিকেল, কুল, তৈকর, বীচিকলা, বিলিম্বি, বেতফল, লেবু, আমলকি, সফেদা, আতা, শরিফা, আনাজি কলা, জালিম, জাম্বুরা, সুপারি, বাঙ্গি, তরমুজ, বাংগী, বেল, কামরাঙ্গা, জলপাই, চালতা, ডেউয়া, পেঁপে ইত্যাদি।