বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অবহেলার কারণে চট্টগ্রামের প্রাচীন প্রত্ননিদর্শনগুলো ধ্বংস হতে চলেছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিশ্ব জাদুঘর দিবস ২০১৮ উপলক্ষে ১৭ মে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র ও ভ্রাম্যমান প্রত্নতত্ত্ব আলোকচিত্র মিউজিয়াম এর যৌথ উদ্যোগে চেরাগী পাহাড় মোমিন রোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সকাল ১১টায় “চট্টগ্রামের প্রাচীন প্রত্নসম্পদ রক্ষায় আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ও ভ্রাম্যমাণ প্রত্নতত্ত্ব আলোচিত্র মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সোহেল মো. ফখরুদ-দীনের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, প্রাক্তন সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রহিম, কবি ও ইতিহাসবিদ এ বি এম ফয়েজ উল্লাহ, শিক্ষাবিদ ও প্রবীণ প্রধান শিক্ষক বাবুল কান্তি দাশ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দিদারুল আলম, প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি মাস্টার হাফেজ আহমদ, প্রাবন্ধিক এম ওসমান গণি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার নুর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নয়ন বড়ুয়া, ডা. বিমল কান্তি নাথ, সাইফুল আলম, মোহাম্মদ মোবারক হোসেন, কবি শাহনুর আলম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম খুবই প্রাচীন একটি জনপদ। বয়সের সীমানা এখন আড়াই হাজার বছরেরও অধিক। এ প্রাচীন চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনো অনেক কিছু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে চট্টগ্রামের অনেক প্রাচীন প্রত্নসম্পদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অবহেলার কারণে ধ্বংস হতে চলেছে। এখনই দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশি¬ষ্ট বিভাগকে আহবান জানান। বক্তারা আরো বলেছেন, পৃথিবীর আদি ইতিহাসের হিন্দু ধর্মীয় সভ্যতার প্রাচীনতম নির্দশন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, মৈনাক পাহাড়, সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়, প্রথম হিন্দু ধর্মীয় দুর্গাপূজার অতি পবিত্র স্থান মেধস মুনির আশ্রম, বৌদ্ধ ধর্মীয় সভ্যতার নিদর্শন গৌতুম বুদ্ধের স্মৃতি জড়িয়ে ঐতিহাসিক কক্সবাজারের রামকোট বিহার, মুসলিম ধর্মীয় সভ্যতার স্মারক হযরত বদর পীরের সমাধি ও সুলতান বায়েজিদ বোস্তামীর সমাধি ও মসজিদ, একই সাথে প্রাচীন কিরাত (চট্টগ্রামের আদি নাম) আমলের চন্দনাইশস্থ বরমার জৈন রাজার রাজবাড়ী, বাংলার বিখ্যাত লোকসাহিত্যের অমর প্রেমকাহিনী মলকা বানু-মনু মিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাঁশখালীর মলকা বানু মসজিদ, আনোয়ারার মনু মিয়া মসজিদ, চট্টগ্রাম নগরীর হামিদ উল্লাহ খাঁ মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, কদম মোবারক মসজিদ, সোলতানী আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক হাটহাজারীর ফকিরা মসজিদ, সীতাকুন্ডের হাম্মাদিয়া মসজিদ, মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারা মসজিদ, উপমহাদেশের হিন্দুধর্মীয় সবচেয়ে প্রাচীনতম হাজার বছরের অধিক পুরানো আনোয়ারার নরসিংহ মন্দির, বাঁশখালীর সুপ্রাচীন হিন্দু মন্দিরসহ অনেক প্রাচীন প্রত্নসম্পদসহ চট্টগ্রাম বিভাগের আরো অনেক প্রাচীন নিদর্শনসমূহ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানান। বক্তারা আরো বলেন, প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং নিদর্শনগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন, পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং যথাযথ সংরক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ আহবান জানান। এছাড়া বাঙালি জাতির হাজার বছরের এসব প্রত্নসম্পদের জন্য আমাদের সকলকে এ বিষয়ে ইতিহাস চর্চা, লেখালেখি, গবেষণা এবং আলোচনা করা একান্ত দায়িত্ব যাতে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক কৃষ্টি সভ্যতার বিভিন্ন অজানা তথ্য নতুনভাবে উপস্থাপন এবং এসব বিষয়সমূহের সঠিক জ্ঞান উপলব্ধি করতে পারি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে জাতির পুরাতন নিদর্শনসমূহের সন্ধান ও সংরক্ষণে সামর্থ্য মতো ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সভায় বক্তারা আমাদের সভ্যতার এই প্রাচীন নিদর্শনগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে সিলেবাস আকারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। সভা শেষে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইতিহাস বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য লিফলেট ও চট্টগ্রাম ইতিহাস বিষয়ক পুস্তক বিতরণ করা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ