শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নিষিদ্ধ ঘোষিত বেন্দি কারেন্ট বুনো ও নেট জাল দিয়ে চলছে মাছের পোনা শিকার

খুলনা অফিস : নিষিদ্ধ ঘোষিত বেন্দি কারেন্ট বুনো ও নেট জাল দিয়ে চলছে মাছের পোনা শিকার। ফলে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবন উপকূলের মৎস্য সম্পদ।
অভিযোগ উঠেছে, নৌ-পুলিশের টোকেন নিয়েই সুন্দরবনের ভেতরে নো-ফিস ল্যান্ডসহ মংলার পশুর নদীতে জেলেরা এসব জাল দিয়ে অবাধে চিংড়ি পোনা আহরণ করছে। মংলার জয়মনি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ অবৈধভাবে মাছের পোনা শিকার করা প্রতিটি নৌকার কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে টোকেন বাবদ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা।
পশুর নদী উপকূলের জয়মনি গ্রামের বাসিন্দা আলম, মো. শুকুর ও জহুর গাজী জানান, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা টোকেনের বিনিময়ে অমাবস্যা ও পূর্নিমার সময় নৌকা প্রতি ৩০০ টাকা করে নেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জয়মনি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবুল হোসেন শরিফ বলেন, ‘দূর থেকে কাঁশবন অনেক সাদা দেখায়। আপনারা আসেন, দেখেন কোনটা সত্য।’  তিনি বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। বরং নিষিদ্ধ নেট জাল দিয়ে অবাধে চিংড়ি পোনা আহরণকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’
মংলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গত সোমবার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে চিংড়ি পোনা আহরণকারীদের ধরার নির্দেশ দিয়েছি।’ এই নির্দেশের কথা স্বীকার করেছেন নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবুল হোসেন শরিফ।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহিন কবির  বলেন, ‘উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি গ্রামের কাজল, মুক্তা, রেজাউল শেখ, অরুণ, আলতাফ, মিজান, ইসলাম, হানিফ, নাসির গাজী ও মনিসহ শতাধিক ব্যবসায়ী জেলেদের দাদন (অগ্রিম টাকা) দেয়ার মাধ্যমে অবৈধ জাল দিয়ে চিংড়ির রেনু পোনা ধরাচ্ছেন। তারা কোনও আইন মানেন না, নিয়মও মানেন না। তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।’
পশুর নদী উপকূলের বাসিন্দা আলম, মো. শুকুর ও জহুর গাজী জানান, জয়মনি গ্রামের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেদের এনে মংলার পশুর নদীসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চিংড়ি পোনা ধরতে নামিয়ে দিয়েছেন।
মংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার ফেরদাউস আনসারী বলেন, ‘অবৈধ জাল দিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে রেনু পোনা এবং মাছ ধরা সারাবছরই নিষিদ্ধ। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চিংড়ির রেনু ধরার জন্য অবৈধ জাল দিয়ে নদীতে নামিয়ে দিয়েছেন। তাদের সতর্ক করতে ইতোমধ্যে মাইকিং ও জয়মনির বটতলায় জেলে সমাবেশ করা হয়েছে। এছাড়া, নিয়মিত অভিযানসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আইনে বলা আছে-উপকূলীয় এলাকার সব নদ-নদী থেকে সব ধরনের চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই পোনা ধরা হলে প্রথমবার পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা একবছরের জেল, পরবর্তী বছরে আবারও যদি কেউ একই অপরাধ করে তাহলে দুই বছরের জেল দেয়া হবে।’
কোস্টগার্ড পশ্চিম (মংলা) অপারেশন কর্মকর্তা লে. আব্দুল্লা আল মাহমুদ বলেন, ‘মৎস্য আইনে নদীতে বেন্দি, কারেন্ট, বুনোসহ ৭/৮ প্রকার নেট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। কোস্টগার্ড সদস্যরা প্রায় সারাবছরই বিশেষ করে মওসুমে নেট জাল দিয়ে পোনা ধরা বন্ধে বিশেষ অভিযান চালান। এসব অভিযানে উদ্ধার হওয়া জাল পরবর্তীতে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এরপরও জেলেরা নদীতে নেট জাল দিয়ে পোনা শিকার করে থাকেন।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ