খুলনা নির্বাচন : প্রতারণার মাকাল ফল
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : রকিব কমিশন নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে একটু সময় লেগেছিল বৈকি! কারণ, কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ সাবেক আমলা ছিলেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তা তিনি অতি সন্তর্পণে ছাইচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। রাষ্ট্রের আমলা হিসেবে তার সাফল্য-ব্যর্থতার বিষয়টি কখনো আলোচনায় আসেনি। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্তির পর তার কর্মযজ্ঞ পর্যালোচনা করে তার সততা, যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি নির্ধারণ করতে হয়েছে। তিনি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালনে সফল হননি একথা বলতে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কারণ, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালনে অসফল হওয়া, আর ইচ্ছাকৃতভাবে দায় এড়িয়ে দলবাজি করা মোটেই একই মানদন্ডে বিবেচনা করা যায় না। তাই সাবেক আমলা রকিব সাহেবের সাফল্য-ব্যর্থতার বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে।
কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন রকিব কমিশন যে দায়িত্ব পালনে সফল হতে চান নি এ বিষয়ে দ্বিমত করার লোক খুবই কম। শুধু তিনি যাদেরকে অনৈতিকভাবে বিভিন্ন নির্বাচনে আনুকূল্য তাদের কথা ভিন্ন। জনশ্রুতি আছে যে, রকিব কমিশন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত থেকে সংবিধান লঙ্ঘন ও জনগণের সাথে বিশ^াসঘাতকতা করেছে। মূলত এই কমিশন একটা সংকীর্ণ বৃত্তের মধ্যেই তাদের কর্মযজ্ঞ সীমাবদ্ধ রেখেছে। সে বৃত্তের সাথে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও আগ্রহের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এসব অভিযোগ ঠিক কি না তা নিয়ে পান্ডিত্য জাহির না করে আপাত তা ইতিহাসের ওপর ছেড়ে দেয়া শ্রেয়তর মনে করছি। ইতিহাস তার যোগ্য স্থান নির্ধারণ করবে।
রকিব কমিশনের বিদায়ের পর হুদা কমিশন এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ঢাক ঢাক গুর গুর খেলাটা কম হয়নি। বলতে গেলে ‘খাজনার চেয়ে বাজনা’ হয়েছে ঢের বেশি। বিষয়টি কিছুটা শোনাভানের পুঁথি ‘ লক্ষ লক্ষ সৈন্য মারে কাতারে কাতার, সুমার করিয়া দেখি হয় না হাজার’ এর মতোই শোনায়। একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। সার্চ কমিটির কর্মযজ্ঞ দেখে মনে হয়েছিল অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবারে অপেক্ষাকৃত ভাল কিছু হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে আমরা রীতিমত অতীত বৃত্তেই আটকে থেকেছি। শেষ পর্যন্ত ‘যেই লাউ সেই কদু’ হয়েছে। অনেক আয়োজন ও কামান দাগার পর সার্চ কমিটি কে এম নূরুল হুদার মত ১৯৯৬ সালের আমলা বিদ্রোহ ও জনতার মঞ্চের নেতা খুঁজে পেয়েছে। যা সচেতন মানুষ পর্বতের মুশিক প্রসব হিসেবেই মনে করেছে। কারণ, সার্চ কমিটি আমলা বিদ্রোহের নেতা ছাড়া দেশে আর কোন নিরপেক্ষ লোক খুঁজে পায়নি। অবশ্য এর আগে আরেক বিদ্রোহী আমলা শফিউর রহমানও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেলেন। তাই বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত হওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেনি বরং এসব শুধু আমাদের দুর্ভাগ্য বলেই শান্তনা নিতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত রকিব কমিশন ও হুদা কমিশনের বিষয়টি একই মানদন্ডে বিচার করার সুযোগ খুব একটা থাকছে না। কারণ, রকিব কমিশন বিতির্কত হয়েছিল তার কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে। আর হুদা কমিশন বিতর্ক নিয়েই দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে। তাই গ্রাম্য একটি চটুল কথা ‘ যায় দিন ভাল, আর আসে দিন খারাপ’ একথায় বারবার স্মরণ হচ্ছে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন কমিশনের কিছু কর্মতৎপরতা দেশের মানুষকে বেশি আশান্বিত করেছিল। বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কিছু মন্তব্য ও কাজ বিশেষ করে সরকার বিরোধী শিবিরে আশার সঞ্চার করেছিল। সরকারি দলকে এসব নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি পড়তে খুব একটা সময় লাগেনি।
এ সবকে এখন দেশের মানুষ ‘প্রীতি প্রদশর্নী’ বলেই মনে করছে। ‘Morning shows the day’ কথাটা এখানেও পুরোপুরি সার্থক হয়ে উঠেছে। কারণ, তিনি সরকারি চাকরিতে থাকার সময় দেশের আইন, সংবিধানের প্রতি যেমন একনিষ্ঠ থাকতে পারেননি, ঠিক তেমনিভাবে সাংবিধানিক দায়িত্বে এসেও সে পূর্বের ধারাবাহিকতাই ধরে রেখেছেন। যা দেশের সকল শ্রেণির মানুষকে বেশ আশাহতই করেছে । কাজী রকিব উদ্দীন তার বিদায়ী বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘নতুন কমিশন আমাদের মতই সফল হবে’। তখন কথাটা শুনতে কিছুটা বিরক্তিকর মনে হলেও এ বিষয়ে তিনি যে কতখানি দুরদর্শী তার প্রমাণ এখন পাওয়া যাচ্ছে। বিদায়ী কমিশনের কাছ থেকে জাতির এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলেই মনে করা হচ্ছে।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন হুদা কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর খুব বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। কিছু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে উপনির্বাচন হয়েছে মাত্র। ডিএনসিসি ও গাজীপুর সিটির নির্বাচন দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত হলেও নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। দেরিতে কিছু তৎপরতা শুরু করলেও সেসবও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকেনি। মনে হয়েছে তারা এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। রসিক ও খুসিক নির্বাচন হয়েছে এই কমিশনের অধীনে। কিন্তু এই অতি অল্প সময়ে কমিশনের যে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই কমিশন দিয়ে আমরা কতখানি এগিয়ে যেতে পারবো তা নিয়ে এখনই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে এবং কমিশনের ব্যর্থতার জন্য ইতোমধ্যেই তাদের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচনে জালভোট, ভোট ডাকাতি ও চর দখলের মত দখলের যে মহড়া আমলা লক্ষ্য করেছি তাতে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অপমৃত্যু ঘটেছে তা বলার সুযোগ থাকছে। দেশের সচেতন মানুষ মনে করছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই আত্মাহুতি দিয়েছে। আর আলোচনায় এসেছে রবি ঠাকুরের কাদম্বিনীর কাহিনী। কাদম্বিনী আত্মাহুতি দেয়ার পরও যেমন আলোচনার মাধ্যমে জীবিত থেকেছে, ঠিক হুদা কমিশনের ক্ষেত্রেও সে অবস্থাই ঘটেছে। মূলত নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য দৃশ্যত কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করেনি বরং ইভিএম-এর মত বেহুদা কাজে কমিশনকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
রকিস নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থী হেরে গেলেও সরকারের শরীক দল জিতেছে। প্রথম দিকে এ নিয়ে বিরোধী দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপি’র ‘হাতের পাঁচ’ হিসেবে প্রচার করা হলেও এখন শোনা যাচ্ছে ভিন্ন কথা। বলা হচ্ছে এ বিষয়ে সরকারি দলের সাথে শরীকদলের সখ্যতা হয়েছে। তাই নির্বাচন ছিল বেশ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সে নির্বাচনও ভোট চুরির অভিযোগমুক্ত ছিল না বরং ক্ষেত্র বিশেষে পুকুর চুরির অভিযোগও করা হয়েছে। কিন্তু এসব নির্বাচনকে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হিসেবে নির্বাচন কমিশন ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ এমন ভূমিকাই পালন করেছে। ফলে ক্ষমতাসীনরাই নির্বাচনে আনুকূল্য পেয়েছে বলে অভিযোগ আছে। আর এমন অভিযোগ করার যৌক্তিকতার বিষয়টিও পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি খুসিক নির্বাচন হয়ে গেল। নৌকা প্রতীকে সরকারদলীয় প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বিপুল ভোটে খুসিক মেয়র নির্বাচিত হলেন। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো সেই পুরনো বৃত্তেই। অতীতের নির্বাচনগুলোর মত দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হলেও অভিনব কায়দায় ভোট ডাকাতির মহড়া শুধু দেশবাসী নয় বরং বিশ^বাসীও প্রত্যক্ষ করেছে। এ নিয়ে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট নির্বাচনী অনিয়মের তদন্ত ও দায়িদের শাস্তি চাইলেন। কোন বিদেশী কূটনীতিক কর্তৃক নির্বাচন নিয়ে এমন উষ্মা প্রকাশের ঘটনা অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি। এতে বহির্বিশে^ দেশের সম্মান বাড়লো না কমলো এ নিয়ে কথা না বললেও এতে যে নির্বাচন কমিশনের মন্ডুপাত হয়েছে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই বোধহয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন নি বরং বলেছেন কমিশন সচিব। তিনি নির্বাচনকে খুবই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বলে বয়ান দিলেও তা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি বরং নেপথ্যে থেকে সবাই হেসেছেন। মূলত নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে মাত্র জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছে বলেও মহল বিশেষে অভিযোগ করা হচ্ছে।
খুসিক নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় নি তাদের প্রায় দেশের সকল গণমাধ্যমই একবাক্যে স্বীকার করেছে। বিষয়টি নিয়ে যে ঐকমত্যের সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন কমিশন তার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করেছে। খুসিক নির্বাচন নিয়ে একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল এই শহরের মানুষের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা না বাধিয়ে কেবল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং ্রতিপক্ষকে চেপে ধরে ভোট নেওয়ার এমন দৃশ্য এই শহরের মানুষ আগে দেখেনি। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সব ব্যবস্থাই ছিল-পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ম্যাজিস্ট্রেট ও টহল’।
‘এর মধ্যেই প্রতিপক্ষের এজেন্ট বের করে দেওয়া, দল বেঁধে বুথে ঢুকে ব্যালটে সিল মারা, বাবার সঙ্গে শিশুর ভোট দেওয়া, দল বেঁধে জাল ভোট দেওয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারতে বাধ্য করা, দুপুরের আগেই ব্যালট শেষ হওয়াসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। কোথাও কোথাও ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীদের সহযোগিতার ভূমিকায়। এই নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতাও বেশ স্পষ্ট হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলেও তারা সেভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন প্রার্থী ভোটের আগে ও ভোটের দিন নানা অভিযোগ করলেও কমিশন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি’।
‘মঙ্গলবার সকালে ভোট শুরুর পরপর বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার খবর আসতে থাকলেও কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ভালো। বিক্ষিপ্ত কিছু কেন্দ্র ছাড়া পরিবেশও ভালো ছিল। মূলত বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ভোটের পরিবেশ পাল্টাতে থাকে। বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারি দলের কর্মীরা ঢুকে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। যেসব কেন্দ্রে এসব হয়েছে, তা আধঘণ্টার বেশি স্থায়ী ছিল না। এরপর তারা সটকে পড়ে, সুযোগ বুঝে আবার ফিরে আসে। তারা ফিরে যাওয়ার পরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় হয় শৃঙ্খলা রক্ষার নামে। ততক্ষণে সাধারণ ভোটার আতঙ্কিত হয়ে কেন্দ্র ছাড়েন। আর, এসব চলে বেলা সাড়ে ১১ থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় সবচেয়ে বেশি। তবে শেষ সময় পর্যন্ত এ ধরনের খবর আসতে থাকে। ফলে দুপুরের পর ওই সব কেন্দ্রে তেমন ভোটার দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যালটেই সিল মারে। সিল মারা ব্যালট বিভিন্ন কেন্দ্রে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। যা পরে সংবাদকর্মীরা ক্যামেরায় ধারণ করেন’।
খুসিক নির্বাচন নিয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও প্রতিবেদনও প্রায় অভিন্ন। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে নির্বাচনে অনিয়ম ও নির্বাচনের কমিশনের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলোও খুসিক নির্বাচনকে সাজানো, নির্বাচন কমিশনের আচরণ দায়দায়িত্বহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছে। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের পক্ষে অভিযোগ অভিযোগ করা হয়েছে যে, নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট ডাকাতির বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অবহিত করা হলে তিনি তাদেরকে দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা যদি নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়িত্বহীনতা হয় তাহলে দায়িত্বশীলতা সংজ্ঞাটা নতুন করে করতে হবে। আর এই মহতি কাজের দায়িত্বটাও নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। মূলত নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো নির্বাচনে রেফারীর ভূমিকা পালন করা। কিন্তু রেফারির আচরণ যদি এমন পক্ষপাত দুষ্ট হয় তাহলে আস্থার কোন জায়গা আর অবশিষ্ট থাকে না। তাই এমন ‘আমড়া কাঠের ঢেঁকি’ আর ‘তাল পাতার সেপাই’ মার্কা নির্বাচন কমিশন কেউ প্রত্যাশাও করে না।
সরকার ও নির্বাচন কমিশন খুসিক নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বললেও বাস্তবতা অস্বীকার করা যায়নি। নির্বাচন চলাকালে অনিয়মের অভিযোগে কিছু কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয় এবং নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীকে আনুকুল্য দেয়ার অভিযোগে একজন পরিদর্শক পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাকে খুলনা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এসবের কোন প্রভাব পড়েনি। এমনকি সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, অতীতে এমন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আর কখনো হয় নি। নির্বাচন কমিশন সরকারি দলের সাথেই কোরাস গাইছে।
নির্বাচন কমিশনের এমন গদাইলস্করি ভাবটা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’ ছোট গল্পের নায়িকা কাদম্বিনীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কাদম্বিনী আত্মাহুতির পথ বেছে নিলেও আলোচনা-সমালোচনা তার পিছু ছাড়েনি। মরেও তিনি আলোচনায় ছিলেন। ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’। খুসিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই ঘটেছে। কিন্তু তারা হয়তো উপলব্ধিই করতে পারছে না। এজন্য তো সমঝদার হওয়া চাই।
-সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা, smmjoy@gmai.com