বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের পবিত্র মাস

বছর ঘুরে আবারও এসেছে পবিত্র মাস রমযান। শুধু পবিত্র নয়, আল্লাহ তা’লার সান্নিধ্য ও রহমত এবং গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্যও শ্রেষ্ঠ মাস এই রমযান। সুরা আল বাক্বারাহর ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম (অর্থাৎ রোযা) ফরজ করা হয়েছে যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো’। রোযা সম্পর্কে নিশ্চয়ই বিস্তারিত বর্ণনার দরকার পড়ে না। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকাটা অবশ্যই সহজ কাজ নয়। কিন্তু কোনো মানুষ দেখবে না জেনেও মুসলমানরা লুকিয়ে কিছুই পানাহার করেন না। কারণ, তারা জানেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবই দেখছেন। আর রোযা যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সেহেতু কষ্ট যতো বেশিই হোক, মুসলমানরা রোযা ভাঙেন না। এর মধ্য দিয়ে মুসলমানরা একদিকে অনাহারক্লিষ্ট গরীব মানুষের জীবন যন্ত্রণা বোধ করতে শেখেন, অন্যদিকে পরীক্ষা দেন ধৈর্যের। রোযাদাররা অন্যদের প্রতি সহমর্মিতার শিক্ষাও লাভ করেন। রোযা মানুষকে চরম ধৈর্য শিক্ষা দেয়। 

রমযানে আল্লাহ অবশ্য তাঁর এই বান্দাহদের জন্য নানামুখী সীমাহীন কল্যাণ রেখেছেন। এ মাসে পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি চিন্তা ও কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রেও নিজেদের পরিশীলিত রাখেন মুসলমানরা। তারা কোনো অন্যায় কাজে অংশ নেন না, কারো সঙ্গে বিবাদে জড়ান না, অন্যের ক্ষতির চিন্তা তো এড়িয়ে চলেনই। সব মিলিয়েই রমযানের দিনগুলোতে মুসলমানরা আত্মশুদ্ধির এবং আল্লাহতা’লার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন। আল্লাহতা’লাও দান করেন প্রচুর পরিমাণে। তিনি গুনাহগার বান্দাহদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখান এবং তাদের মাফ করে দেন। ভালো কাজ না করার কারণে যারা দরিদ্র ও হীন অবস্থায় থাকে তারাও এ মাসের মাহাত্ম্যে এবং তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হয়ে উঠতে পারে। 

রমযান মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার দ্বিতীয় কারণ পবিত্র লাইলাতুল কদর। ২৬ রমযানের দিন শেষে, অর্থাৎ ২৭ তারিখে, অনেকের মতে রমযান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় তারিখের রাতে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল শুরু হয়েছিল। আল-কোরআন এমন একটি মহাগ্রন্থ, যার মধ্যে আল্লাহর নাজিল করা পূর্ববর্তী সব গ্রন্থের সারবস্তু এবং ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌল নির্দেশনা একত্রিত করা হয়েছে। বস্তুত আকাশ ও মাটিতে তথা সমগ্র সৃষ্টি জগতে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই যার উল্লেখ আল-কোরআনে না আছে। পবিত্র এ গ্রন্থটিকে আল্লাহ মানুষের জন্য জীবন বিধান হিসেবে পাঠিয়েছেন। মক্কার নিকটবর্তী হেরা পর্বতের গুহায় শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। স্বয়ং আল্লাহতা’লা বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ সুরা কদরে আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।’ 

এই রাতে বেশি বেশি ইবাদতের তাগিদ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি নিজেও কদরের সারারাত আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। শুধু এই একটি রাত্রি নয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমযানের শেষ ১০দিনই ইতিকাফ করতেন, যার অর্থ পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে কেবলই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের প্রশংসায় মগ্ন থাকা এবং আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমতের জন্য মোনাজাত করা। গুনাহর জন্য মাফ চাওয়া। এজন্যই কদরের রাতকে যারা পাবেন তারা খুবই সৌভাগ্যবান এবং তাদের উচিত আল্লাহর কাছে সর্বান্তকরণে নিজেদের সমর্পণ করা, তাঁর পানাহ চাওয়া। শিক্ষা চাকরি ব্যবসা এবং শারীরিক সুস্থতা ও সহজ-সরল জীবন যাপনের সাধ্য দেয়ার জন্য আল্লাহতা’লার কাছে বিশেষভাবে মোনাজাত করা। কেবলই নিজের জন্য চাওয়ার পরিবর্তে দেশ ও জনগণের জন্যও আল্লাহর রহমত চেয়ে মোনাজাত করা উচিত। 

রমযানের পবিত্র মাসে মুসলমানদের উচিত আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমতের জন্য মোনাজাতে নিমগ্ন থাকা। গুনাহ থেকেও মাফ ও মুক্তি চাইতে হবে। কারণ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতেপূর্ণ জীবনে মানুষ প্রতিদিনই অনেক গুনাহ বা অপরাধ করে। অন্যদিকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহগার বান্দাদের মাফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যভিচারী, মুশরিক ও নাস্তিক-মুরতাদ ছাড়া বান্দাহদের সব নেক বা ভালো আশা-আকাক্সক্ষা রমযানের মাসে আল্লাহ পূরণ করেন। এমন একটি সুযোগকে অবশ্যই হাতছাড়া করা যায় না। কারণ, মনে ইবাদত ও ভালো কাজের স্পৃহা তৈরি হলে কারো পক্ষে খারাপ কাজ বা গুনাহ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিত নিজেদের পাশাপাশি জনগণের কল্যাণ এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে মোনাজাত করা। 

আমরা মনে করি, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রমযান পালনের পাশাপাশি সামগ্রিক বাস্তবতার আলোকেও নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। কারণ, সরকারের ব্যর্থতা এবং চাঁদাবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীরা রমযান মাসে মুসলমানদের সর্বাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পণ্যের দামও শুধু বেড়েই চলে। নাভিশ্বাস ওঠে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে। এজন্যই মুসলমানদের উচিত সরকারের ব্যর্থতা ও দ্রুত বেড়ে চলা পণ্যমূল্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। ব্যবসায়ীদের উচিত অন্তত এই একটি মাসে রোযাদারসহ জনগণকে কষ্ট না দেয়া। আর সরকারের উচিত প্রতিটি বিষয়ে সততার সঙ্গে তৎপর থাকা, যাতে রোযাদার মুসলমানদের কষ্ট কম হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ